ঢাকা: বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে বাংলাদেশ-আর্জেন্টিনার কূটনৈতিক সম্পর্কে বইছে সুবাতাস। ফুটবল কূটনীতির সূত্র ধরে বাংলাদেশে মিশন খোলার আগ্রহ প্রকাশ করেছে আর্জেন্টিনা।
বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার যে লাখো লাখো ভক্ত বা সমর্থক রয়েছে, সেটা আর আর্জেন্টিনার নাগরিকদেরও অজানা নেই। বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা চলাকালে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন লিওনেল মেসির হাতে ভার্চ্যুয়ালি বাংলাদেশের পতাকা দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। বাংলাদেশি ভক্তদের আর্জেন্টিনার পতাকা হাতে মিছিলেরও বেশ কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। একই সঙ্গে কাতারে আর্জেন্টিনার নাগরিক যারা খেলা দেখতে গিয়েছেন তারাও অনেকে বাংলাদেশি ভক্তদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আর্জেন্টিনার বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও দোকানেও বাংলাদেশের পতাকা বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ-আর্জেন্টিনার মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্ব থাকলেও বিশ্বকাপ ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মানুষের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসাও প্রকাশ পেয়েছে। আর্জেন্টিনার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার বিষয়টি এখন দেশটির বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শোতে আলোচনা হচ্ছে।
তবে এত কিছু সত্ত্বেও বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার কোনো দূতাবাস বা কনস্যুলেট অফিস নেই। দিল্লির আর্জেন্টিনার দূতাবাস থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটি সম্পর্ক বজায় রাখে। একই ভাবে আর্জেন্টিনায়ও কোনো বাংলাদেশের দূতাবাস বা কনস্যুলেট অফিস নেই। ব্রাজিলের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আর্জেন্টিনার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করা হয়।
ঢাকায় আর্জেন্টিনার ফুটবল ম্যাচ দেখার একটি চিত্র
এক সময়ে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার একটি কূটনৈতিক মিশন ছিল। তবে ১৯৭৮ সালে মিশনটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে দিল্লির আর্জেন্টিনার দূতাবাস থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে দেশটি। আর ১৯৯২ সালে সরকারি ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে আর্জেন্টিনায় বাংলাদেশের দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ফুটবল বিশ্বকাপ চলার মাঝেই আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো ক্যাফিয়েরো জানিয়েছেন, আর্জেন্টিনা বাংলাদেশে পুনরায় দূতাবাস খোলার প্রকল্প নিয়েছে, যেটা ১৯৭৮ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, চলতি বছরের আগস্টে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধ চুক্তির পক্ষে ১০ম পর্যালোচনা সম্মেলনে আমার সহকর্মী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছি।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, খেলা কীভাবে দুই দেশকে এত কাছাকাছি আনতে পারে, সেটা বাংলাদেশ-আর্জেন্টিনা একটি উদাহরণ। বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা যে মিশন খোলার উদ্যোগ নিয়েছে, আমরা তাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
এদিকে ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুন্নেসা, যিনি আর্জেন্টিনারও অনাবাসী বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেছেন, আমরা মেসিকে বাংলাদেশে নিয়ে এসে একটি ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করতে চাই। মেসি বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশের মানুষ আর্জেন্টিনা ও মেসিকে ভালোবাসে। তিনি বাংলাদেশে এলে আমরা সম্মানিত বোধ করবো।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে এসেছিলেন লিওনেল মেসি। সে সময় নাইজেরিয়ার সঙ্গে একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচে খেলেছিলেন তিনি।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনায় কূটনৈতিক মিশন না থাকলেও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য থেমে নেই। ২০২১ সালে আর্জেন্টিনা থেকে ৮৭৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। আর্জেন্টিনা থেকে বাংলাদেশ মূলত ভোজ্যতেল, তেল বীজ ও শস্য আমদানি করে থাকে। বিপরীতে বাংলাদেশও আর্জেন্টিনায় তৈরি পোশাক, জুতা, খেলনা ইত্যাদি রপ্তানি করে থাকে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে আর্জেন্টিনায় ৬৮ লাখ ৫৪ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে।
এদিকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আর্জেন্টিনার বিখ্যাত লেখিকা ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। তার কথা ভোলেনি বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ দেওয়া হয় তাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২২
টিআর/এমজেএফ