ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২, ০৮ মে ২০২৫, ১০ জিলকদ ১৪৪৬

জাতীয়

একনেক সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় ‘বি-স্ট্রং’ প্রকল্প

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:৩৩, মে ৭, ২০২৫
একনেক সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় ‘বি-স্ট্রং’ প্রকল্প একনেক

ঢাকা: দুর্যোগপ্রবণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবিকা পুনর্গঠন এবং দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার একটি বড় পরিসরের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রস্তাবিত “Bangladesh Sustainable Recovery, Emergency Preparedness and Response Project (B-STRONG) (DDM Part)” শীর্ষক প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য আজ উপস্থাপন করা হতে পারে।

 

বুধবার (৭ মে) পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রায় ২৪৪.১৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে ৫.৮০ কোটি টাকা আসবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এবং বাকি ২৩৮.৩৪ কোটি টাকা বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে।

২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে দুর্যোগপূর্ব, দুর্যোগকালীন এবং পরবর্তী সময়ে কার্যকর ব্যবস্থাগ্রহণ। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে দ্রুত কর্মসংস্থান ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।

বিশ্ব ঝুঁকি সূচক ২০২২ অনুযায়ী, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে নবম এবং এশিয়ায় পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দুর্যোগের মাত্রা ও ঘনত্ব বাড়ছে, যার ফলে প্রায় ৯.৫১ মিলিয়ন মানুষ চরম দারিদ্র্যে বসবাস করছে এবং ৪১.৭০ মিলিয়ন মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মুখে রয়েছে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রাম জেলার ১০টি উপজেলায় দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ৮,৮৬১ জনকে প্রতিদিন ৪০০ টাকা হারে স্বল্পমেয়াদি কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে মোট ৩১.৮৯ লক্ষ কর্মদিবস সৃষ্টি হবে। দেশের বন্যাপ্রবণ ৩৭টি জেলার জন্য ৩৭০টি রেসকিউ বোট সরবরাহ করা হবে এবং ১,৪৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককে এই বোট পরিচালনা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি, জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির ১,২৯৫ জন সদস্যকেও প্রশিক্ষিত করা হবে।

প্রকল্পটি এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা-দারিদ্র্য দূরীকরণ (গোল ১), ক্ষুধামুক্তি (গোল ২), লিঙ্গ সমতা (গোল ৫) এবং বৈষম্য হ্রাস (গোল ১০)—এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রকল্পের আওতায় উদ্ধার কার্যক্রম ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি, দুর্গম ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পুনর্বাসন প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত করা হবে।

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান Geo-Planning for Advanced Development Ltd. কর্তৃক প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়। ২৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয় এবং পুনর্গঠিত ডিপিপি জমা দেওয়া হয়।

যদিও প্রকল্পটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দুর্যোগে আক্রান্ত পরিবারগুলো দ্রুত কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবিকা ফিরে পাবে এবং ৩৭টি জেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে নারীদের ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটাবে।

পরিকল্পনা কমিশনের মতে, এই উদ্যোগ বাংলাদেশের জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। সরকার আশা করছে, আজকের একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পাবে এবং দ্রুত বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০২৫
এসএমএকে/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।