মানিকগঞ্জ: যৌথ পরিবার থেকে পৃথক হওয়ার সময় মায়ের দেওয়া একটি গরু পেয়ে সেটার ওপর ভর করে ১৪টি গরু বিক্রি করে আয় করেছেন ৩২ লাখ টাকা। আসন্ন কোরবানির ঈদ সামনে রেখে অস্থির, শুক্কুরি, মামা, ভাগ্নে নামে চারটি গরু প্রস্তুত করেছেন তারা মিয়া নামে এক খামারি।
জানা যায়, জেলার সদর আটিগ্রাম ইউনিয়নের দরিদ্র খামারি তারা মিয়া গরু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। একটি সময় যৌথ পরিবারে চার ভাই ও মাকে নিয়ে ছিল তাদের সংসার জীবন। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে প্রথমে দুই ভাই পৃথক হয়ে যান। পরে বাকিরাও পৃথক হন। অভাব-অনটনে চলছিল তারা মিয়া ও মরজিনার দাম্পত্য জীবন। পারিবারিক জীবনে সচ্ছলতা আনতে ধানের মিলের পাশাপাশি গরু পালনের দিকে মনোযোগ দেন তিনি। সংসার জীবনে পৃথক হওয়ার সময় মায়ের দেওয়া গরু থেকে তার জীবনের চাকা ঘুরতে শুরু করে। ওই গরুর সঙ্গে আরও কয়েকটি ষাঁড় পালন করেন তারা মিয়া। গত ৮ বছরে ১৪টি ষাঁড় গরু বিক্রি করে আয় করেন ৩২ লাখ টাকা। এবারও কোরবানির ঈদ সামনে রেখে চারটি ষাঁড় গরু প্রস্তুত করেছেন তারা মিয়া নামে এই খামারি। খামারে থাকা গরুগুলোকে সম্পন্ন দেশীয় খাদ্য খাওয়ানো হয়। প্রতিদিন সকালে এক কেজি কুড়া, দেড় কেজি ভুসি, হাফ কেজি ছোলা, ২৫০ গ্রাম খৈল, ৭৫০ গ্রাম ভুট্টাসহ কাঁচা ঘাস ও খড় খাওয়ানো হয়। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতি অবলম্বন করে গরু রিষ্টপুষ্ট করেছেন এমনটাই দাবি খামারির। তারা মিয়ার এই সাফল্য দেখে নিজ অঞ্চলের মানুষসহ আশপাশের অনেকেই এখন গরু পালন করছেন।
আটিগ্রাম অঞ্চলের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম নামে একজন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে তারা মিয়া গরু লালনপালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এমনিতেই সারা বছর ধানের মিল চালিয়ে কোনো মতে সংসার পরিচালনা করেন তিনি। ধানের মিলের কুড়া দিয়েই তিনি তার গরুগুলোকে লালনপালন করেন। ছোলা, ভুসি, কুড়া, খৈলসহ দেশীয় প্রজাতির ঘাস খাওয়ানোর কারণেই তার গরুগুলোর বেশ চাহিদা রয়েছে। তারা মিয়ার গরুগুলো দেখতে এরই মধ্যে অনেকেই আসতে শুরু করেছেন।
মরজিনা বেগম বলেন, নিজ সন্তানের মতো গরুগুলোকে লালনপালন করছি। অতি যত্নে গরুগুলোকে বড় করেছি। আল্লাহর রহমতে এখন ভালোভাবে বিক্রি করতে পারলেই হয়।
তারা মিয়া বলেন, আমরা চার ভাই। যৌথ পরিবার থেকে পৃথক হওয়ার সময় মায়ের দেওয়া একটি গরু পাই আমি। সেই গরুর ওপর ভর করে এবং পালের অন্য সব গরুর মধ্যে মোট ১৪টি গরু বিক্রি করে ৩২ লাখ টাকা আয় করি। এবারের কোরবানির হাটের জন্য চারটি গরু প্রস্তুত করেছি সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতি অবলম্বন করে।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সেলিম জাহান বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদ সামনে রেখে আমাদের ভেটেনারি টিম এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। আটিগ্রামের খামারি তারা মিয়া একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি প্রতিবছর সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতি অবলম্বন করে গরুকে রিষ্টপুষ্ট করে থাকেন। তার এই সাফল্য দেখে আশপাশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলের মানুষ গরু পালন করছেন।
আরবি