ফরিদপুর: বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির (বিসিডিএস) ফরিদপুর জেলা শাখার সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নাজমুল হোসেন লোচনের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিসিডিএসের কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক ও ফরিদপুর জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. মাজহারুল আলম চঞ্চলের সভাপতিত্বে শনিবার (০৩ ডিসেম্বর) দুপুরে শহরের ঝিলটুলীতে একটি কমিউনিটি সেন্টারে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সেখানে এ অভিযোগ এনে এই টাকা ফেরতের দাবি জানান সমিতির সদস্যরা।
সভায় ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতাল ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বিসিডিএসের জেলা শাখার কার্যকরি সদস্য কবির হোসেন রনি বলেন, ৪০ বছর যাবৎ বিসিডিএসের ফরিদপুর জেলা শাখা রয়েছে। গত ২০১৯ সালে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এরপর গোপনে ঢাকা থেকে একটি কমিটি পাশ করিয়ে আনা হয় যা সদস্যরাও জানতেন না। দীর্ঘদিন যাবত সংগঠনকে জিম্মি করে রেখেছিলেন অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নাজমুল হোসেন লোচন। তিনি পদ ভাঙ্গিয়ে টেন্ডারবাজি করেছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ফরিদপুরে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সমিতিতে সদস্যভুক্তির জন্য ১০ হাজার টাকা, জরিমানা ও অন্যান্য ফি বাবদ স্লিপে টাকা নেওয়া হয়েছে। প্রতিমাসে সদস্য ফি বাবদ ১০০ টাকা, ১২ হাজার ২শ ফার্মাসিস্টের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। এছাগা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ওষুধ ব্যবসায়ীদের নানা সমস্যাকে পুঁজি করে টাকা আদায়সহ লাখ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। এর কোন হিসাব নেই। ১ কোটি ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকার সন্ধান মিলেছে, যেই টাকার কোন হিসাব অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নাজমুল হোসেন লোচন দিতে পারছেন না। এর বাইরেও আরো অনেক টাকা রয়েছে যার কোন হিসাব নেই। এসব টাকা তাকে ফেরত দিতে হবে।
সমিতির জেলা শাখার সদস্য ওষুধ ব্যবসায়ী চৌধুরী কামরুল হাসান বলেন, বিসিডিএসের কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন ছাড়া লোকাল কোন কমিটি স্লিপে চাঁদা তুলতে পারে না। কিন্তু নাজমুল হোসেন লোচন সেই নিয়ম লঙ্ঘন করে টাকা তুলেছেন। তিনি আমাদের জানিয়েছিলেন ন্যাশনাল ব্যাংকে তিনি সমিতির হিসাব খুলেছেন। কিন্তু আমরা ওই ব্যাংকে কোন হিসাব পাইনি। তিনি হিসাব খুলেছিলেন প্রিমিয়ার ব্যাংকে। যেই ব্যাংক থেকে তিনি নিজেই টাকা তুলে নিয়েছেন কাউকে না জানিয়ে।
তিনি আরো বলেন, সারাদেশের ৩৭টি জেলায় বিসিডিএসের ৩৭টি ভবন নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু ফরিদপুরে আজ পর্যন্ত ভবন নির্মাণ হয়নি। ফরিদপুরে সমিতির ভবন করার নামে ৪৭ লাখ টাকা কেন্দ্রীয় অফিসে জমা রয়েছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি এই টাকা তুলে নিয়েছেন। সমিতির অফিসের নামে ঘর ভাড়া নেওয়া হলেও তিনি তার ওষুধের দোকানে সমিতির কার্যক্রম চালিয়েছেন। ওষুধ ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কোন পদক্ষেপ নেননি। কোন থানা পর্যায়ে শহর পর্যায়ে কোন কমিটি গঠন হয়নি। তিনি এতোদিন সমিতির নামে ভয়ংকর দুর্নীতি করেছেন।
আরেক ওষুধ ব্যবসায়ী নেতা ওহিদুল ইসলাম বাবু বলেন, এতোদিন কেন্দ্রে তার নিজস্ব লোক থাকায় আমরা তার এসব অন্যায় ও দুর্নীতির কোন প্রতিবাদ করতে পারিনি। আমরা নাজমুল হোসেন লোচনের বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছিলাম, কিন্তু বিষয়টি তিনি জানতে পেরে নিজেই অব্যাহতি নিয়েছেন। সমিতির যে টাকা আত্মসাত করেছেন তিনি, তা ফেরত না দিলে তার বিরুদ্ধে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করব।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ডা. নাদিম হোসেন, খন্দকার বদিউজ্জামান পলাশ, মো. গোলাম কিবরিয়া বিশ্বাস, মো. জাহিদুল ইসলাম, মো. ইলিয়াস হোসেন, এজেডএম তানভীর হোসেন, সৈয়দ মাজেদ আলী, মো. তৌহিদুল ইসলাম তুহিন, মো. হারুন অর রশীদ, মোঃ মোকাররম মিয়া, বাবু ভোলানাথ সাহা প্রমূখ।
সভায় জেলা ও সকল উপজেলার ওষুধ ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। সভায় সকল সদস্যদের সম্মতিতে বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে গণতান্ত্রিক পন্থায় নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। নতুন কমিটি গঠনে বিসিডিএসের কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক ও ফরিদপুর জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. মাজহারুল আলম চঞ্চলের উপর দায়িত্ব প্রদান করেন সদস্যবৃন্দ।
এব্যাপারে বিসিডিএসের ফরিদপুর জেলা শাখার অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নাজমুল হোসেন লোচনের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি সমিতির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, কেন্দ্রের নিয়ম মেনেই স্লিপে টাকা তোলা হয়েছে। খরচের পর সব টাকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। সমিতির পদ থেকে ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি।
এছাড়া অন্যান্য অভিযোগগুলোও সঠিক নয় বলে তিনি জানান।