ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্প, নাকি বাইডেন, কে হচ্ছেন আমেরিকার ৫৯তম রাষ্ট্রপতি?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০২০
ট্রাম্প, নাকি বাইডেন, কে হচ্ছেন আমেরিকার ৫৯তম রাষ্ট্রপতি? ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন

করোনার মধ্যেই মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) আমেরিকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হতে যাচ্ছে। কে হতে চলেছেন আমেরিকার ৫৯তম রাষ্ট্রপতি, এনিয়ে শুধু আমেরিকায়ই নয়, গোটা বিশ্বেই চলছে তুমুল জল্পনা।

আবার কি ডোনাল্ড ট্রাম্পই ধরছেন আমেরিকার হাল, নাকি আসছেন জো বাইডেন? আবার রিপাবলিকান, নাকি এবার ডেমোক্র্যাট? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে অপেক্ষা আর মাত্র একদিন।  

করোনা আবহের মধ্যেও বিশ্ববাসীর নজর আমেরিকায়। ভোটে যেমন অন্যতম ইস্যু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ, ভোটের জনসভা, বিতর্কসভা এবং অন্যান্য জমায়েতের কারণে করোনার সংক্রমণ আরও বাড়বে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন বিস্তর। তবু আমেরিকায় চার বছর অন্তর নভেম্বরের প্রথম সোমবারের পর মঙ্গলবারের ভোটের রীতিতে কিন্তু বদল হয়নি এবারও। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।

কে এগিয়ে কে পিছিয়ে, সংখ্যাতত্ত্ব-পরিসংখ্যান নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিবিসির সমীক্ষা বলছে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন ৫২ শতাংশের মতো পপুলার ভোট বা সরাসরি জনগণের ভোটে এগিয়ে রিপাবলিকান ট্রাম্পের চেয়ে। অন্যান্য প্রায় সব সমীক্ষাতেও ইঙ্গিত তেমনই। কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়। আসল যুদ্ধ ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে। তাতে যিনি ২৭০-এর ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে পারবেন, শেষ মুহূর্তে বাজিমাত হবে তাঁরই।

আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একটা কথা খুব প্রচলিত— কত ব্যবধানে জিতছেন, সেটার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কোথায় জিতছেন। ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট বেশি এমন রাজ্যগুলি হয়ে ওঠে ‘ব্যাটলগ্রাউন্ট স্টেট’। তাই পপুলার ভোট বেশি পাওয়ার অর্থই যে সেই প্রার্থী জিতে যাবেন, এমন ধরে নেওয়া যায় না। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ইতিহাসে এমন নজির বহু রয়েছে। শেষ তম উদাহরণ হিলারি ক্লিন্টন। ২০১৬ সালের নির্বাচন। হিলারির চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ কম ভোট পেয়েও শেষ পর্যন্ত ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে বাজি জিতে নেন ট্রাম্প।

এর কারণ লুকিয়ে রয়েছে আমেরিকার জটিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতির মধ্যে। কেমন সেই পদ্ধতি? সাধারণ মানুষের পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন প্রেসিডেন্ট। প্রথমে জাতীয় নির্বাচনে সরাসরি ভোট দেন ভোটাররা। সেই প্রক্রিয়া প্রায় এক বছর ধরে চলে। ব্যালট পেপারের ক্ষেত্রেও এক একটি রাজ্যের জন্য় নিয়ম আলাদা। কিছু রাজ্য আছে, যেখানে শুধু রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতির নামই থাকে। আবার রাজ্যের প্রতিনিধিদের নামও ব্যালটে থাকে অনেক রাজ্যে। জনগণের এই সরাসরি ভোটকে বলা হয় পপুলার ভোট।  

পপুলার ভোটের পাশাপাশি রয়েছে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট। শেষ কথা কিন্তু এই ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটই। আমেরিকার ৫০টি রাজ্যে এই ইলেক্টোরাল কলেজ বা বোঝার সুবিধার্থে বলা যেতে পারে ‘আসন সংখ্যা’ ৫৩৮। সংখ্যাগরিষ্ঠতা বা অর্ধেকের বেশি আসন নিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য় দরকার ২৭০ আসন। জনসংখ্যার ভিত্তিতে রাজ্যগুলির ইলেক্টোরাল কলেজের সংখ্যা নির্ধারিত হয়। সেই দিক থেকে সবচেয়ে বড় রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া, ইলেক্টোরাল কলেজের সংখ্যা ৫৫। অন্যতম বড় রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে টেক্সাস (৩৮), ফ্লোরিডা (২৯), ক্যালিফোর্নিয়া (২৯)। এই বড় রাজ্যগুলিতে এগিয়ে থাকলে জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়। আবার আলাস্কা ও নর্থ ডাকোটা রাজ্যের হাতে রয়েছে তিনটি করে ইলেক্টোরাল ভোট।

ভোটের নিয়ম অনুযায়ী কোনও রাজ্যে যে দল বেশি পপুলার ভোট পায়, সেই রাজ্যের পুরো ইলেক্টোরাল কলেজের সব ভোট যায় সেই দলের দখলে। আমাদের দেশ তথা আমাদের রাজ্যের উদাহরণ দিয়ে বলা যাক। পশ্চিমবঙ্গে লোকসভার আসন ৪২টি। ধরা যাক এই রাজ্য থেকে কোনও একটি দল বেশি পপুলার ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ হল। তা হলে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটই য়াবে সেই বিজয়ী দলের দখলে। একই পদ্ধতিতে অন্যান্য রাজ্যগুলির নির্বাচনের ফলাফল যোগ করে যে দলের ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট বেশি হবে, সেই দল রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবে। অবশ্য ছোট্ট দু’টি রাজ্যে সামান্য ব্যাতিক্রম আছে।  

আমেরিকার সময় অনুযায়ী ৩ নভেম্বর এই পপুলার ভোটের হিসেব কষা হবে। পরে ইলেক্টোরাল কলেজের জয়ীরা নির্বাচিত করবেন রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতিকে। আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন রাষ্ট্রপতি। তবে দু’বারের বেশি কেউ প্রার্থী হতে পারেন না ভোটে। সেই হিসেবে বারাক ওবামা, জর্জ বুশ কিংবা বিল ক্লিন্টন— কেউই আর আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। মূলত আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এই আইন করা হয়েছে। ওয়াশিংটন দু’বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তৃতীয় বার নিজে থেকেই আর প্রার্থী হননি। সেই দিক থেকে দেখলে ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বার নির্বাচিত হলে, তিনিও চলে যাবেন বুশ, ওবামাদের দলে।  

আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সব সময় নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার হয়। এখনও পর্যন্ত সে দেশের ইতিহাসে এর কোনও নড়চড় হয়নি। তাই তারিখ নির্দিষ্ট থাকে না। নভেম্বরের ১ তারিখেই মঙ্গলবার হোক আর যে তারিখেই হোক, প্রথম মঙ্গলবারই ভোট হয়। এ বছর নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার পড়েছে ৩ তারিখে। ফলে ওই দিনই অগ্নিপরীক্ষা। যদিও বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী ১০ ঘণ্টা পিছিয়ে আমেরিকা। তাই বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হবে ভোটাভুটির পর্ব।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০২০
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।