সেজন্য রাষ্ট্রের যাবতীয় দেখভালের দায়িত্ব তার ওপরই। অথচ সেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই নাকি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বা স্পর্শকাতর কোনো তথ্য দিতে চাইছে না গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
এ খবরটিই এখন মার্কিন সংবাদমাধ্যমের আলোচিত বিষয়। গত বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) প্রথমে এ খবর দিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। তাদের দাবি, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ট্রাম্পের কাছ থেকে গোপন ও স্পর্শকাতর তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিও লুকিয়ে রাখতে চাইছেন।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল মনে করছে, প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে স্পর্শকাতর তথ্য লুকিয়ে রাখার এ সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে অবিশ্বাসকেই স্পষ্ট করলো। সে কথা বলছেন সাবেক ও বর্তমান অনেক কর্ম কর্মকর্তাও।
যেমন হাউস ইন্টিলিজেন্স কমিটির ৠাংকিং মেম্বার রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান অ্যাডাম স্কিফ বলেছেন, তিনি এই উদ্বেগের কথা শুনেছেন। স্কিফ বলেন, “আমি গোয়েন্দা অঙ্গনের অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি হোয়াইট হাউস ও প্রেসিডেন্ট নিয়ে তাদের উদ্বেগের বিষয়ে। আমি মনে করি ওই উদ্বেগের কারণেই কিছু নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ”
এই কর্মকর্তা মনে করেন, “গোয়েন্দা অঙ্গনের লোকেরা সবসময়ই তাদের সবচেয়ে স্পর্শকাতর তথ্য ও গুরুত্বপূর্ণ লোকটির সুরক্ষার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকে। ”
স্কিফ রিপাবলিকান অর্থাৎ ট্রাম্পের স্বদলীয় হয়েও তার ব্যাপারে এই ‘দূরত্ব ও গোপনীয়তা’ বজায় রাখার কথা বলছেন বিধায় সহজেই আন্দাজ করা যাচ্ছে, পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যম এখানেই শেষ দেখছে না। তারা বলছে, এই অবস্থা আরও সূক্ষ্ম পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।
সরকারি একজন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ট্রাম্পকে ডেইলি ব্রিফিংয়ের নোটপাতি ছাড়া আর কিছুই সরবরাহ করা হয় না। এমনকি নিয়মিত সেই ব্রিফ কী ভিত্তিতে নির্ধারিত হলো সে বিষয়েও কিছু বলা হয় না।
আরেকটি মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের দাবি, ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন ক’দিন আগে পদত্যাগ করে চলে যাওয়ার পেছনে এ ধরনের অবিশ্বাসই অনেকাংশে দায়ী ছিল। যদিও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রাশিয়ার সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রাখা। ফ্লিন চেয়েছিলেন, যেসব গোয়েন্দা তথ্য সংগৃহীত হয় তা এক জায়গায় নিয়ে ‘র’ কপিসহ প্রেসিডেন্টের দরবারে হাজির করা, ফলতঃ তার বিরুদ্ধে হোয়াইট হাউসের অনেক কর্মকর্তা দাঁড়িয়ে যান।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, ঐতিহাসিকভাবেই গোপন বা স্পর্শকাতর তথ্য সরবরাহের পদ্ধতি বা উপায় সবসময় সুরক্ষিত রাখেন গোয়েন্দারা। কিন্তু কেবল প্রেসিডেন্টের ওপর বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নে এমনভাবে লুকিয়ে রাখার ঘটনা কখনো ঘটেনি।
কেন এই বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্ন? সে প্রশ্ন তৈরির পরিস্থিতি খোদ ট্রাম্পেরই তৈরি করা। যখন গোয়েন্দারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ ছিল বলে দাবি করেন, তখন ট্রাম্পই নিজের অধীন সংস্থাগুলোর দাবির বস্তুনিষ্ঠতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন।
সেই প্রেক্ষিতে ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেটর চার্লস স্কুমার জানুয়ারিতেই তুলোধুনো করেন ট্রাম্পকে। তিনি প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তুমি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে এক হাত নিয়েছো, তারা চাইলে তোমাকে পাল্টা জবাব দিতে পারে। ”
তবে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের (ডিএনআই) কার্যালয় সংবাদমাধ্যমের খবরগুলোকে অসত্য বলে উড়িয়ে দেয়।
এ অবস্থায় সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণ, রাশিয়ার প্রতি ট্রাম্পের দুর্বলতা সবসময়ই প্রকাশ পেয়েছে। এরমধ্যে তার আস্থাভাজন নিরাপত্তা উপদেষ্টা ফ্লিন গোপনে মস্কো ও রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করায় গোয়েন্দাদের উদ্বেগ আরও বেড়ে গেছে। সেই উদ্বেগের কারণেই বিশ্বাসযোগ্যতায় ছাড় পাচ্ছেন না খোদ কমান্ডার ইন চিফ বা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৭
এইচএ/