ঢাকা: তুমুল উত্তেজনা চলছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। প্রথম পক্ষের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক (সুনির্দিষ্ট টার্গেটে হামলা) ও দ্বিতীয় পক্ষের পাল্টা আঘাতের খবরে সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখায় (লাইন অব কন্ট্রোল) চলছে অস্ত্র-সরঞ্জাম মজুদ, সেনা উপস্থিতি বাড়ানোর কাজ এবং যুদ্ধবিমানের মহড়া।
যুদ্ধ বেধে যাওয়ার এ উপক্রমে হিসাব-নিকাশে বসে গেছেন সমর বিশ্লেষকরা। যুদ্ধ যদি শেষ পর্যন্ত বেঁধেই যায় এবং তা গড়ায় পরমাণু বোমা ব্যবহার পর্যন্ত, তবে তাতে কার কেমন ক্ষতি হবে, তা উঠে আসছে এসব হিসাব-নিকাশে।
এ নিয়ে বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমে। ওই প্রতিবেদনে একাধিক গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়।
সেসব গবেষণার বিশ্লেষণে উঠে আসছে, যদি ভারত ও পাকিস্তান তাদের মোট সমরাস্ত্রের অর্ধেক পরিমাণ বা ১০০ পরমাণু ওয়ারহেড (যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে হিরোশিমায় নিক্ষিপ্ত ১৫ কিলোটন ওয়ারহেডের সমপরিমাণ) ব্যবহার করে, তবে এতে সরাসরি দুই কোটি ১০ লাখ মানুষ মারা যাবে। আর এটা হবে একেবারে এক সপ্তাহের মধ্যে। এর পরবর্তী প্রতিক্রিয়া তো অব্যাহত থাকবেই।
বিশ্লেষণে আরও উঠে এসেছে, পরমাণু ওয়ারহেড ব্যবহারের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বের প্রতিরক্ষামূলক ওজন স্তরের অর্ধেক ধ্বংস হয়ে যাবে। যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট ‘পরমাণু উইন্টার বা শীতকাল’ অকেজো করে ফেলবে বৈশ্বিক জলবায়ু ও কৃষিকে।
বছর কয়েক আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, ইউনিভার্সিটি অব কোলোরাডো-বাউল্ডার ও রজার্স ইউনিভার্সিটি পরিচালিত একটি গবেষণার বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, যদি ভারত-পাকিস্তান পরমাণু যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তবে প্রথম সপ্তাহেই বিস্ফোরণের প্রভাব, দগ্ধ ও রেডিয়েশনে ২১ মিলিয়ন বা ২ কোটি ১০ লাখ মানুষ মারা যাবে। এক সপ্তাহ পর যুদ্ধের প্রভাব বাড়বে আরও ভয়ানকভাবে।
কেমন প্রভাব বা প্রতিক্রিয়া হবে তার খানিকটা ইঙ্গিত দিচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ফিজিশিয়ানস ফর দ্য প্রেভেনশন অব নিউক্লিয়ার ওয়ার নামে একটি সংস্থা। সংস্থাটি পরিচালিত গবেষণা মতে, উপমহাদেশে পরমাণু যুদ্ধের প্রভাবে আশপাশের অন্তত দুইশ’ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশের বেশি।
ক্ষয়ক্ষতির এই ভয়াবহতায় ভারত-পাকিস্তান যখনই বিতর্কে জড়িয়েছে, তখনই দু’পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে বলে আসছে বিশ্ব সম্প্রদায়। কিন্তু এই আহ্বান যে তারা তোয়াক্কা করছে না তার প্রমাণ দু’পক্ষের পরমাণু ওয়ারহেডের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধিই প্রমাণ করে।
বৈশ্বিক নিরস্ত্রীকরণ সংস্থা বুলেটিন অব দ্য অ্যাটোমিক সায়েন্টিস্ট এর এক প্রতিবেদন মতে, ২০১১ সালে পাকিস্তানের পরমাণু ওয়ারহেড যেখানে ছিল ৯০ থেকে ১১০টি, সেটা তারা ২০১৫ সালে বাড়িয়েছে ১১০ থেকে ১৩০-এ। আর এই সময়ে ভারতের পরমাণু ১১০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২০-এ।
পরমাণু বোমা তৈরির এ প্রতিযোগিতা বিশ্বকে আরও আশঙ্কায় ফেলছে দু’পক্ষের নানা আক্রমণাত্মক মন্তব্যে। উরির সেনাঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ভারতের বিজেপির প্রভাবশালী সংসদ সদস্য সুব্রমানিয়ান স্বামী বলেন, যদি পাকিস্তানের পরমাণু হামলায় ভারতের ১০ কোটি লোক মারা যায়, তবে পাল্টা জবাবে পাকিস্তান সাফ হয়ে যাবে। তাদের এ হুঁশিয়ারিতে ইসলামাবাদের তরফ থেকেও আসছে পাল্টা হুমকি, ‘আঘাত আসলে ভারতকে লণ্ডভণ্ড করে দেওয়া হবে’।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৬
এইচএ/
আরও পড়ুন
** যেকোনো আগ্রাসন প্রতিরোধ করা হবে: নওয়াজ শরিফ
** পাকিস্তানের দাবি ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ বললো ভারত
** পাকিস্তানের হামলায় ১৪ ভারতীয় সৈন্য নিহত, দাবি পাকিস্তানের
** নওয়াজকে পাত্তা দিলো না পাক সামরিক বাহিনী
** ‘হামলা হয়েছে পাকিস্তানের ২ কি.মি. ভেতরে ঢুকে’
** চূড়ান্ত লড়াইয়ের পদধ্বনি! সীমান্তে গ্রাম খালি করছে ভারত
** পাকিস্তানে কমান্ডো হামলার ভিডিও প্রকাশ করবে ভারত
** ভারতের হামলাকে ‘নগ্ন আগ্রাসন’ বলছে পাকিস্তান
** পাকিস্তান সীমান্তে ভারতের হামলায় নিহত ৪০, নওয়াজের নিন্দা
** ভারতীয় সীমান্তে গোলাগুলিতে ২ পাকিস্তানি সৈন্য নিহত
** ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি