কাবুল: আফগানিস্তানে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে এবার রেকর্ড সংখ্যক নারী প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। আফগানিস্তানের রাজনীতিতে যা অনেকটাই দুর্লভ।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটিতে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় এই বিপুল সংখ্যক নারীর অংশগ্রহণ আপাতদৃষ্টিতে আশাব্যঞ্জক মনে হলেও নারী নেত্রীদের মতে এসব নারী প্রার্থীরা মূলত পুতুল। ক্ষমতাসীনরা সংসদকে জমজমাট করতে নারীদের ব্যবহার করেছে।
আফগানিস্তানের বেসরকারি সংগঠন ইকুয়েলিটি ফর পিস অ্যান্ড ডেমোক্রেসির পরিচালক নারগিস নেহান বলেন, ‘এটা খুবই পরিস্কার অনেক নারী যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তারা শুধু তাদের স্বার্থে নির্বাচনে দৌড় ঝাপ করেননি। ক্ষমতাসীন এবং যুদ্ধবাজদের ইচ্ছার প্রকাশ ঘটাতে তারা নির্বাচনে নেমেছেন। ’
কাবুলের একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) আফগান উইমেন নেটওয়ার্কের সদস্য ওয়াজিম ফ্রোজ বলেন, ‘এসব প্রার্থীদের যুদ্ধবাজ এবং আঞ্চলিক নেতারা অর্থায়ন করেছেন। আমি জানি অনেক গ্রামবাসী ২০ ডলারের বিনিময়ে ভোট বিক্রি করেছেন। যে প্রার্থী এ অর্থ দিতে পেরেছেন তিনি ভোট পাবেন। কিন্তু যে সৎ প্রার্থী অর্থ দিতে পারেননি তিনি সংসদে যেতে পারবেন না। ’
ফ্রজ, নেহাল এবং তাদের মতো অন্যরা যদি ঠিক বলেন তবে এটা খুবই অস্বস্থিরই একটা বিষয়। যারা ওই নারী সদস্যদের সামনে রেখে আফগানিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন, তারা মূলত দেশকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করারই চেষ্টা করছেন। এসব ‘প্রক্সি’ প্রার্থিরা দেশে সমস্যার সৃষ্টি করবে। দেশের রাজনীতিকে অতীতের ধারায় নিয়ে যাবে।
তবে সব প্রার্থীই যে একই পথে হেটেছেন তারা তারা বলেননি। সামিরা হামিদ আফগান উইমেন নেটওয়ার্কের সদস্য। তিনি বলেন, ‘আমি জানি কিছু নারী প্রার্থী আছেন যাদের সঙ্গে কেউ নেই। কোন যুদ্ধবাজ নেই, মাফিয়া নেই, মাদক ব্যবসায়ী নেই। আমরা নির্বাচন কমিশন ও সাধারন মানুষের সঙ্গে খুব নিবির ভাবে কাজ করেছি। ওই প্রার্থীদের নামে কিছু শুনিনি। ’
তবে এই বিপুল সংখ্যক নারীর অংশগ্রহণকে নারী অধিকার আদায়ের অগ্রযাত্রা বলেই মনে করেন নেহান। তার মতে নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক নারীর অংশ গ্রহণ এটাই প্রমাণ করে যে আফগানিস্তানে রাজনৈতিক সচেতনাতা বাড়ছে।
তবে ফ্রজ বলেন, ‘এধরণের দুর্নীতি আফগান নির্বাচনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এই গণতন্ত্র সাধারণ জনগণের ভাষা নয়। এটা তাদের কাছে গুরুত্বাপূর্ণ নয়। এবারের নির্বাচন মূলত এটাই প্রতীয়মান করে যে, আফগানিস্তানে টাকার বিনিময়ে কিভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায়। ক্ষমতাসীনরা আবারও ক্ষমতায় আসাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। ’
নিহান বলেন, ‘যদিও আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার এখনও ক্ষমাতাসীন। এখন সবাই বুঝতে পেরেছে তারা শুধু একটি আসন না অনেক বেশি কিছু চেয়েছে। ’
২৪৯ আসনের মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ নারীদের জন্য বরাদ্দ। আর বিপরীতে ৩৮৬ জন প্রার্থী প্রতিযোগিতা সত্যিই বিস্ময়কর।
কাবুলের নারী সাংসদ সিনকাই কারোকাইল বলেন, ‘সমস্য হচ্ছে এসব ‘প্রক্সি’ প্রার্থীরা আফগানিস্তানের রাজনৈতিক দুর্নীতি বাড়াবে। তিনি দাবি করেন, তারা অন্যদের জন্য কাজ করছেন। আর অন্যরা তাদের পকেটের কথা ভাবছেন। সব ক্ষমতাসীনেরাই চায় রাজনীতিকদের ব্যবহার করে ফয়দা লুটতে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৪৫৩ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১০