ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

রাশিয়া-ইউক্রেন বৈঠক: তুরস্কে প্রথম দিনের আলোচনায় যা হলো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২২
রাশিয়া-ইউক্রেন বৈঠক: তুরস্কে প্রথম দিনের আলোচনায় যা হলো

ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা যে বৈঠক শুরু করেছিলেন, তাতে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত সাভাসগলু। মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের সদস্যদের আলোচনা শেষে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে দুই পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছেছে। যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে তারা একমত প্রকাশ করেছেন। এছাড়া আরো ‘গুরুতর’ বিষয়গুলো নিয়ে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আলোচনা করবেন।

তবে ইস্তাম্বুলে দ্বিতীয় ধাপের প্রথম দিনের বৈঠক শেষ হওয়ার পরপর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের আশপাশ ও উত্তরাঞ্চলীয় শহর চেরনিহিভে সেনা তৎপরতা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া।

দেশটির উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেক্সান্দার ফোমিন বলেন, যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে চলমান আলোচনায় আস্থা তৈরি এবং পরবর্তী সমঝোতার পথ তৈরির জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আলোচনা শেষে রাশিয়ার প্রধান আলোচক ভ্লাদিমির মেডিসঙ্কি বলেছেন, প্রথম দিনের আলোচনা ‘গঠনমূলক’ ছিল। দুইপক্ষের মধ্যে এই আলোচনা টানা কয়েকঘণ্টা চলে।

মেডিসঙ্কি বলেন, ইউক্রেনের পক্ষ থেকে পাওয়া প্রস্তাব এখন বিবেচনার জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে উপস্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, সংঘাত বন্ধে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চুক্তিতে সম্মত হলেই পুতিনের সঙ্গে জেলেনস্কির বৈঠকের সম্ভাব্যতা তৈরি হবে।

এদিন রাশিয়া ও ইউক্রেনের বৈঠক শুরুর আগে উভয় দেশের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। এ সময় তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উভয়কে তার ‘মূল্যবান বন্ধু’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

এরদোয়ান বলেন, এই আলোচনার অগ্রগতি দুই নেতার সাক্ষাতের সুযোগ তৈরি করবে। আর সেই আলোচনা আয়োজনের জন্যও তুরস্ক প্রস্তুত রয়েছে।

তিনি বলেন, আপনারা সবাই সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত আছেন। তারপরও বলছি, রাশিয়া-ইউক্রেন উত্তেজনা নিয়ে দুই দেশের সাধারণ মানুষ তো বটেই, আমরাও উদ্বিগ্ন। তবে আমাদের বিশ্বাস বর্তমানে যে উত্তেজনা চলছে, তা থামাতে উভয়পক্ষকে দায়িত্বশীল হতে হবে। একটি শান্তিচুক্তি এই ট্র্যাজেডির অবসান ঘটাতে পারে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এর পাঁচ দিন পর ১ মার্চ বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দর লুকাশেঙ্কোর আমন্ত্রণে দেশটির সীমান্তবর্তী শহর গোমেলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে শান্তি বৈঠক শুরু হয়।

তারপর থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফা আলোচনায় বসেছেন উভয় দেশের প্রতিনিধিরা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেসব বৈঠক থেকে কোনো কার্যকর ফলাফল আসেনি।

ইউক্রেনীয় মিডিয়ার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এদিন বৈঠক শুরুর আগে উভয় পক্ষকে বেশ শীতল মনে হয়েছে। এমনকি বৈঠকের আগে কোনো ধরনের করমর্দনও করেননি তারা।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে কোনো ধরনের আপস করতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনো প্রস্তুত নন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এদিন রাশিয়া ও ইউক্রেনের শান্তি আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন রুশ ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচ। তাকে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।

এর আগে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, শান্তি আলোচনার শুরুর দিকে মধ্যস্থতাকারী আব্রামোভিচকে বিষ প্রয়োগ করার অভিযোগ রয়েছে। মধ্যস্থতা করতে তিনি মস্কো ও কিয়েভে ঘন ঘন যাতায়াত করেছেন।

তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, আব্রামোভিচকে বিষ প্রয়োগের খবরটি সত্য নয়। এটিকে ‘তথ্যযুদ্ধের অংশ’।

এছাড়াও তুরস্কে বৈঠক শুরুর আগে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা জানান, তিনি ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলকে বলেছেন রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় খাবার বা পানীয় স্পর্শ না করার জন্য।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২২
এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।