ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

চলে গেলেন আসমা জাহাঙ্গীর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৮
চলে গেলেন আসমা জাহাঙ্গীর আসমা জাহাঙ্গীর

পাকিস্তানের প্রখ্যাত মানবাধিকারকর্মী, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও একাত্তরে বাঙালির ওপর গণহত্যার কড়া সমালোচক আসমা জাহাঙ্গীর মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।

রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) হৃদরোগে আক্রান্ত হলে লাহোরের একটি হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে এক পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন আসমা।

 

সামরিক শাসন ও নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে এবং মানবাধিকারের পক্ষে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর আসমার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পাকিস্তানে। সরকার-প্রশাসন থেকে শুরু করে বিচারাঙ্গন ও সুশীল সমাজের নেতৃস্থানীয়রাও তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।

২০১৩ সালে বাবার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ গ্রহণ করেন আসমা জাহাঙ্গীর
মুক্তিযুদ্ধের সময় নিপীড়িত বাঙালির পক্ষে যেসব পাকিস্তানি দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আসমার বাবা মালিক গোলাম জিলানী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। ২৫ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তার মুক্তি চেয়ে স্বৈরশাসক জেনারেল ইয়াহিয়ার উদ্দেশে খোলা চিঠি লেখেন জিলানী। সেজন্য কারাভোগ করতে হয় এই রাজনীতিককে।
 
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পক্ষে বিভিন্নভাবে লড়াই করা যে ৬৯ বিদেশি বন্ধুকে সম্মাননা দেওয়া হয়, তাদের একজন গোলাম জিলানীও। ২০১৩ সালে তার পক্ষে ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ গ্রহণ করেন জিলানীর কন্যা ও মানবাধিকার বিষয়ে বিশ্বনন্দিত আইনজীবী আসমা।

উগ্রবাদী ও সমালোচকদের চোখ রাঙানি সত্ত্বেও নারীমুক্তি ও শিশু অধিকারের পক্ষে বরাবর সোচ্চার ছিলেন আসমা জাহাঙ্গীর। গণতান্ত্রিক ও অংশগ্রহণের রাজনীতি নিয়ে পাকিস্তান গড়তে কাজ করা এই মানবাধিকার নেত্রী জীবদ্দশায় বারবার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে রাওয়ালপিন্ডির নেতৃত্বের ভূমিকার নিন্দা করেছেন। বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলাকালে কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর পক্ষ নিয়ে পাকিস্তান প্রতিক্রিয়া দেখানোয় তার কঠোর সমালোচনা করে আসমা বলেছিলেন, পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াই প্রমাণ করে বিচারাধীনরা যুদ্ধাপরাধী। বাবার পক্ষে সম্মাননা নিতে আসা আসমা জাহাঙ্গীরকে বুকে জড়িয়ে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা১৯৫২ সালে লোহোরে জন্ম নেওয়া আসমা পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক। তিনি ছিলেন পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম নারী সভাপতি। সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউল হকের আমলে পাকিস্তানে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনের কারণে ১৯৮৩ সালে তাকে কারাবরণ করতে হয়। ২০০৭ সালে ক্ষমতাসীন নেতৃত্বের নিপীড়নের বিরুদ্ধে আইনজীবীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় তাকে গৃহবন্দিও থাকতে হয়।

আসমা ছিলেন পাকিস্তানের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন ও নারী অধিকার আন্দোলন ডব্লিউএএফ’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা। নারী-শিশুসহ নিপীড়িত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকায় রাখায় আসমা জাহাঙ্গীর অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননায় ভূষিত হন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৮
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।