ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে স্থবির ফরিদপুর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২৪
হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে স্থবির ফরিদপুর

ফরিদপুর: ফরিদপুরে আন্দোলনকারীদের দিনব্যাপী হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে স্থবির হয়ে পড়ে জনজীবন।  আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে শহরের দোকানপাটসহ সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়।

এ সময় আন্দোলনকারীরা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স, পুলিশ বক্স, জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কার্যালয়ে আগুন দিয়েছেন।  বিক্ষোভকারীরা শহরের ৩০-৩৫টি ১৫ আগস্টের শোক দিবস উপলক্ষে নেতাকর্মীদের বানানো তোরণ ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

রোববার (০৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত শহরের গোয়ালচামট মডেল মসজিদ সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স, ভাঙ্গা রাস্তার মোড় ও জনতার মোড়ে পুলিশ বক্স, রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, হাসিবুল হাসান লাভলু সড়কে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র-ছাত্রী সংসদের ভবনে জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয় ও থানা রোডের পৌর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা ও আগুন দিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ পরিণত করে বিক্ষোভকারীরা।

ঘটনাস্থল ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টার দিকে অসহযোগ আন্দোলনে বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত শিক্ষার্থী, যুবক ও বয়স্ক নারী-পুরুষ যুক্ত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা শহরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের সামনে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে সমবেত হয়। পরে ওই মিছিলে বিভিন্ন জায়গা থেকে পেশার লোকজন যুক্ত হওয়ায় বিক্ষোভটি বিশাল আকার ধারণ করে। মিছিলের লোক সমাগম দেখে পুলিশ কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।  

এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় মিছিলটি লাভলু সড়কের সামনে এসে বিক্ষুব্ধরা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় কার্যালয়ের বাইরে থাকা প্রায় ২০টি মোটরসাইকেলও জ্বালিয়ে দেয় তারা। পরে মিছিলটি ঝিলটুলী এলাকায় সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সামনে ছাত্র-ছাত্রী সংসদ ভবন রুকসুতে হামলা চালিয়ে জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। মিছিলকারীরা ফরিদপুর কোর্ট চত্বরের দিকে আগাতে থাকলে পুলিশ রাজেন্দ্র কলেজ ও জেলখানার মোড়ে বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এরপর আন্দোলনকারীরা ওই জায়গা থেকে ফিরে থানা রোডের ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার সামনে গিয়ে ইট ছুঁড়ে। পুনরায় পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এদিন দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনকারীরা দ্বিতীয় দফায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালাতে গেলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়। সেখানে থেকে আন্দোলনকারীরা ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করে আগুন দেয়। সেখান থেকে ফিরে গোয়ালচামট মডেল মসজিদ সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স ভাঙচুর করে আগুন দিলে বিকেল সাড়ে ৫টায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা খবর পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এছাড়া শহরের ৩০-৩৫টি শোক দিবস উপলক্ষে নেতাকর্মীদের বানানো তোরণ ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি যুবক, বয়স্ক মা ও বাবা তাদের ছেলে মেয়েকে নিয়ে এ আন্দোলনে অংশ নেয়। বিক্ষোভকারীদের হাতে বাঁশের লাঠি ও লোহার রডসহ ইটপাটকেল দেখা যায়।

এদিকে এ সংঘর্ষ হামলা ও ভাঙচুরের কারণে শহরে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে আসে। ব্যাংকগুলোতে কোনো লেনদেন হয়নি। এমনকি এটিএম বুথ থেকে গ্রাহকরা টাকা তুলতে পারেনি। বেলা ১১টার মধ্যে শহরের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় লোকজনসহ যান চলাচল কমে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০২৪
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।