৭ মার্চ, ২০০৭। হঠাৎ করেই গভীর রাতে ক্যান্টনমেন্টের বাসভবন ঘেরাও করল যৌথ বাহিনী।
স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান এই বাড়িতেই বসবাস করতেন। নানা স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়িতে ঢুকে পড়ল যৌথ বাহিনী। অনুমতির তোয়াক্কা করা হলো না। শুরু হলো বাড়ি তছনছ। এক-এগারোর সরকারের বিরাজনীতিকরণ ফর্মুলা বাস্তবায়নের জন্য তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা, তাঁকে রাজনীতি থেকে বাদ দেওয়া খুব জরুরি ছিল। আর সে কারণে তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হলো সমস্ত আইনকানুন লঙ্ঘন করে। গ্রেপ্তার করে চোখ বেঁধে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় অজ্ঞাত স্থানে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, তাঁকে গ্রেপ্তার করে এক-এগারো সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘আয়না ঘরে’ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে তাঁকে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিতে বলা হয়। তাঁকে বলতে বলা হয় যে তিনি দুর্নীতি করেছেন। তিনি জঙ্গিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ভবিষ্যতে আর রাজনীতি করবেন না। আর এসব ভিত্তিহীন, বানোয়াট অভিযোগের একমাত্র উৎস ছিল দেশে অপ-সাংবাদিকতার মুখপত্র প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার। কিন্তু তারেক রহমান হলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সন্তান। তাঁর পিতা জীবনবাজি রেখে দেশমাতৃকার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় সাহস এবং শৌর্য দেখানোর জন্য তিনি ‘বীরউত্তম’ খেতাব প্রাপ্ত। তারেক রহমান যখন তাদেরকে বললেন, আমি রাজনীতি করি মানুষের জন্য। আমি কখনোই দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না, তখন তাঁর ওপর চালানো হলো সীমাহীন অত্যাচার, নিপীড়ন। প্রায় এক মাস ধরে তারেক রহমানকে এক-এগারোর ‘আয়না ঘরে’ বন্দি রেখে অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়। বাংলাদেশের এখন যে ‘আয়না ঘর’ নিয়ে কথা হচ্ছে সেই ‘আয়না ঘরে’র প্রথম নিপীড়িত ব্যক্তির নাম তারেক রহমান। ‘আয়না ঘরে’ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে তাকে পেটানো হয়। চালানো হয় নিষ্ঠুর নির্যাতন। ফ্যান থেকে একদিন পড়ে যান তারেক রহমান। পরে পরীক্ষায় ধরা পড়ে তার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে গেছে। দীর্ঘদিন হাঁটতে পারেননি, তরুণদের জনপ্রিয় এই নেতা। এখনো তাঁর চিকিৎসা চলছে লন্ডনে। তাঁর পায়ে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা সৃষ্টি হয় এই বর্বরতায়। এটি শুধু অমানবিক নয়, সভ্য সমাজে একটি বিরল ঘটনাও বটে। এরকম অকথ্য নির্যাতন চালানোর পরও তারেক রহমানের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কারণ তারেক রহমান রাজনীতিতে দুর্নীতি করতেন না। এ রকম নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে তাঁর কাছ থেকে একটি ‘মুচলেকা’ নেওয়ারও চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তারেক রহমান সেই মুচলেকা দিতেও অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে একটি বানোয়াট মুচলেকা বানিয়ে তা গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। এই ভুয়া মুচলেকার ওপর ভর করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারেক রহমান যেভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, যেভাবে তাঁর ওপর শারীরিক এবং মানসিক নিপীড়ন করা হয়েছে তা একটি বিরল ঘটনা। শিক্ষণীয় এটাই যে এই সমস্ত নির্যাতনের পরও তারেক রহমান নীতির প্রশ্নে আপস করেননি। তাঁর নীতিতে অটল ছিলেন। আমরা যদি দেখি যে কেন তারেক রহমানের ওপর এই ক্ষোভ আক্রোশ, তাহলে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে আরও পেছনে। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি যে বিপুল বিজয় লাভ করেছিল, তার অন্যতম প্রধান কৃতিত্ব তারেক রহমানের। তিনিই এই বিজয়ের নেপথ্যের কারিগর। তারেক রহমান নতুন ধারার রাজনীতি সূচনার জন্য বিএনপিতে যে তরুণ প্রাণের উচ্ছ্বাস নিয়ে এসেছিলেন তার কারণেই তরুণসমাজ এবং নারীরা অকুণ্ঠভাবে বিএনপিকে সমর্থন জানায়। দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিএনপি নির্বাচনে জয়ী হয়। তখন থেকেই বাংলাদেশের সুশীল সমাজ ভারতীয় এজেন্ট বাস্তবায়নকারী চররা এবং আওয়ামী লীগের দোসররা তারেক রহমানকে কলঙ্কিত করার একটা মিশনে নামে। তারা বুঝতে পারে এদেশে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির কণ্ঠ স্তব্ধ করতে হলে তারেক রহমানকে বিতর্কিত করতে হবে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিশন বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার গ্রুপ। ২০০১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের প্রধান টার্গেট ছিলেন তারেক রহমান। তারেক রহমানের চরিত্র হনন, তাঁকে বিতর্কিত করা, জনগণের সামনে তাঁকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার জন্য একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এসব প্রতিবেদন প্রকাশ হয় দুই ভাবে। প্রথমত, বিএনপিকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রমাণের জন্য প্রথম আলো, ডেইলি স্টার লাগাতার অসত্য, ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করে। দ্বিতীয়ত, তথাকথিত হাওয়া ভবনের কল্পকাহিনি বানিয়ে তারেক রহমান ও বিএনপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়। ওই সময় প্রকাশিত এসব প্রতিবেদন সবই মিথ্যা, ভিত্তিহীন। হাওয়া ভবনের যে কল্পকাহিনি সেটি প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সৃষ্টি। হাওয়া ভবনের মাধ্যমে ব্যবসাবাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ হয় সেটিও প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কল্পিত আবিষ্কার। বেগম খালেদা জিয়ার তৎকালীন একান্ত সচিব নুরুল ইসলাম যখন রাষ্ট্রীয় গোপন নথিপত্র বিভিন্ন জায়গায় পাচার করে দিচ্ছিলেন, দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকছিলেন তখন বেগম জিয়া তাকে একান্ত সচিবের পদ থেকে বাদ দেন। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। এ সময় প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার নুরুল ইসলামের পক্ষে অবস্থান নেন। নুরুল ইসলামের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছিল প্রথম আলো। সেই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তারেক রহমানকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করে প্রথম আলো।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে তারা প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে তারেক রহমানের দুর্নীতির ব্যাপারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন সে জন্যই নুরুল ইসলামকে চাকরি থেকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। যা ছিল সর্বৈব মিথ্যা। নুরুল ইসলামের বিভিন্ন অপকর্মের সাক্ষ্য প্রমাণের পরিপ্রেক্ষিতেই তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। এই সময় প্রথম আলো হাওয়া ভবনের গল্প ছাপে। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির তথাকথিত কেলেঙ্কারিও প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের অবদান। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার এই দীর্ঘ সময়ে এমন একটি অবস্থা তৈরি করে যেখানে প্রধান টার্গেট ছিলেন তারেক রহমান। তারেক রহমানের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ইত্যাদি নিয়ে একের পর এক প্রতিবেদন বিশেষ করে তারেক রহমানের সঙ্গে যারা ঘনিষ্ঠ, তাদেরকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রমাণ করার এক নিরন্তর চেষ্টা করে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার গ্রুপ। আমরা দেখি যে এক-এগারো আসার পর প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের এই রিপোর্টগুলোর ভিত্তিতেই তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এ সময় তারেক রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে বারবার প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের ওই সব রিপোর্টগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছিল।
শুধু তাই নয়, তারেক রহমানের সঙ্গে জঙ্গিদের সম্পৃক্ততা আছে সেরকম বানোয়াট তথ্য দিয়েও প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার নানা রকম কল্পিত কাহিনি লিখেছিল। মাইনাস ফর্মুলার জনক এই পত্রিকা দুটি ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং ১০ ট্রাক অস্ত্রের ঘটনার সঙ্গে মনগড়া গল্প রচনা করে। সম্প্রতি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বিএনপির সঙ্গে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সম্পৃক্ততাকে ‘কল্পকাহিনি’ হিসেবে নাকচ করে দিয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত ২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলার সব আসামিকে খালাস করে দেয়। অথচ প্রথম আলো ২১ আগস্টের ঘটনায় তারেক রহমানের সম্পৃক্ততা প্রমাণে একের পর এক সাংবাদিকতার রীতিনীতি বিরুদ্ধ অসত্য-বানোয়াট রিপোর্ট প্রকাশ করে। ২১ আগস্টের ঘটনায় প্রথম আলোর কল্পিত আবিষ্কার মুফতি হান্নান। শুধু তাই নয়, ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাতেও প্রথম আলো জঙ্গিবাদ আবিষ্কার করেছিল। এই জঙ্গিবাদের ঘটনা নিয়ে বিভিন্নভাবে নানা রকম নাটক সাজানোর চেষ্টা করেছিল প্রথম আলো গোষ্ঠী। অর্থাৎ পাঁচ বছর ধরে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারেক রহমানকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার। তারা জানে যে তারেক রহমান হলেন একজন জাতীয়তাবাদী চেতনার রাজনীতিবিদ এবং তরুণ সমাজের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা প্রবল। কাজেই তাঁকে যদি রাজনীতি থেকে বাদ দেওয়া যায়, সেক্ষেত্রে বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া সহজ হবে। বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্যই তারেক রহমানের ওপর নেমে আসে অকথ্য নির্যাতন, নিপীড়ন। আর নিপীড়নের আয়োজন করে দিয়েছিল প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করেই আজ দেশের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়েছেন তারেক রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৫
এসআই