ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করতে মহাকাশে গ্যাসস্টেশন!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২১
বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করতে মহাকাশে গ্যাসস্টেশন!

ঢাকা: মহাকাশ বর্জ্য এখন বিজ্ঞানীদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিপজ্জনক এই বর্জ্য রিসাইকেল বা পুনর্ব্যবহার করতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা চলছে।

এরই মধ্যে মহাকাশে রকেটের জ্বালানি তৈরির সম্ভাবনার কথা বলছে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিষ্ঠান নিউম্যান স্পেস। মহাকাশের এই বর্জ্য সরাতে ইতোমধ্যে মহাকাশে গ্যাসস্টেশনের কথা ভাবতে শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা।

দ্য গার্ডিয়ান-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পৃথিবীর কক্ষপথে পুরোনো মহাকাশযানের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এ ছাড়া অব্যবহৃত কৃত্রিম উপগ্রহ ও রকেটের বিভিন্ন অংশ ঘণ্টায় ২৮ হাজার কিলোমিটার গতিতে ছুটে চলেছে। এগুলো কৃত্রিম উপগ্রহ ও আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের জন্য ঝুঁকি। এ গতিতে ছুটতে থাকা সামান্য একটি স্ক্রুও আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা নভোচারীদের জন্য হুমকি হতে পারে।  

গত সপ্তাহে রাশিয়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে নিজেদের কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংস করেছে। সেখান থেকেও বর্জ্য ছড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এ বর্জ্য মহাকাশে সবার স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলেছে। পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেলে কক্ষপথ ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠবে।

নিউম্যান স্পেস বলছে, তারা মহাকাশে ‘বৈদ্যুতিক প্রপালশন সিস্টেম’ তৈরি করবে। প্রপালশন সিস্টেম হচ্ছে এমন একটি যন্ত্র, যা বস্তুকে সামনের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য শক্তি জোগায়। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে মহাকাশ মিশন দীর্ঘায়িত করার পাশাপাশি কৃত্রিম উপগ্রহকে কক্ষচ্যুত করা যাবে।

অস্ট্রেলিয়ার এই কোম্পানি জাপানের অ্যাস্ট্রোস্কেল ও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যানোরকসের সঙ্গে মিলে মহাকাশ বর্জ্যকে জ্বালানিতে রূপান্তর করার পরিকল্পনা করছে। এই জ্বালানি ওই প্রপালশন সিস্টেমে ব্যবহৃত হবে।

জাপানের অ্যাস্ট্রোস্কেল কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহার করে মহাকাশ বর্জ্য সংগ্রহ করতে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যানোরকস উন্নত রোবট ব্যবহার করে মহাকাশে বর্জ্য সংরক্ষণ ও টুকরা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রতিষ্ঠান সিসলুনার বর্জ্য গলিয়ে ধাতব রডে পরিণত করতে কাজ করছে। নিউম্যান স্পেসের প্রপালশন সিস্টেমে ওই ধাতব রডকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। এ যন্ত্র কক্ষপথ থেকে বর্জ্যকে সরিয়ে দিতে পারবে। নিউম্যান স্পেসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হার্ভে অ্যাস্টায়ার জানান, ইতোমধ্যে প্রকল্পটি শুরু করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার মঞ্জুরি পেয়েছেন তারা।

মহাকাশে কোনো বস্তু পাঠানো হলে তা যদি কক্ষচ্যুত না হয় বা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুড়ে না যায়, তবে সেখানে চিরকাল তা থেকে যাবে। মহাকাশে বর্জ্য সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চুম্বক পদ্ধতি থেকে শুরু করে নানা পদ্ধতিতে তা সরাতে কাজ শুরু করেছেন।

সেবার অ্যাস্ট্রোনাটিকস নামের একটি প্রতিষ্ঠান মহাকাশে পাল ব্যবহার করে বর্জ্য ধরে আনার জন্য নাসার অনুদান পেয়েছে। সিডনির ইলেকট্রো অপটিকস সিস্টেমে ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মিলে লেজার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যাতে বর্জ্যের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়ানো যায়। তবে বর্জ্য ধ্বংস করে না ফেলে তা রিসাইক্লিং করার বিষয়টি নতুন পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অ্যাস্টায়ার বলেন, ‘এটা এখনো ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি। তবে সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। অনেক মানুষ এখন মহাকাশ বর্জ্যে বিনিয়োগ করছে। বর্জ্য সংগ্রহ করে তা কাজে লাগানো গেলে ব্যবসার দৃষ্টিকোণ থেকে তা সম্ভাবনাময়। কারণ, সেখানে জ্বালানি পাঠাতে হচ্ছে না। এটা মহাকাশে গ্যাসস্টেশন তৈরির মতো বিষয়। ’

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।