ঢাকা: ট্রাম্পের স্ববিরোধিতায় ফের ধন্দে পড়েছে বিশ্বের কূটনীতিক মহল। ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের সম্পর্ক ভালো, এমনকি ট্রাম্প যেন নির্বাচনে জেতেন সে জন্য আদা জল খেয়ে লেগেছিলো রাশিয়ার গোয়েন্দারা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এ রকম অনেক খবর চাউর হয় আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়। এছাড়া একে অপরের প্রশংসায় ট্রাম্প-পুতিনও মুখ খোলেন বেশ কয়েকবার।
এ পরিস্থিতিতে অনেকেই ভেবেছিলেন রাশিয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের চিরাচরিত পররাষ্ট্র নীতির পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে ট্রাম্প জামানায়।
কিন্তু ইদানীং ট্রাম্পের অন্দরমহল থেকে যেসব খবর বেরিয়ে আসছে তাতে হিসেব মেলাতে পারছেন না কেউ।
শোনা যাচ্ছে, বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরই যে পদটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে কট্টর রুশ বিরোধী যুদ্ধবাজ জন বোলটনকে। ফলে ট্রাম্প-পুতিনের ‘মধুর সম্পর্ক’ কতদিন বজায় থাকবে সে ব্যাপারে ধন্দে পড়ে গেছেন অনেকেই।
জর্জ বুশের জামানায় জাতিসংঘে মার্কিন দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বোল্টনকে রিপাবলিকান শিবিরের সবচেয়ে কট্টরপন্থি ‘মাউথপিছ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একই সঙ্গে ইরান ও রাশিয়ার কট্টর বিরোধী হিসেবেও পরিচিত তিনি।
জন বোলটন যখন জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত ছিলেন তখন সারা বিশ্বেই তুঙ্গে ছিলো মার্কিন বিরোধী মনোভাব।
হাফিংটন পোস্ট পত্রিকা জানিয়েছে, বিশ্বমঞ্চে সবচেয়ে অপ্রিয় কূটনীতিক হিসেবে ওই সময়ই নাম কামিয়েছিলেন জন বোলটন।
এহেন কট্টরপন্থিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ করা হলে ট্রাম্প-পুতিনের মধুর সম্পর্কের কি হবে তাই নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বিশ্বের কূটনীতিক মহলে।
তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, জন বোলটনের ব্যাপারটি সামনে এগোলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে নাম আছে টেনেসির সাবেক বব কর্কারের নামও।
যথেষ্ট সংখ্যক রিপাবলিকান নীতি নির্ধারকের সমর্থন পেলে তাকেই করা হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেক্রেটারি অব স্টেট’ শোনা যাচ্ছে এমনটাই। এছাড়া শর্ট লিস্টে আছেন নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র রুডি গুলিয়ানিও।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বোলটনকে নিয়োগ দিলে ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক পররাষ্ট্র নীতিই প্রতিফলিত হবে। এমনকি এর ফলে রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক উন্নয়নের পরিকল্পনাতেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
কারণ সিরিয়া প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে সীমিত আকারে আলোচনার উদ্যোগ নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন তখন এর তীব্র সমালোচনা করেন বোলটন। এ উদ্যোগকে ওবামার ‘ঘোর’ বলেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। এছাড়া সিরিয়ায় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ অভিন্ন, এমন ধারণারও তীব্র বিরোধী তিনি।
২০১৩ সালে বোলটন ওবামার মধ্যপ্রাচ্য নীতিকে ব্যঙ্গ করে তার এক লেখায় উল্লেখ করেন, ‘যখন ওবামা ঘুমের মধ্যে হেঁটে বেড়াচ্ছেন তখন পুতিন অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে রাশিয়ার মধ্যপ্রাচ্য নীতি বাস্তবায়ন করছেন। ’
অথচ কি না বোলটনের সম্ভাব্য মনিব ট্রাম্প নিজেই রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী। এমনকি সিরিয়ায় রাশিয়ার পথের কাঁটা না হতে ওকালতি করেছিলেন তিনি।
তার মতে, সিরিয়ায় রাশিয়া বাশার আল আসাদকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করছে। তাই তারাই আইএস এর মোকাবেলা করুক। যুক্তরাষ্ট্র খামোখাই আইএস বিরোধী অভিযানে জড়িয়েছে।
তবে রাশিয়া প্রশ্নে বোলটন ও ট্রাম্পের অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী হলেও জানা গেছে বোলটনকে খুবই পছন্দ করেন ট্রাম্প।
গত আগস্ট মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে বোলটন তার অন্যতম বিশ্বস্ত ও যোগ্য বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, সে (বোলটন) একজন কঠিন পাত্র। সে কি বলছে তা সে জানে।
বোলটনের নিয়োগের ব্যাপারে আরও একটি ব্যাপারে স্ববিরোধিতার পরিচয় দিচ্ছেন ট্রাম্প। তা হলো, ট্রাম্প বরাবরই ওয়াশিংটনের সরকারি মহলে বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান এবং ধনকুবেরের প্রভাব বিস্তারের বিপক্ষে কথা বলেছেন। নির্বাচনী প্রচারে হিলারির বিরুদ্ধে তার ‘ট্রাম্প কার্ড’ ছিলো এ বিষয়টিই।
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জিতলে মার্কিন নীতি নির্ধারণে অর্থের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তারের প্রথার অবসান ঘটাবেন তিনি।
কিন্তু বোলটনকে নিয়োগ দেয়া হলে বিষয়টি দাঁড়াবে যে টাকার প্রভাবে ভেসে যাচ্ছেন ট্রাম্প নিজেও। কারণ ট্রাম্পের নির্বাচনী তহবিলে উল্লেখযোগ্য অংশ অনুদান দেন মার্কিন ধনকুবের রবার্ট মারসার। যিনি কি আবার বোলটনের অন্যতম সমর্থক।
এদিকে সোমবার যখন ওয়াশিংটনে বোলটনের সম্ভাব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার গুঞ্জন দানা বেঁধে ওঠে ঠিক তখনই বন্ধু পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপ করেন ট্রাম্প।
জানা গেছে, ওই আলাপের সময় দুইজনই সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সব মিলিয়ে নিজের চরিত্রের সঙ্গে মিল রেখেই নিজের প্রেসিডেন্সির প্রথম থেকেই খামখেয়ালি পথে হাঁটতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বোলটনকে নিয়োগ দেয়া হলে সত্যিই প্রমাণিত হবে বিষয়টি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৬
আরআই