ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সৈয়দপুর হানাদার মুক্ত দিবস আজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২২
সৈয়দপুর হানাদার মুক্ত দিবস আজ

নীলফামারী: আজ ১৮ ডিসেম্বর। নীলফামারীর সৈয়দপুর হানাদার মুক্ত দিবস।

 

স্বাধীনতার নয় মাসে সৈয়দপুর উপজেলা সদরকে ‘নিউ বিহার’ হিসেবে ঘোষণা দেয় অবাঙালিরা।  

অবাঙালি অধ্যুষিত সৈয়দপুরে সেনানিবাস থাকার সুবাদে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে অবাঙালিদের মধুর সর্ম্পক গড়ে ওঠে। পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তায় এক শ্রেণির অবাঙালি সৈয়দপুর শহর ছাড়াও জেলার প্রতিটি উপজেলায় প্রচুর লুটতরাজ ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। যার স্মৃতি সৈয়দপুরে এখনো বিদ্যমান।

৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স মাঠে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোটা এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ডা. জিকরুল হকের নেতৃত্বে গোটা সৈয়দপুরে সমগ্র বাঙালি এক কাতারে শামিল হয়। তবে সৈয়দপুর সেনানিবাসের প্ররোচনায় কতিপয় অবাঙালি প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে গোটা শহরে তাণ্ডব চালায়।

২৩ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাদের প্ররোচনায় অবাঙালিরা বাঙালি পরিবারদের ওপর হামলা চালিয়ে লাখ লাখ টাকার সম্পদ লুটসহ নারী নির্যাতন, অগ্নি সংযোগ করে। গোলাহাট এলাকায় অবাঙালিদের হাতে আহত হন কয়েকশ মানুষ।  

এ ঘটনায় গোটা এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হলে নীলফামারী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর জেলার খানসামা, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর এলাকার হাজার হাজার মানুষ চরম ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং সৈয়দপুর শহর ঘেরাও করার উদ্যোগ নেয়। ফলে বাঙালি ও অবাঙালিদের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া শুরু হয়।  

সৈয়দপুর শহরের বাঙালিদের উদ্ধারে অস্ত্রহাতে এগিয়ে আসেন চিরিরবন্দর উপজেলার আলোকডিহি ইউপি চেয়ারম্যান মাহাতাব বেগ। অবাঙালি ও পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে প্রচণ্ড গোলাগুলির এক পর্যায়ে তিনি গুলিবিন্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে শহীদ হন। মূলত তিনিই সৈয়দপুরের প্রথম শহীদ।

২৪ মার্চ প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ডা. জিকরুল হক, তুলসীরাম আগরওয়ালা, ডা. সামছুল হক, ডা. বদিউজ্জামান, ডা. ইয়াকুব আলী, যমুনা প্রসাদ কেডিয়া, রামেশ্বরলাল আগরওয়ালা, নারায়ণ প্রসাদসহ আরও অনেককে নিয়ে সৈয়দপুর সেনানিবাসে হাত পা বেঁধে রাখা হয় এবং ১২ এপ্রিল তাদের চোখ-মুখ বেঁধে রংপুর সেনানীবাসের উত্তর পার্শ্বে উপশহরে সারিবদ্ধভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়।  

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার পদস্থ কর্মচারীদের বাড়ি থেকে ডেকে এনে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পাকসেনা ও তাদের অবাঙালি দোসরদের হাতে নিহত হন অসংখ্য রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, চাকুরে ও সাধারণ মানুষ।

১৯৭১ সালের ১৩ জুন মুক্তিযুদ্ধকালীন সৈয়দপুর শহরে সবচেয়ে বড় গণহত্যা সংঘঠিত হয়। এ দিন শহরের ৪৩৮ জন মাড়োয়ারী পরিবারের সদস্যকে ভারতের হলদিবাড়ি সীমান্তে পৌঁছে দেয়ার নামে ট্রেনে তুলে রেলওয়ে কারখানার উত্তর পার্শ্বে নিয়ে সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করে লুটে নেয়া হয় তাদের সর্বস্ব। শিশুদের বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়।  

অবশেষে ১৮ ডিসেম্বর ভারতের হীম কুমারী ক্যাম্প থেকে মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনী যৌথভাবে প্রবেশ করে সৈয়দপুর আক্রমণ করলে অবাঙালি ও পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এদিনই সৈয়দপুর হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়। এই বিজয়ে মুক্তি পাগল হাজার হাজার মানুষ গ্রাম থেকে শহরে প্রবেশ করে।  

এদিন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম কাজী ওমর আলী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে শহরে আনন্দ মিছিল হয় এবং নেতৃবৃন্দ প্রথম সৈয়দপুর পৌরসভা কার্যালয়ে ও আওয়ামী লীগ অফিসে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২২
এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।