ঢাকা: আধিপত্য বিস্তার, চিংড়িঘের দখল ও আন্তঃকোন্দলের কারণে ডাকাতির নাটক সাজিয়ে হত্যা। এরপর ঘটনাটিকে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা হিসেবে প্রচার করে বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন খোদ পরিকল্পনাকারী।
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল এলাকায় মোহাম্মদ হোসেন নামে এক চিংড়ি ব্যবসায়ী গুলি করে হত্যার ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারীসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তারের এ তথ্য জানায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)
গত ৯ জানুয়ারি রাতে চকরিয়ার রামপুরা চিংড়িঘের এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীর গুলিতে মোহাম্মদ হোসেন নিহত হন। এ ঘটনায় তার ছেলে ছেলে বাদি হয়ে চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
নির্বাচন পরবর্তী সময়ে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানো হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গ্রেপ্তাররা হলেন- হত্যাকাণ্ডের মূলপরিকল্পনাকারী শহিদুল ইসলাম লিটন (৪৫), আবু জাফর (৫০), মো. সোহেল (৩৭), আজগর আলী (৪৫), আবুল হোসেন পাখী (৩৫), নাজমুল হোসাইন রকি (২৭), আবদুর রহিম (৪৮), জয়নাল আবেদীন (৫৫), শাহিন (২৩), মুহাম্মদ শাহাব উদ্দিন (৪৪), প্রদীপ কুমার শীল (৪৮), মো. রিদুয়ান (৩১), আবদুল হক (৫৫) ও মো. কাইছার (৩৫)।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান বাহিনীর লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, চকরিয়ায় রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির সভাপতি হিসেবে গ্রেপ্তার আবু জাফর ও সেক্রেটারি হিসেবে শহিদুল ইসলাম লিটন দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গুলিতে নিহত মোহাম্মদ হোসেন সমিতির সদস্য হিসেবে ৭ বছর ধরে চিংড়িঘের এলাকার ৪৮ একর জমির মধ্যে খামার-ঘর তৈরি করে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন, পাশাপাশি চিংড়িঘের পাহারার দায়িত্বেও নিয়োজিত ছিলেন।
সমিতিটিতে প্রায় ৬০০-৭০০ জন্য সদস্য রয়েছে। সমিতির মালিকানাধীন সাহার বিলের রামপুর মৌজায় ৫ হাজার ১১২ একরের বিশাল একটি চিংড়িঘের রয়েছে। এর মধ্যে কিছু চিংড়িঘের সমিতির নিয়ন্ত্রণে ছিল না। সেগুলো দখলে নিতে গত ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর থেকে লিটনের নেতৃত্বে প্রায় অর্ধশতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সশস্ত্র মহড়া দিতে থাকে এবং ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে কয়েকশ রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেপ্তার আবু জাফর ও লিটন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হিসেবে গ্রেপ্তার সোহেল, আজগর আলী, আবুল হোসেন পাখী, নাজমুল হোসাইন রকি ও আবদুর রহিমকে গুলির দায়িত্ব দেন। ৯ জানুয়ারি সকালে লিটনের নির্দেশে ফোন করে কৌশলে মোহাম্মদ হোসেনকে চিংড়িঘের এলাকায় ডেকে নিয়ে আসা হয়।
একপর্যায়ে সেখান থেকে মোহাম্মদ হোসেন দুপুরের পর বাড়ি ফিরতে চাইলে লিটন ও তার সহযোগীরা রাতে মিটিং আছে জানিয়ে তাকে ফাঁকা জায়গার একটি ঘরে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালায়। ৯ জানুয়ারি রাতে মোহাম্মদ হোসেনকে পাশের লবণ চাষের খালি জমিতে নিয়ে গিয়ে লিটন তার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সোহেল ও তার সহযোগীদের মাধ্যমে ডাকাতির নাটক সাজিয়ে একনলা বন্দুক দিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
মইন বলেন, ভিকটিমকে হত্যার পর গ্রেপ্তাররা ঘটনাটি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগম্যাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মিথ্যা প্রচার-প্রচারণা চালায় ও হত্যাকারীদের বিচারের জন্য আন্দোলন করতে থাকে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আধিপত্য বিস্তার, চিংড়িঘের দখল ও আন্তঃকোন্দলের কারণে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হত্যার বিষয়টি এলাকায় জানাজানি ও জড়িতদের নাম প্রকাশিত হলে গ্রেপ্তাররা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে চলে যায়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার শহিদুল ইসলাম লিটন চিংড়ি ঘেরে নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য এলাকায় ৩০-৩৫ জনের একটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী দল গঠন করে। তারা অবৈধভাবে জমি দখল, হুমকি, মারামারি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, অপহরণসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তার বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় দস্যুতা, মারামারি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, অপহরণসহ সাতটির বেশি মামলা রয়েছে।
সোহেল, আজগর আলী, আবুল হোসেন পাখী, নাজমুল হোসাইন রকি ও আবদুর রহিম অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হিসেবে লিটনের নির্দেশে মোহাম্মদ হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে। সোহেলের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় হত্যা, অপহরণ, নারী নির্যাতন, মারামারিসহ সাতটির বেশি মামলা রয়েছে। আবুল হোসেনের নামে চকরিয়া থানায় হত্যা, মারামারিসহ চারটি ও রহিমের নামে একটি মারামারির মামলা রয়েছে।
এছাড়া, গ্রেপ্তার অন্যান্যরা আবু জাফর ও লিটনের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিল। তাদের বিরুদ্ধেও কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৪
পিএম/এমজে