ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম মঙ্গলবার এখবর দিয়েছে। খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন আবদুল গাইয়ুম সোমবার দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করার পর মঙ্গলবার মোহাম্মদ নাশিদ এক বার্তায় এই আহবান জানান।
মোহাম্মদ নাশিদের মালদ্বীপ ডেমোক্রেটিক পার্টি সার্কভুক্ত দেশ শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো থেকে পরিচালিত হয়। মঙ্গলবার সেখান থেকেই নয়াদিল্লি কাছে দ্রুত সাহায্য কামনা করে জরুরি বার্তাটি পাঠান তিনি।
নিজে দল মালদ্বীপ ডেমোক্রেটিক পার্টির মাধ্যমে নয়াদিল্লির কাছে পাঠানো বার্তায় নাশিদ বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুমসহ আটক সবাইকে মুক্ত করে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করার জন্য আমরা চাই ভারত তার সামরিক বাহিনীর কন্টিনজেন্টসহ রাষ্ট্রদূত প্রেরণ করুক। আমরা (মালদ্বীপে) ভারতের দৃশ্যমান উপস্থিতি চাইছি। ''
নয়াদিল্লির কাছে পাঠানো বার্তায় তিনি আরও বলেন, "তাকে (প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন আবদুল গাইয়ুম) ক্ষমতা থেকে অবশ্যই সরিয়ে দিতে হবে। বিশ্বের সরকারগুলোর প্রতি, বিশেষ করে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি মালদ্বীপের জনগণের পক্ষ থেকে এটা এক ন্যায়সঙ্গত অনুরোধ। ''
মোহাম্মদ নাশিদ যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন স্বৈরাচারি ইয়ামিন গাইয়ুম সরকারের সঙ্গে সব ধরনের আর্থিক লেনদেন বন্ধ করে দেয় সেজন্যও যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেন।
প্রসঙ্গত, মোহাম্মদ নাশিদই (৫০) হচ্ছেন মালদ্বীপের ইতিহাসের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট।
বার্তায় তিনি জরুরি অবস্থা জারির সমালোচনা করে বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন যে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন তা মালদ্বীপে সামরিক শাসন জারি করারই নামান্তর। কেননা তিনি মৌলিক অধিকার নিষিদ্ধ করেছেন, সুপ্রিম কোর্টের সকল কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছেন। তার এই ঘোষণা অসাংবিধানিক এবং বেআইনি। মালদ্বীপের কোনো নাগরিক এহেন অবৈধ বেআইনি আদেশ মানতে বাধ্য নন। ’’
প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন আবদুল গাইয়ুম সোমবার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পর পুলিশ ও সৈন্যরা মধ্যরাতে প্রেসিডেন্টের জ্যেষ্ঠ সৎ ভাই সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুমকে গ্রেফতার করে।
এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতিকেও মঙ্গলবার ভোরে সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে হানা দিয়ে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা তাদের বাসভবন ছেড়ে সুপ্রিম কোর্টভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
সকল বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর নামে করা মামলা ও আটকাদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে তাদের মুক্তি ও অব্যাহতি দান এবং প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার করার জন্য বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের চারজন বিচারপতির যে বেঞ্চ আদেশ দিয়েছিল, গ্রেফতারকৃত দুই বিচারপতিও সেই বেঞ্চে ছিলেন।
এরা হচ্ছেন জাস্টিস আবদুল্লাহ সাঈদ ও জাস্টিস আলী হামিদ। এছাড়া বিচার বিভাগীয় এক কর্মকর্তাকেও এসময় গ্রেফতার করা হয়। কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
এভাবে ক্রমাগত গ্রেফতার, আটক করা, মামলা দেওয়াসহ দেশজুড়ে নানা দমনমূলক ব্যবস্থা চালিয়ে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন গাইয়ুমের সরকার।
পার্লামেন্ট ও সুপ্রিম কোর্টসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে কার্যত অচল করে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন গাইয়ুম। সব মিলিয়ে দেশটিতে এখন ক্যু পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
মালদ্বীপ বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হুসনু আল সৌদ রয়টার্সকে বলেছেন, ‘‘জরুরি অবস্থার অর্থই হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের সব কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়া। এর অর্থ বিচার বিভাগের দায়িত্বে কেউ আর নেই। বিচার বিভাগ কার্যত অরক্ষিত। ’’
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৮/ আপডেট ১৬৩৪ ঘণ্টা
জেএম