ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

সাইপ্রাসে বেআইনীভাবে ডিম্বাণু কেনাবেচা

নুসরাত জাহান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১০
সাইপ্রাসে বেআইনীভাবে ডিম্বাণু কেনাবেচা

নিকোশিয়া: তার ‘সন্তানরা’ হয়তো কখনোই আলোর মুখ দেখবে না, তবুও তাদের আশা ছাড়েননি মারিয়া।

ভ্রুণ পাচারের সন্দেহে অভিযুক্ত সাইপ্রাসের একটি ফার্টিলিটি কিনিকের সব ডিম্বাণু জব্দ করার পর এখানে মা হতে আসা মারিয়ার মতো অনেক নারীর মধ্যেই এখন হতাশা বিরাজ করছে।



দক্ষিণ সাইপ্রাসে জেলেদের গ্রাম জাইগির কাছে পাথরের তৈরি একটি ভবন কিনিক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু মে মাসের মাঝামাঝি কিনিকটির সব রাশিয়ান কর্মী কাজ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ‘পেট্রা হাউস’ নামে পরিচিত ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।

মারিয়া বলেন, ‘কর্মীদের সবাই উধাও হয়ে গেছে এবং আমাদের ভ্রুণগুলোর ভাগ্যে কি আছে, তা একটি রহস্যের ব্যাপার। ’ তদন্তের স্বার্থে মারিয়া তার প্রকৃত প্রকাশ করেননি।

অন্যান্য বিদেশিদের মতো সন্তানের আশায় ইতালি থেকে সাইপ্রাসে চিকিৎসা নিতে আসা মারিয়া হতাশ কন্ঠে আরও বলেন, ‘জননকোষ ও ডিম্বাণু যারা খেলনার মতো ব্যবহার করে, এমন বিবেকহীন মানুষদের আমরা বিশ্বাস করতে পারি না। ’ জননকোষ বিষয়ে সম্পূর্ণ তথ্য দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই মূলত এ কিনিকটিকে তদন্তের আওতায় আনা হয়।

এধরনের প্রতিটি কিনিককে সুনির্দিষ্টভাবে ভ্রুণ ও জননকোষের তথ্য জানাতে হয় উল্লেখ করে মারিয়া ও অন্য তিন ইতালীয় রোগীর আইনজীবী ফিলোমেনা গ্যাল্লো বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘জাইগির এ কিনিকটি তথ্য দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এটি বন্ধ করা দেওয়া হয়েছে। ’

মূলত রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের তরুণীরা এখানে এসে তাদের ডিম্বাণু বিক্রি করে যায়। যেমন একজন নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি গত বছরের নভেম্বর ও মে মাসের মধ্যে সাতবার সাইপ্রাসের ওই গ্রামটিতে আসেন। এর মাধ্যমে নিঃসন্তান দম্পতিরা এই সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে এই কাজ ওই কিনিকটির কর্তৃপ বেআইনীভাবে করছিলো বলে ইউক্রেনের তিন নারীর কাছ থেকে জানা যায়।

অভিযুক্ত সবাই বৈধভাবে সাইপ্রাসে কাজ করলেও ডিম্বাণু বিক্রি দেশটির আইনের ভয়াবহ লঙ্ঘন বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে তারা তাদের জীবনযাত্রার ব্যয়ভার বহনের জন্য গোপনে এ কাজ করছেন বলেই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রতিটি ডিম্বাণুর জন্য একজন নারীকে ১৫০০ ইউরো দেওয়া হয় বলে সাইপ্রাসের গণমাধ্যম বলা হয়েছে। তবে এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে পুলিশ ।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ডিম্বাণু দান বা বিক্রির বিভিন্ন রকম নিয়ম থাকলেও দম্পতিরা নিজ নিজ দেশের আইন ফাঁকি দিয়ে ফার্টিলিটি চিকিৎসার জন্য সাইপ্রাসে আসেন।

বিশেষ করে, ইতালিতে ২০০৪ সালে এ বিষয়ে কঠোর আইন পাস হওয়ার পর এ দেশের অধিকাংশ নিঃসন্তান দম্পতিই ‘ফার্টিলিটি পর্যটন কেন্দ্র’ হিসেবে পরিচিত সাইপ্রাসে আসতে থাকেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ জানান, তুলনামূলক কম ব্যয় এবং দাতার নাম গোপন থাকার কারণে চিকিৎসাপ্রার্থীরা এ দ্বীপটিতে আসতে উৎসাহ বোধ করেন।

এ বিষয়ে প্যারিসের আইএনএসইআরএম নামের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক জ্যাক টেস্টার্ট বলেন, ‘ইউরোপ জুড়ে পাচারের বিভিন্ন গুজব শোনা গেলেও তা প্রমাণ করা কঠিন। তাছাড়া বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটে এমন অনেক নারীই আছেন যারা বাড়তি কিছু অর্থ আয় করতে চান। ’

বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।