ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মায়াবতীর দলিত-মুসলিম সমীকরণই গলার কাঁটা মোদির

রাইসুল ইসলাম, এডিশনাল আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৬
মায়াবতীর দলিত-মুসলিম সমীকরণই গলার কাঁটা মোদির

ঢাকা: উত্তর প্রদেশ, ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য। প্রায় ২২ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত হিন্দি বলয়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ‍রাজ্যটি যেন ভারতের মধ্যে আরেকটি ভারত।

সামনে এই রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন। দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে আসছে জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারিতে হবে ভোট। দিল্লির পর লক্ষ্ণৌতেও নিজেদের গেরুয়া ঝাণ্ডা ওড়াতে চাইছে বিজেপি।

২০১২ সালের নির্বাচনে মাত্র ৪১টি আসন পেলেও মোদি ম্যাজিকে ভর করে উত্তর প্রদেশেও বিজয় ছিনিয়ে আনতে চাইছে হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দলটি। ওই নির্বাচনে ১৫ শতাংশ ভোট পেয়ে রাজ্যের তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয় তারা। তবে এরপরই থেমে থাকেনি বিজেপি। কয়েক বছরে সেখানে নিজেদের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করেছে দলটি। বেশ কিছু জনমত জরিপে তাদের জনসমর্থন বৃদ্ধি পাওয়ারও ইঙ্গিত মিলেছে।

এমনকি তাদের জনপ্রিয়তা এখন রাজ্যের ক্ষমতাসীন অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির থেকেও বেশি বলে জানাচ্ছে কোনো কোনো জরিপ সংস্থা।

সর্বশেষ গত ৩ জুলাই এর একটি জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে বিজেপির এই মুহূর্তের জনসমর্থন প্রায় ২৮ শতাংশ। পক্ষান্তরে ক্ষমতাসীন সমাজবাদী পার্টির সমর্থন ২২ শতাংশ।

মূলত সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কাঁধে ভর দিয়েই বিজেপির এই উত্থান। বর্তমানে রাজ্যের উচ্চ বর্ণের হিন্দু ভোটাররা (২০ শতাংশ) প্রায় একচেটিয়াভাবে বিজেপির সমর্থক।

তবে এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জটিল সমীকরণই শেষ পর্যন্ত উত্তর প্রদেশে বিজেপিকে ডোবাবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

বিশেষ করে যখন মুসলমান ও দলিতদের ওপর তথাকথিত গো-রক্ষকদের নির্যাতনের ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে ভারতে।

গো-রক্ষকদের এসব নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডের কারণেই বিজেপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে উত্তর প্রদেশের দলিত ও মুসলিম ভোটাররা ( ৪০ শতাংশ)।

পক্ষান্তরে ‘দলিত ও মুসলিম’, বিজেপির এই ‘মাইনাস পয়েন্ট‘ই ‘প্লাস পয়েন্ট’ মায়াবতীর। সারা জীবন দলিতদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আদায়ের আন্দোলন করায় রাজ্যের নিম্ন বর্ণের অচ্ছুত হিন্দুদের (রাজ্যের মোট ভোটের ২০ শতাংশ) কাছে অনেকটা দেবীর মর্যাদা পান মায়াবতী।

অপরদিকে ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনৈতিক নীতির কারণে মুসলিম ভোটারদের (মোট ভোটের ১৯ শতাংশ) বিশাল অংশেরও সমর্থন রয়েছে দলটির দিকে।

এই ২১ শতাংশ দলিত ভোটের সঙ্গে ১৯ শতাংশ মুসলিম ভোটের সমীকরণ মিলিয়ে রাজ্যের জাতপাতের রাজনীতিতে তাই এ মুহূর্তে অনেকটাই এগিয়ে মায়াবতী।

জনমত জরিপেও রাজ্যে সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে মায়াবতীর বিএসপি। এ মুহূর্তে রাজ্যের ৩০ শতাংশ ভোটারের সমর্থন বিএসপির দিকে। পক্ষান্তরে বিজেপির সমর্থন ২৮ শতাংশ এবং অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির প্রতি সমর্থন ২০ শতাংশ।

বিষয়টি বুঝতে পেরে তাই মায়াবতীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে বিজেপি।

তবে নিজের দলিত ও মুসলিম ভোটব্যাংক অটুট রাখতে তাদের সঙ্গে বোঝাপড়ায় উৎসাহী নন মায়াবতী।

বরং তথাকথিত গো-রক্ষকদের হাতে দলিত-মুসলিম নিগ্রহের ঘটনায় আতঙ্কিত দুই সম্প্রদায়কে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার ব্যাপারে আরও সক্রিয় হয়েছেন বিএসপি নেত্রী।

এছাড়া মুসলিম ভোট কাছে টানার লক্ষ্যে অন্যান্য বারের তুলনায় বিজেপি এ বার মায়াবতীর কাছে অনেক বেশিই অচ্ছুত।

সরকার গড়তে ভবিষ্যতে সমর্থন আদায় করতে কংগ্রেসের সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন মায়াবতী।

সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডে বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেস সরকারকে মায়াবতীর দলের দুই বিধায়কের সমর্থন প্রদান তারই বহিঃপ্রকাশ।

সাম্প্রতিক বেসরকারি জনমত জরিপগুলোতেও মায়াবতীর এগিয়ে থাকার আভাস মিলেছে। তার দল বিএসপি ১৮৫টি আসনে জয়ী হবে বলে গত ১৬ মে এক জনমত জরিপে জানায় এবিপি নিউজ। পক্ষান্তরে বিজেপি এগিয়ে ১২০টি আসনে।

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন মায়াবতী। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মায়াবতীকে সমর্থন করছেন ২৬ শতাংশ ভোটার। অখিলেশ যাদবকে ২২ শতাংশ।

সেখানে বিজেপি এখনও মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসেবে কাউকেই তুলে ধরতে পারেনি।

আরও পড়ুন- উত্তর প্রদেশে টার্নিং পয়েন্ট মুসলিম ভোটই

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।