৩০০ মিলিয়ন ঋণের বোঝা নিয়ে ধ্বংসের শেষ কিনারায় রয়েছে চীনের বৃহত্তম ভবন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এভারগ্র্যান্ড। বাংলাদেশি টাকায় যা ২৫ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।
গেল বছর ডেভেলপার কোম্পানিগুলোর জন্য চীনের নতুন আইন খড়গ হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির ওপরে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এশিয়ার পুঁজিবাজারে। খবর-নিউইর্য়ক টাইমসের।
বাজার থেকে নেওয়া ঋণের উপর ৮ কোটি ৩৫ লাখ কোটি ডলারের সুদ দেওয়ার কথা এভারগ্র্যান্ডের। কিন্তু এ টাকা নাও মিটিয়ে উঠতে পারে বলে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি।
এভারগ্র্যান্ড জানিয়েছে, পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে তারা হয়তো তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে না। এ ঘোষণায় অ্যাপার্টমেন্টের জন্য এভারগ্র্যান্ডকে আগাম টাকা দেওয়া ক্রেতা, ঠিকাদার ও বন্ড হোল্ডারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তিন দিন ধরে বেশ কিছু ক্রেতা বর্তমান অবস্থা জানতে এভারগ্র্যান্ড কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করছেন।
নির্মাণ শিল্পের বাইরেও সংস্থার আরও অনেক ব্যবসা রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল স্বাস্থ্য, গাড়ি, সংবাদ মাধ্যম, আর্থিক সংস্থা। তাই দেনার দায় নির্মাণ ব্যবসা ডুবলে, একই সঙ্গে ডুবতে পারে বাকি সব ব্যবসাই।
এই মুহূর্তে সংস্থাটির ১৩০০টি নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে, কর্মী সংখ্যা দু’লাখেরও বেশি। আর প্রতি বছর ব্যবসার প্রয়োজনে সংস্থাটি গড়ে ৩৮ লাখ অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করে থাকে নির্মাণ শিল্পের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের জন্য।
এই রকম একটি সংস্থা ধসে পড়লে বিশ্ব বাজারে তার অভিঘাত যে কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। ইতোমধ্যেই নির্মাণ শিল্পে ইস্পাতের চাহিদা কমতে পারে মনে করে শেয়ার বাজারে সংশ্লিষ্ট শিল্পের শেয়ারের দাম পড়তে শুরু করেছে। কারণ নির্মাণ শিল্পের কারণেই ইস্পাতের অন্যতম বাজার হল চীন।
বিশেষজ্ঞরা কেউ কেউ বলছেন, ১৩ বছর আগে লেহম্যান ব্রাদার্স ধসে পড়ায় গোটা বিশ্বে যে আর্থিক সমস্যা তৈরি হয়েছিল, এভারগ্র্যান্ডের ক্ষেত্রেও আমরা আবার তা প্রত্যক্ষ করতে পারি। মাথায় রাখতে হবে শুধু চীনের বাজার থেকেই নয়, সংস্থাটি বিশ্বের নানান সংস্থার কাছ থেকেই ঋণ নিয়েছে। আর তাই সংস্থাটি ডুবলে বিশ্বের অনেক আর্থিক সংস্থারই নিঃশ্বাস আটকে আসতে পারে। আরও মাথায় রাখতে হবে, কোভিড-উত্তর বিশ্ব বাজারের অবস্থা এখন বেশ নড়বড়ে।
এদিকে, ব্যাংকগুলোও রয়েছে আতঙ্কে। গত সপ্তাহ থেকে সংস্থার প্রকল্পের ফ্ল্যাট বা অন্য কিছু কিনতে গেলে ব্যাংক গুলো আর ঋণ দিতে চাইছে না। তাদের ভয় এভারগ্র্যান্ড ডুবে গেলে প্রকল্প শেষ হবে না। আর সে ক্ষেত্রে ঋণের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়েও সমস্যা হতে পারে।
১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এভারগ্র্যান্ড চীনের ২৮০টি শহরে ৯০০টির মতো আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন তৈরি করেছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে আগে অর্থ নিয়ে ফ্ল্যাট তৈরি করত এভারগ্র্যান্ড। মূলত ওই ক্রেতার অর্থ দিয়েই ফ্ল্যাট তৈরি করা হতো। এখন দেউলিয়া হওয়ার মুখে পড়ায় ১০ লাখের বেশি ক্রেতা ফ্ল্যাট পাবেন কি না, সে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১
আরইউ