ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ঘুরিয়ে দিতে আত্মবিশ্বাসী রণিল বিক্রমাসিংহে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২২
শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ঘুরিয়ে দিতে আত্মবিশ্বাসী রণিল বিক্রমাসিংহে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে

অর্থনৈতিক সঙ্কটে বিধ্বস্ত শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ঘুরিয়ে দিতে পারেন বলে জানিয়েছেন দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে। এ ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বনের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া দীর্ঘ এক সাক্ষাতকারে নিজের আত্মবিশ্বাসের কথা জানান রণিল। তিনি বলেন, আমি দেশের অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দিতে পারব। এ ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী। এ ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে আরও ১৮ মাস সময় লাগতে পারে বলে এ সময় উল্লেখ করেন তিনি। আরও বলেন, আসছে ২০২৩ সাল আমাদের জন্য কঠিন হতে চলেছে। তবে, ২০২৪ সালের মধ্যে সমস্যাগুলো সমাধানে আসা উচিৎ।

সম্প্রতি রাজধানীয় কলম্বোয় সরকারি বাসভবনে বসে আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে ৭৩ বছর বয়সী রণিল বলেন, দেশে বর্তমান পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। গত কয়েকমাসে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমি সরকারে এসেছি।

গত মে মাসে ষষ্ঠবারের মতো শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন রণিল বিক্রমাসিংহে। তিনি বলেন, আমাদের দেশ দুদিন সরকার ছাড়া ছিল। সবকিছুই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছিল। জ্বালানি ও বিদ্যুতের ঘাটতির জন্য গণবিক্ষোভের কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে মাহিন্দা রাজাপক্ষেকে পদত্যাগ করতে হয়। আমি তখন ভাবছিলাম, পরিস্থিতি খারাপ; কিন্তু এটা আমার দেশ। আমি সফল হবো কিনা জানি না। কিন্তু দায়িত্ব আমাকে নিতেই হবে, কাজ করে যেতে হবে। আমি আত্মবিশ্বাসী, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আমি ঘুরিয়ে দিতে পারব।

বর্তমানে লঙ্কান পরিস্থিতি এতটাই নাজুক; দেশটির কাছে পুরোপুরি একদিন চলার মতো জ্বালানি শক্তির মজুত নেই। বন্ধ হয়ে গেছে গণপরিবহন। বিভিন্ন জায়গায় পেট্রল ও ডিজেলের জন্য দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। শ্রীলঙ্কার জ্বালানিমন্ত্রী কাঞ্চনা উইজেসেকেরা জানিয়েছেন, দেশে প্রায় ৪ হাজার টন পেট্রল মজুত আছে। আজ ব্যবহার হলে কাল কী হবে, তা নিয়ে শঙ্কা করছেন তারা।

এ অবস্থায় আগামী ২২ এবং ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে দেশটিতে পেট্রলের চালান যেতে পারে। জ্বালানির জন্য অন্যান্য সরবরাহকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। কিন্তু নতুন করে কোনো সরবরাহ হবে কিনা, নিশ্চিত নয়।

শুধু যে জ্বালানি, তা নয়। শ্রীলঙ্কায় খাদ্য পণ্য, নিত্য পণ্যেও অভাব দেখা গেছে। কৃষি প্রধান হিসেবে পরিচিত দেশটিতে প্রয়োজনীয় উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। রিজার্ভ তো নেই-ই, যে কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটান যাচ্ছে না। ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্কুলসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

রণিল বলেন, আমরা ভারতীয় ক্রেডিট লাইন থেকে যে বৈদেশিক মুদ্রা পাচ্ছি, তা দিয়েই জ্বালানি কিনছি। এর পরিমাণ কম; তাই আমরা ঋণদাতাদের কাছ থেকে যা পেয়েছি তাও ব্যবহার করছি।

খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রায় ৬০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বলে জানান লঙ্কান প্রধানমন্ত্রী। গত মার্চে শ্রীলঙ্কান রুপির ৮০ শতাংশের বেশি জনগণের ক্রয়ক্ষমতাকে হ্রাস করেছে। রণিল বলেন, এটি অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা। আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি; কিন্তু কিছুটা সময় প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য আলোচনা চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে। তিনি বলেন, আমরা কর্মী পর্যায়ে আইএমএফের সঙ্গে একটি চুক্তিতে এসেছি, যা অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য প্রয়োজন। চলতি সপ্তাহে এ ব্যাপারে পার্লামেন্টে আলোচনা করবেন বলেও তিনি জানান।

এ সময়, তার সরকার একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট আনার পরিকল্পনা করছে বলেও জানান রণিল। সম্ভবত আগস্টে এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হবে।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণের বিক্ষোভের সমর্থনও করেন লঙ্কান সরকার প্রধান। গত এপ্রিল থেকে লাগাতার বিক্ষোভ চলছে দেশটিতে। করোনা মহামারি, জাতীয় অর্থনীতি পরিচালনায় সরকারের অদক্ষতা, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত তলানিতে নেমে যাওয়ার কারণ হিসেবে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে ও তার ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষেকে দোষারোপ করে জনগণ। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মাহিন্দা ক্ষমতা ছাড়লেও গদিতে অনড় রাজাপক্ষে।

রণিল বলেন, আমি মনে করি না বিক্ষোভকারীরা খুব বেশি কিছু দাবি করছে। তারা শুধু একটি পরিবর্তন চায়। এটি কেবল নির্বাহী নেতৃত্ব বিলুপ্ত করার বিষয়ে নয়। গোতাবায়াকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, আপনার হাতে যদি কিছুই না থাকে; আপনি কীভাবে সংসদকে শক্তিশালী করবেন?

দেশের লোকজন না খেয়ে থাকছে। ফলে তাদের শরীরে পুষ্টির মান কমে। এ অবস্থায় সরকার একটি খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি তৈরি করেছে। রণিল বলেন, আমরা আমাদের ৫৬০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করার পরিকল্পনা করছি। ইতোমধ্যে এ অর্থ আলাদা করা হয়েছে। আমি আশা করি, যে খাদ্য কর্মসূচির পরিকল্পনা করছি তা এ অর্থে যথেষ্ট হবে। আমি চাই না কেউ না খেয়ে থাকুক। কলম্বো শহরে কিছু কমিউনিটি রান্নাঘর তৈরি করা হয়েছে। এটি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি যাতে কেউ অভুক্ত না থাকে।

ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে আগামী বছর থেকে বিশ্বব্যাপী খাদ্য শঙ্কটের আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যেই শ্রীলঙ্কাকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ছয়বারের এ লঙ্কান প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের নভেম্বর চলতি বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমাদের দেশে চাষের মৌসুম ব্যর্থ হয়ে পড়েছিল শুধুমাত্র সারের অভাবে। গত জুন থেকে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৌসুমকেও এটি প্রভাবিত করতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা পর্যাপ্ত তহবিল পেতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি যাতে অক্টোবর-নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া মৌসুমে চাষাবাদ করতে পারি। আমাদের প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। আমরা প্রয়োজনীয় সার, বীজ ও অন্যান্য রাসায়নিক পাই, তাহলে ২০২৩ সাল থেকে শ্রীলঙ্কা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, ৫ জুলাই, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।