ঢাকা: ‘ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছি। প্রথমে বুঝতেই পারিনি কী হয়েছে, এত জ্যাম কেন? পরে শুনতে পারলাম বনানীতে রাস্তা অবরোধ।
রাজধানীর প্রগতি সরণির বাড্ডা এলাকায় যানজটে আটকে পড়া এক যাত্রী এভাবেই আক্ষেপ প্রকাশ করছিলেন বাংলানিউজের কাছে। সোমবার (১০ মার্চ) সকালে বনানীতে গাড়িচাপায় এক পোশাক শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষোভকে ঘিরে অচল হয়ে পড়ে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো। বনানী, মহাখালী, গুলশান, কুড়িলসহ আশপাশের এলাকায় কার্যত স্থবিরতা দেখা দেয়।
যদিও দুপুর দেড়টার দিকে আন্দোলন প্রত্যাহার করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এরপর ধীরে ধীরে বনানী ও মহাখালীসহ আশপাশের এলাকায় যান চলাচল শুরু হয়। তবে যানজট পুরোপুরি নিরসন হতে আরও সময় লাগবে বলে মনে করছেন ট্রাফিক কর্মকর্তারা।
ভোর ৬টার দিকে বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় গাড়িচাপায় নিহত হন পোশাকশ্রমিক মিনারা আক্তার। আহত হন আরেক শ্রমিক সুমাইয়া আক্তার। তাকে নিকটস্থ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুর্ঘটনার পর বনানী এলাকায় জড়ো হয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। ফলে বনানী, মহাখালী, গুলশান, কাকলী, সাত রাস্তা, প্রগতি সরণি, বিমানবন্দর সড়কসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
সকাল থেকেই অফিসগামী মানুষসহ সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। রোজার মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে যানজটে আটকে যাত্রীরা যেন হাঁসফাঁস দশায় পড়েন। কেউ কেউ বলতে থাকেন, যানজটের নগরে এদিন যেন আরও দুর্যোগ নেমেছে।
গুলশানের শাহজাদপুরে চাকরি করেন আল আমিন হোসেন। তিনি থাকেন রামপুরা এলাকায়। প্রতিদিনের মতো সময়ে সোমবারও বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। কিন্তু বনানীতে শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে সেদিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে এর চাপ পড়ে প্রগতি সরণিতে, দেখা দেয় যানজট। ফলে অফিসে পৌঁছাতে দেরি হবে দেখে তিনি গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে থাকেন।
আল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকায় যানজট না থাকাটাই যেন অস্বাভাবিক। এর মধ্যে কোথাও আন্দোলন বা সড়ক অবরোধ হলে পরিস্থিতি আরও মারাত্মক আকার নেয়। আজকে সেটাই ঘটলো। হেঁটে অফিসে যেতে হচ্ছে। বেশিরভাগ লোকজনকেই দেখা গেছে হেঁটে গন্তব্যে রওয়ানা দিতে। একটা শহর এভাবে চলতে পারে না। রাস্তা দখল করে আন্দোলন বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মফিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বনানী এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কিছু গাড়ি ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে এবং কিছু গাড়ি রামপুরা ও প্রগতি সরণি দিয়ে ডাইভারশন করে পাঠানো হয়। এতে যানজট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বনানী থেকে শুরু হওয়া এই যানজট বিমানবন্দর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে সাতরাস্তা ও জাহাঙ্গীর গেট এলাকাও স্থবির হয়ে পড়ে।
বিকেলের আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক নাহলে ইফতারের সময় যানজট আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ট্রাফিক পুলিশ।
অবশ্য বর্তমানে বনানীসহ আশপাশের এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও যানবাহন চলাচল করছে।
এ ঘটনায় ঘাতক ট্রাক জব্দ করা হয়েছে জানিয়ে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল সরকার বাংলানিউজকে বলেন, শ্রমিক নেতারা আশ্বস্ত করেছেন যে নিহতদের পরিবার ন্যায়বিচার পাবে। এছাড়া আমরা নিশ্চিত করেছি, দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এরপর শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২৫
এজেডএস/এইচএ/