ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মেঘনায় দুই মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ, জেলেদের যত অভিযোগ

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৪
মেঘনায় দুই মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ, জেলেদের যত অভিযোগ

চাঁদপুর: ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে জাটকা রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল এ দুই মাস চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে সরকার। বিকল্প কাজ না থাকায় জেলার ৪৩ হাজার জেলে এ সময়ে কর্মহীন হতে যাচ্ছেন।

জেলেদের অভিযোগ, তারা নিষিদ্ধ সময়ে জাটকা আহরণে বিরত থাকলেও অন্য সময়ে নৌ-পুলিশ ও অসাধু মৎস্য কর্মকর্তারা তাদের হয়রানি করেন। সরকারি খাদ্য সহায়তাও পান কম। তবে মৎস্য বিভাগ ও নৌ পুলিশ বলছে- হয়রানির অভিযোগ পেলে বিভাগীয় ও আইন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সদর উপজেলা তরপুরচন্ডী ইউনিয়নের আনন্দ বাজার জেলে পল্লীর জেলেদের সঙ্গে কথা হয় তাদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। এর মধ্যে অধিকাংশ জেলেই নৌ পুলিশের হয়রানি ও টাকা নেওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দুই মাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞায় তাদের নৌকা ও জাল ডাঙায় উঠিয়ে রাখার কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।

আনন্দ বাজার এলাকার জেলে শাহজালাল দেওয়ান প্রায় ৪০ বছর মাছ ধরার পেশায় আছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে নৌ পুলিশকে টাকা না দিলে নদীতে নামা যায় না। টাকা না দিলে তারা মামলা দিয়ে চালান দেয় এবং হয়রানি করে। আমরা নিষিদ্ধ সময় জাটকা ধরি না। কিন্তু সরকার যে ৪০ কেজি করে চাল দেয়, তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে না।

একই এলাকার জেলে মো. হৃদয় বলেন, নদীতে এখন মাছ কম। আবার নামলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানি। গত দুদিন কোনো মাছ পাইনি। রোজগার না হলে সংসার চলে না। চাল কেনার টাকা নেই। এ কারণে নদীতে নামতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমাদের ভিজিএফের চাল দেওয়া হয় না।

সদরের লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের সাখুয়া জেলে পল্লী এলাকার জেলে ইসমাইল বলেন, জাটকা ধরা থেকে আমরা তো বিরতই থাকি। কিন্তু আমাদের সংসার চলে না। কারণ যে পরিমাণ চাল দেয়, তাতে সংসার চলে না। আমাদের ঋণ আছে। নিষিদ্ধ সময়ে সরকার আমাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করলে সন্তানদের নিয়ে চলতে পারতাম।

একই এলাকার আরেক জেলে রহমান বলেন, আগে নদীতে মাছ ধরার জন্য কোনো টাকা দিতে হয়নি। কিন্তু এখন প্রতি নৌকায় মাছ ধরার জন্য মাসে নৌ পুলিশকে ১৯ হাজার ২০হাজার টাকা দিতে হয়। তাদের প্রতিমাসে টাকা না দিলে আমাদের জেলে দেয়। আমরা এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি কামনা করছি।

চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, আগামী দুই মাস জাটকা রক্ষায় অভয়াশ্রম বাস্তবায়নে নৌ পুলিশ কঠোর অবস্থানে থাকবে। আমাদের সেই প্রস্তুতি আছে। কোন নৌ পুলিশ সদস্য কিংবা পুলিশের নাম করে কোনো দালাল জেলেদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে- এমন প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. তানজিমুল ইসলাম জানান, মৎস্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জেলেরা যে অভিযোগ করেছেন, এমন অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। যদি কোনো মৎস্য কর্মকর্তা জড়িত থাকেন, তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ ও তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস জেলার মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার জাটকা রক্ষায় অভয়াশ্রম বাস্তবায়ন করা হবে। আইন অমান্য করে কোনো জেলে মাছ আহরণ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে নদী উপকূলীয় ইউনিয়নে জেলেদের খাদ্য সহায়তা চাল বিতরণ শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৭
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।