গত ১৪ এপ্রিল নেপালি নববর্ষের দিন থেকে ৪৫ দিনব্যাপী এ অভিযান শুরু হয়। সলুখুম্বু জেলার খুম্বু পাসাংলাউ পৌরসভার উদ্যোগে এ অভিযানে এভারেস্ট থেকে কমপক্ষে ১০ হাজার কেজি আবর্জনা অপসারণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
রোববার (১৮ এপ্রিল) দেশটির পর্যটন বিভাগের মহাপরিচালক ডান্দু রাজ ঘিমায়ার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে এ পর্যন্ত তিন হাজার কেজি আবর্জনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এরমধ্যে দুই হাজার কেজি পাঠানো হয়েছে ওখালডুঙ্গায়। বাকি এক হাজার কেজি আবর্জনা ধ্বংস করার জন্য সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে কাঠমান্ডু আনা হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, অভিযানে আমাদের দল এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে পৌঁছেছে। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার, পানি ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
‘এ অভিযানে আমরা বেস ক্যাম্প থেকে পাঁচ হাজার কেজি, দক্ষিণাঞ্চল থেকে দুই হাজার কেজি, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ক্যাম্প এলাকা থেকে আরও তিন হাজার কেজি আবর্জনা সংগ্রহ করবো। ’
আভিযানিক দলটি এ পর্যন্ত চারটি মরদেহ খুঁজে পেয়েছে। আরও মরদেহ পাওয়া গেলে সেগুলোও নিচে নামিয়ে আনা হবে বলে জানান নেপালের পর্যটন বিভাগের মহাপরিচালক।
ঘিমায়ার বলেন, এবারই প্রথমবারের মতো বিভিন্ন দেশের পর্বতারোহীরা বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়াটি পরিষ্কার করতে একত্রিত হয়েছেন।
গোটা অভিযানে প্রায় ২৩ মিলিয়ন নেপালি রুপি বা এক কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয় হবে বলেও জানান তিনি।
প্রতিবছর শত শত পর্বতারোহী, শেরপা ও নিরাপত্তাকর্মী এভারেস্টে ওঠার পথে হাজার হাজার কেজি খালি অক্সিজেন সিলিন্ডার, রান্নাঘরের উচ্ছিষ্ট, বিয়ারের বোতলসহ বিভিন্ন আবর্জনা ফেলে যান। পরে অপচনযোগ্য এসব আবর্জনায় তৈরি হয় ‘বিশ্বের সর্বোচ্চ আবর্জনার স্তূপ’।
পর্যটন কর্মকর্তা ঘিমায়ার বলেন, আমাদের লক্ষ্য এভারেস্টের সুনাম ফিরিয়ে আনতে যত বেশি সম্ভব আবর্জনা নামিয়ে আনা। এভারেস্ট শুধু বিশ্বের মুকুট নয়, এটি আমাদের গর্বের বিষয়ও।
এভারেস্ট পরিষ্কারের উদ্যোগ এটিই প্রথমবার নয়। ২০১৪ সাল থেকেই নেপাল সরকার নিয়ম চালু করেছে, সব পর্বতারোহীকেই নিজের অন্তত ৮ কেজি আবর্জনা সঙ্গে নিয়ে নামতে হবে।
ঘিমায়ার বলেন, পর্বতারোহীরা তাদের নিজেদের বর্জ্য নামিয়ে আনলে তা এভারেস্ট পরিষ্কার রাখতে অনেক সাহায্য করবে। শুধু ৮ কেজি না, সম্ভব হলে তাদের পুরো আবর্জনাই সঙ্গে নিয়ে নামা উচিত।
নেপাল মাউন্টেয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক টিকা রাম গুরুং বলেন, এভারেস্টে পাথর আর বরফ ছাড়া বাকি সব কিছুই ফিরিয়ে আনা হবে। পর্বতটিকে দূষণমুক্ত রাখতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দেড় মাসব্যাপী এ পরিষ্কার অভিযানে সহযোগিতা করছে বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা। এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নোরগের এভারেস্ট জয়ের দিন স্মরণে এ অভিযান শেষ করা হবে আগামী ২৯ মে।
এসময়ের মধ্যে সংগ্রহ করা সব আবর্জনা আগামী ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে দেশটির নামচে শহরে প্রদর্শন করা হবে। এরপর ফেরিতে করে সেগুলোকে রাজধানী কাঠমান্ডু নিয়ে পুনর্ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হবে।
দ্যা হিমালয়ান টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চলতি মৌসুমে অন্তত ৫শ বিদেশি পর্বতারোহী ও এক হাজারেরও বেশি সহযোগী মাউন্ট এভারেস্ট পরিদর্শন করবেন। এর পাশাপাশি তারা আরোহণ করবেন চতুর্থ সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট লোৎসেতেও।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৯
একে/এএ