ঢাকা, বুধবার, ১৯ চৈত্র ১৪৩১, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৩ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নদী-নালায় ফের মিলবে গোটালি মাছ

মো. আমিরুজ্জামান ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২৫
নদী-নালায় ফের মিলবে গোটালি মাছ গোটালি মাছ

নীলফামারী: দেশের নদী-নালা, খাল-বিলে আবার পাওয়া যাবে বিলুপ্ত হতে যাওয়া গোটালি মাছ।

নীলফামারীর সৈয়দপুরে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে স্বাদুপানি উপকেন্দ্রের গবেষণায় গোটালি মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন হয়েছে।

এর স্বীকৃতিও মিলেছে।  

অত্যন্ত সুস্বাদু ও মানবদেহের জন্য উপকারী এই গোটালি মাছ এরই মধ্যে বিলুপ্ত প্রায় মৎস্য তালিকায় স্থান করে নিয়েছিল।

সৈয়দপুর স্বাদুপানি উপকেন্দ্র সূত্র জানায়, দেশের উত্তরাঞ্চলসহ অন্যান্য জেলাতেও গোটালি মাছ ছিল একটি জনপ্রিয় খাবার। মিঠা পানির জলাশয়, পাহাড়ি ঝরনা ও অগভীর স্বচ্ছ নদী ছিল মাছটির আবাসস্থল। এক সময় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা ও আত্রাই নদী ছাড়াও নেত্রকোনার সোমেশ্বরী, কংস, সিলেটের পিয়াইনসহ পদ্মা, মেঘনা, যমুনা নদীতেও প্রচুর পরিমাণে মিলতো গোটালি মাছ।

গবেষণায় দেখা যায়, কৃষিতে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন, নদী, খাল-বিলে পানি শূন্যতা, নদীতে চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার, মৌসুমি বৃষ্টিপাতের অভাব ইত্যাদি কারণে গোটালি মাছের প্রজনন হুমকিতে পড়ে।  

২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) মাছটিকে বিভিন্ন প্রজাতি ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তালিকায় বিলুপ্ত প্রজাতির ২৬১টি মাছের নাম উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে ৬৪টি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত যা আমাদের নদী-নালা থেকে হারিয়ে গেছে।  

একই সূত্র জানায়, বিলুপ্ত প্রজাতি থেকে ৪১টি মাছের প্রজনন প্রযুক্তি উদ্ভাবন হয়েছে নিজেদের গবেষণাগারে। এ কেন্দ্রে কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদনের প্রযুক্তি নির্ণয়ে ব্যাপক গবেষণা চলছে। এ কেন্দ্র থেকে এরই মধ্যে ১২টি বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ উদ্ভাবন করে চাষি পর্যায়ে দেওয়া হয়েছে। মাছগুলোর মধ্যে রয়েছে- টেংরা, লইট্টা বৈরালি, খলিশা, গুতুম, বালাচাটা, নাটুয়া, আঙ্গুশ, কোরমা, জারুয়া, নারকেলি চেলা ও গোটালি মাছ।  

স্বাদুপানি উপকেন্দ্রে গোটালি মাছ পূনরুদ্ধারে গবেষণা শুরু হয় ২০২৩ সালে। তিস্তা অববাহিকা থেকে সংগ্রহ করে গবেষণাগারে আনা হয়। এখানে চলে নিবিড় গবেষণা। এখানে একদল বৈজ্ঞানিকের সার্বিক সহযোগিতায় মাছটির পোনা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়। এই টিমে ছিলেন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আজহার আলী, কেন্দ্রটির ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সোনিয়া শারমীন, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালিহা হোসেন মৌ ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শ্রীবাস কুমার সাহা। দীর্ঘ গবেষণা শেষে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে গোটালি মাছের পোনা উৎপাদনে সক্ষম হয়।  

সরেজমিনে স্বাদুপানি উপকেন্দ্রে গেলে কথা হয় গবেষকদের সঙ্গে। ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালিহা হোসেন মৌ বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত। বাঙালির পাতে আবার ফিরিয়ে আনতে পেরেছি বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ। তিনি গোটালি মাছের বৈশিষ্ট তুলে ধরে বলেন, মাছটি অত্যন্ত স্বাদ ও পুষ্টিমান সমৃদ্ধ। মাছটির মাথা চ্যাপ্টা ও শরীর লম্বা আকৃতির। সমবয়সী প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ মাছ স্ত্রী মাছের চেয়ে আকারে বড় হয়। মাছটির দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১২ সেন্টিমিটার এবং ওজন ১৫ থেকে ১৭ গ্রাম হয়ে হয়ে থাকে। মাছটির প্রজননকাল জুন থেকে জুলাই মাস।

সৈয়দপুর স্বাদুপানি উপকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আজহার আলী বলেন, চলতি মাসে আমাদের গবেষণাকে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ময়মনসিংহ গবেষণার স্বীকৃতি দিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে মাছটি চাষি পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ফলে এ মাছ খাল-বিল ও নদী-নালায় সহজে মিলবে।

তিনি বলেন, গোটালি মাছে ইনজেকশন প্রয়োগ করার ৭-৮ ঘণ্টা পর স্ত্রী গোটালি ডিম ছাড়ে। ডিম ছাড়ার ৮-১০ ঘণ্টা পর ডিম থেকে রেণু বের হয়। ধাপে ধাপে নার্সারি হিসেবে ব্যবহার করা যায় এবং সঠিক পরিচর্যায় ৫০-৬০ দিনে মধ্যে আঙুলি পোনায় পরিণত হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২৫
আরএ  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।