উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দেশজুড়ে যখন শোকের ছায়া, তখন আলোচনায় উঠে এসেছে যুদ্ধবিমানটির ইতিহাস, কাঠামো ও ব্যবহারযোগ্যতা।
চীনের তৈরি এফ-৭ বিজিআই মূলত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের আদলে তৈরি করা একটি হালকা, এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট ফাইটার জেট।
আকাশ থেকে আকাশে যুদ্ধ, আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণ, প্রশিক্ষণ এবং টহল—এই চারটি উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করা হয় এফ-৭। এটি অল-ওয়েদার ইন্টারসেপ্টর হিসেবেও পরিচিত, অর্থাৎ যেকোনো আবহাওয়ায় যুদ্ধের উপযোগী। ডেল্টা-আকৃতির পাখার কারণে যুদ্ধবিমানটি শব্দের চেয়েও বেশি গতিতে উড়তে পারে এবং দ্রুত উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। যদিও এর রেঞ্জ কিছুটা সীমিত, তাই মূলত সীমিত অঞ্চলে প্রতিরক্ষামূলক মিশনের জন্য এটি বেশি কার্যকর।
চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্সের (পিএফএএএফ) প্রয়োজন পূরণেই এফ-৭ সিরিজের উন্নয়ন শুরু হয়েছিল। তবে এটি শুধু চীনেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিশরসহ একাধিক দেশের বিমানবাহিনী বহু বছর ধরে এই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে।
২০১৩ সালের মে মাসে চীন সরকার এফ-৭ এর উৎপাদন বন্ধ করলেও, তার আগে বাংলাদেশের জন্য তৈরি করা এফ-৭ বিজিআই ছিল জে-৭ সিরিজের শেষ ইউনিট। বাংলাদেশ এই বিমানগুলো কিনেছিল একটি অস্থায়ী সমাধান হিসেবে— যতদিন না বহরে আধুনিক মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান যুক্ত হয়।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বহরে এফ-৭ দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে আছে। এর বিজিআই সংস্করণে আগের তুলনায় বেশ কিছু প্রযুক্তিগত উন্নয়ন আনা হয়। ককপিটে যুক্ত করা হয় দুটি মাল্টিফাংশন ডিসপ্লে (এএফডি), হ্যান্ডস অন থ্রটল অ্যান্ড স্টিক (এইচওটিএএস) প্রযুক্তি, হেলমেট-মাউন্টেড সাইট (এইচএমএস) এবং নাইট ভিশন ইকুইপমেন্ট। এতে আরও আছে আধুনিক হেড-আপ ডিসপ্লে (এইচইউডি), মুভিং ম্যাপ জিপিএস, উন্নত ন্যাভিগেশন ও বোমার্ডমেন্ট সিস্টেম।
পাইলটের জরুরি সুরক্ষার কথা ভেবে ব্যবহৃত হয়েছে মার্টিন বেকার এমকে.১০ ইজেকশন সিট, যা দুর্ঘটনার সময় পাইলটকে দ্রুত ও নিরাপদে বিমান থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ দেয়।
যদিও আধুনিক যুদ্ধে ব্যবহারের উপযোগিতা দিন দিন কমছে, তারপরও সীমিত যুদ্ধ, প্রশিক্ষণ এবং টহল মিশনের ক্ষেত্রে এফ-৭ বিজিআই এখনো কার্যকর। এই যুদ্ধবিমান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষায় নির্ভরযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে।
এমজে