ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের চাপে দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কায় চীন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২০
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের চাপে দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কায় চীন ছবি: প্রতীকী

২০০৮ সালের মহামন্দার পর যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা নিজেদের শুধরে নিয়েছে। তাই করোনা ভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে তারা কোনো ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে, এমন আশঙ্কা কম।

তবে চীনের ক্ষেত্রে এটি বলা যাচ্ছে না। অভাবগ্রস্তদের ঋণ দেওয়া, লাভ ছেড়ে দেওয়া এবং ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের পুঁজিবাজার রক্ষা করার নির্দেশ দিয়ে চীন তাদের ব্যাংক এবং বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শহীদে পরিণত করেছে।

কোভিড-১৯ এর কারণে চীনে ক্রেডিট রিস্ক বেড়েছে। চীনের পুঁজিবাজার ওয়াল স্ট্রিটের মতোই ধসের পথে।

গত সপ্তাহে চীন সরকার ৯টি ঝামেলাপূর্ণ কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়েছে। এ ৯টি কোম্পানি সাবেক ধনকুবের শিয়াও জিয়ানহুয়ার টোমরো হোল্ডিং কোম্পানির অধীনে ছিল। এর অ্যাসেট মোট ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (চীনা মুদ্রা) বা ১৭১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। চীনের সাম্প্রতিক ইতিহাসে বাজেয়াপ্ত করার সবচেয়ে বড় ঘটনা এটি। তিন বছর আগে হংকংয়ের ফোর সিজনস হোটেল থেকে শিয়াওকে ধরে নিয়ে যায় চীনা কর্তৃপক্ষ এবং এরপর থেকে তাকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি।

তবে এটি তেমন অবাক করা বিষয় নয়। ২০১৭ সাল থেকেই বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো ঝামেলাপূর্ণ। একটি রিভিউতে দেখা গেছে তাদের করপোরেট গভর্ন্যান্স স্কোর কমে যাচ্ছিল। হুয়াশিয়া লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি ছিল বাজেয়াপ্ত করা কোম্পানিগুলোর একটি। তাদের নিয়ম বহির্ভূত সেলিং পলিসি ছিল এবং তারা বেআইনিভাবে বীমাগ্রাহকদের তথ্য ফাঁস করে দিতো।

এসব বেআইনি এবং অন্যায্য অনুশীলন বন্ধের অঙ্গীকার করে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তারা দেখে, কোম্পানিগুলো অর্থের মিথ্যা উৎস প্রদর্শন করছে এবং একই অ্যাসেট ব্যবহার করে একাধিক ঋণ নিচ্ছে।

এর এক বছর আগে বাওশাং ব্যাংক কোম্পানিকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। তখন নিয়ন্ত্রকরা বলেছিলেন, এটি এককালীন সমাধান। কিন্তু এখন এ সমস্যাটি আরও গুরুতর হয়ে উঠেছে এবং বাড়ছে। এর ফলে এক পর্যায়ে ঋণ দেওয়া এবং তারল্যের ধারাবাহিকতা বিঘ্নিত হবে।

তবে এসব কোম্পানির অন্য উপায় ছিল না বললেই চলে। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে ঋণে জর্জরিত এ কোম্পানিগুলোর অ্যাসেট ভ্যালু একক সংখ্যা পরিমাণ কমলেই এগুলো ভারসাম্যহীন হয়ে যাবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় হুয়াশিয়া লাইফের কথা। গত এক দশকে ‘হাই-ইয়েল্ড সেভিংস প্রোডাক্ট’ বিক্রির মাধ্যমে চীনার চতুর্থ বৃহত্তম বীমা কোম্পানি হয়ে ওঠে সেটি। ২০১৯ সালের শেষে তাদের মোট অ্যাসেট ছিল প্রায় ছয়শ’ বিলিয়ন ইউয়ান।

অনেক ক্ষেত্রেই অ্যাসেট বাড়িয়ে দেখানো অসম্ভব কিছু না। করোনা ভাইরাসের কারণে বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কী হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে হুয়াশিয়ার বুকভ্যালু কমেছে ২৩ শতাংশ। এসব কারণেই বীমা কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রকদের তোপের মুখে পড়েছে।

শুধু ব্যালেন্স শিটের গড়বড়ের ফলেই চীনের পুঁজিবাজারের এ অবস্থা, তা নয়। ১৯৯৫ সাল থেকে মাত্র ১২টি কোম্পানি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা অন্য সংস্থার কাছে বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকই গত বছর হয়েছে।

সম্প্রতি যে কোম্পানিগুলো বাজেয়াপ্ত হয়েছে, নিয়ন্ত্রকরা সেগুলোতে শেয়ারহোল্ডার, পরিচালক এবং ব্যবস্থাপক দল পাঠাবে। অন্য কিছু কোম্পানিকে ট্রাস্টিতে পরিণত করা হবে। এভাবে বিপর্যস্ত ব্যবসাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়া হবে।

কিন্তু এ পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। এতে বীমা কোম্পানিগুলো তোপের মুখে থাকবে। খুব বেশি বিপদে পড়লে তাদের সব গুটিয়ে ফেলতে হবে, তখন সামগ্রিক অর্থ ব্যবস্থায় এর প্রভাব পড়বে। তারচেয়ে বেইজিং সাহস করে কিছু কোম্পানিকে ব্যর্থ হয়ে তলানিতে যাওয়ার সুযোগ করে দিলে, অন্য কোম্পানিগুলোকে বাঁচানো যেতো।

সূত্র: দ্য ইকোনোমিক টাইমস

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২০
এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।