ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেন যুদ্ধ পুতিনের অবস্থান কি দুর্বল করছে? 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২২
ইউক্রেন যুদ্ধ পুতিনের অবস্থান কি দুর্বল করছে? 

চলমান শান্তি আলোচনা সত্ত্বেও ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। ইউক্রেনের শহরগুলোতে একের পর এক আক্রমণে রাশিয়ার ওপর ‘চাপ বাড়ছে’।

এতে করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে দেশটি।  

রাশিয়ার ওপর শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে, এর মাধ্যমে ক্রেমলিনকে দুর্বল করতে চাইছে পশ্চিমারা। এই যুদ্ধের মধ্যে পর্যবেক্ষকরা প্রশ্ন তুলছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অবস্থান কি নড়বড়ে হচ্ছে? 

রুশ প্রেসিডেন্টের ওপর দেশটির আইনপ্রণেতাদের যে দৃঢ় সমর্থন রয়েছে, তা বোঝা যায় ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরুর আগে একটি ভোটের মাধ্যমে। ওই ভোটে ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া।
  
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, রুশ জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ দুমার ৪৫০ জন সদস্যের মধ্যে ৩৫১ জন পুতিনের অনুমোদন অনুযায়ী এই পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন। পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ তাকলেও ২০ বছরের বেশি সময় ধরে পুতিন ক্ষমতায়।  

পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা রুশ অর্থনীতিকে কঠোরভাবে আঘাত করছে। এতে করে পুতিনকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য একটি চাপ তৈরি হতে পারে।  

ইউক্রেনীয় সমাজবিজ্ঞানী ভলোদিমির ইশচেঙ্কো সোভিয়েত-পরবর্তী অঙ্গনে বিপ্লব নিয়ে গবেষণা করছেন। পর্যবেক্ষকদের ওই কথার সঙ্গে তিনি একমত নন। তিনি বলেন, পুতিনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থানে তাকে সরানো হবে—এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।   

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে দুটি বিপ্লব দেখেছে রাশিয়া। একটি ১৯০৪-০৫ সালে জাপান-রাশিয়ার যুদ্ধের পর ১৯০৫ সালে, অপরটি ১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়।  

সোভিয়েত পতনের পর নতুন স্বাধীন দেশ জর্জিয়া, আর্মেনিয়া ও মলদোভায় সরকার উৎখাত করতে বিদ্রোহ হয়েছিল। কিরগিজস্তানে তিনটি এবং ইউক্রেনে আরও তিনটি বিপ্লব সংঘটিত হয়।

গত দুই দশকের একটি বড় অংশ ইউক্রেনে ২০০৪ সালের অরেঞ্জ বিপ্লবের মতো তথাকথিত ‘রঙিন বিপ্লব’র বিরুদ্ধে নিজেকে প্রস্তুত করতে ব্যয় করেছেন পুতিন।  

সমাজবিজ্ঞানী ভলোদিমির ইশচেঙ্কো বলেন, প্রাসাদের অভ্যুত্থান এখন বিপ্লবের চেয়েও বেশি সম্ভাবনাময়। যদিও আমি নিশ্চিত নই যে, ইউক্রেনে বড় পরাজয়ের আগে পুতিনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য ‘অভিজাত ষড়যন্ত্র’ কার্যকর হবে কি না। শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রের শক্তির ভারসাম্য একটি অভ্যুত্থান বা বিপ্লবের সম্ভাবনা বা পুতিনের শাসন টিকে থাকার বিষয়টি নির্ধারণ করবে।

তিনি আরও বলেন, যদি গণঅভ্যুত্থান না হয়, তাহলে সম্ভবত পুতিনের অভ্যন্তরের বৃত্তের অলিগার্চ ও কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করতে পারেন।  

এর আগে ইউক্রেনের একটি গোয়েন্দা সংস্থা অভিযোগ করে, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বিষ প্রয়োগ বা অন্য কোনোভাবে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। শুধু তাই নয়, পুতিনকে সরিয়ে কাকে বসানো হবে, সে বিষয়টিও ভেবে রেখেছে তারা।

ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি মিররের এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ডিরেক্টরেটের এক সংক্ষিপ্ত বিবরণে তুলে ধরা হয় যে, রাশিয়ার সরকারি সংস্থা ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের (এফএসবি) পরিচালক ওলেকসান্দ্র বোর্তনিকভকে ভ্লাদিমির পুতিনের স্থলাভিষিক্ত করার জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে।  

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অধিদপ্তরের মতে, ‘রুশ অভিজাতদের’ একটি ‘প্রভাবশালী’ দল পুতিনকে উৎখাত করতে পরিকল্পনা করেছে। যত দ্রুত সম্ভব পুতিনকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং পশ্চিমাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ফিরিয়ে আনাই এই দলের লক্ষ্য।

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেটা নিয়ে এই দলটি হতাশা প্রকাশ করেছে। তারা এই অবস্থা থেকে বের হতে চাইছে বলে উল্লেখ করেছে গোয়েন্দা বিভাগ।  

ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, এফএসবি’র পরিচালক ওলেকসান্দ্র বোর্তনিকভকে ইতোমধ্যেই পুতিনের উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২২
জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।