ঢাকা: বিখ্যাত ফরাসি লেখক দার্শনিক ভলতেয়ার একজন সুবিধাবাদী। ব্রিটেনে অবস্থানকালে নানা কৌশলে অভিজাত মহলের সুনজরে আসার চেষ্টা করেছেন তিনি।
ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষাবিদ এমন দাবিই করছেন। ভলতেয়ারের জীবদ্দশায় লেখা বেশ কিছু ইংরেজি লেখনিতে এমন ইঙ্গিতই রয়েছে বলে তাদের দাবি। সম্প্রতি এই লেখাগুলো উন্মোচণ করেছেন তিনি।
লেখাগুলোর মাধ্যমে ফরাসি এই লেখকের ব্যক্তি জীবনের অনেক অজানা অধ্যায় নতুন করে পাঠকের সামনে নিয়ে এসেছে ভলতেয়ারের ওপর গবেষণায় নিয়োজিত অক্সফোর্ডের ওই গবেষক। তিনি অনুসন্ধানে দেখেছেন, অষ্টাদশ শতকের এই লেখক ব্রিটিশ রাজ পরিবারের পক্ষ থেকে ২শ’ পাউন্ড ভাতা পেতেন।
তৎকালীন ইংল্যান্ডের মূলধারায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে ভলতেয়ার নিজের নামের উচ্চারণও বদলে ব্রিটিশ করে ফেলেন। ফরাসি নামের প্রথম অংশ ‘ফ্রাঁসোয়া’ ইংরেজি ঢংয়ে করে ফেলেন ‘ফ্রান্সিস’।
এই সব কারণে ভলতেয়ারের লেখার গবেষক প্রফেসর নিকোলাস ক্রোংক মনে করেন, ইংল্যান্ডে অবস্থানের সময় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে ভলতেয়ার যার পর নাই সুবিধাবাদী হয়ে উঠেছিলেন।
নতুন আবিষ্কৃত ভলতেয়ারের লেখা ১৪টি লেখা বর্তমানে অক্সফোর্ড ভিত্তিক ভলতেয়ার ফাউন্ডেশন পর্যালোচনা করছে। আশা করা হচ্ছে, এই গবেষনার ফল ভলতেয়ারের ব্যাপারে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য বিপুল সম্ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি করবে। এই গবেষণা কার্যক্রম শেষ হতে ২০১৮ সাল নাগাদ লেগে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভলতেয়ারের এই লেখাগুলো উদ্ধার করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি লাইব্রেরি থেকে। এগুলোতে মূলত ইংল্যান্ডে ভলতেয়ারের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা বিধৃত হয়েছে। ভলতেয়ার তার সাহিত্য জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় ইংল্যান্ডে কাটিয়েছেন। ধারণা করা হয়, ১৭২০ সালের দিকে জীবিকা অন্বেষণে ফ্রান্স ছেড়ে ইংল্যান্ড যান তিনি।
লেখাগুলোর বিভিন্ন ইঙ্গিত থেকে গবেষকরা ধারণা করছেন, ইংল্যান্ডে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের সান্নিধ্য কাজে লাগিয়ে অর্থ আহরণে সচেষ্ট হন ভলতেয়ার। এদের সংস্পর্শে থাকতেই এক পর্যায়ে ব্রিটিশ দার্শনিক এবং বিজ্ঞানীদের কাজে অনুপ্রাণিত হন তিনি। যা পরে তার সাহিত্যকর্মে প্রভাব ফেলে।
গবেষকরা আরও বলেন, ইংল্যান্ডে থাকতে ব্রিটিশ অভিজাত সামন্তদের সঙ্গে তাদের বিলাসবহুল বাসগৃহসহ সেখানকার সমৃদ্ধ লাইব্রেরিতে প্রবেশের সুযোগ পান তিনি।
একটা লেখা থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন রিচিংয়ের ভূস্বামী লর্ড বাথুর্স্টের গৃহে আতিথ্য গ্রহণের কথা। ইংল্যান্ডের বাকিংহ্যামশায়ারে অবস্থিত এই বিলাসবহুল খামার বাড়িটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত টিকে ছিল।
ভলতেয়ার ইংল্যান্ডে যান একজন অপরিচিত অখ্যাত কবি হিসেবে। সেখানে ছিলেন আত্মীয় পরিজনহীন। একমাত্র সহায় ছিল প্যারিসে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের সুপারিশ।
তবে এই সুপারিশকেই ভালভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন ভলতেয়ার। রাষ্ট্রদূতের সুপারিশ বলেই অভিজাত মহলে নিজেকে মেধাবী সাহিত্যিক এবং বুদ্ধিজীবি হিসেবে পরিচিত করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
একই সময় ব্রিটিশ রাজের ভবিষ্যৎ রাণী ক্যারোলিনকে উদ্দেশ করে একটি কবিতা উৎসর্গ করেন ভলতেয়ার। তাতে কাজও হয়। রাজপরিবারের পক্ষ থেকে ২শ পাউন্ড ভাতা নিশ্চিত হয়ে যায় তার।
গবেষণায় আরেকটি মজার বিষয় বেরিয়ে এসেছে। ভলতেয়ার নাকি তার আসল নাম নয়। পারিবারিক নাম বদলে এই নাম গ্রহণ করেন তিনি।
ধারণা করা হয়, ভলতেয়ারের বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ২০ হাজার লেখা রয়েছে। কিন্তু অধ্যাপক ক্রংকের মতে সেগুলোর মধ্যে কয়েক হাজার লেখা এখনও সনাক্ত করা যায়নি।
তবে যাই হোক, ভলতেয়ারের মতো লেখক দার্শনিক কিন্তু সে সময় ইংল্যান্ডেও খুব একটা ছিল না। তিনি ফরাসি বলেই নাক উঁচু ব্রিটিশদের আক্রমণের শিকার হওয়াও বিচিত্র নয়। ব্রিটেন-ফ্রান্স দ্বন্দ্ব অনেক পুরনো। আর এই ব্রিটিশরাই ফ্রান্সের বীর নারী জোয়ান অব আর্ককে পুড়িয়ে মেরেছিল সে কথা সবার জানা।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১২