রাজধানীতে একইদিনে বড় সমাবেশ ডেকেছে ছাত্রদল, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ছাত্র শিবির। এই তিন সমাবেশ ঘিরে নগরীর শাহবাগ, শহীদ মিনার ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রচুর জনসমাগম ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রোববার (৩ আগস্ট) দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শাহবাগ মোড়ে ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে ছাত্র সমাবেশ করবে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল। এদিন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের’ দাবিতে জনসমাবেশ করবে এনসিপি। বিকেল ৩টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-২০২৪’ শীর্ষক স্মৃতি লিখন প্রতিযোগিতার পুরস্কার দেওয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ছাত্রশিবির। এ ছাড়া সাইমুম শিল্পগোষ্ঠীর উদ্যোগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১-৪ আগস্ট প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ‘৩৬ জুলাই কালচারাল ফেস্ট-জুলাই জাগরণ’ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, বড় এই তিন সংগঠনের সমাবেশ ঘিরে রাজধানীর শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শহীদ মিনার ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় ব্যাপক লোক সমাগম ঘটবে। ফলে এসব এলাকায় স্বাভাবিক যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে।
এসব সমাবেশের পাশাপাশি ওইদিন এইচএসসি ও বিসিএস পরীক্ষাও রয়েছে। ফলে সকাল থেকেই রাজধানীজুড়ে ব্যাপক যানজটেরও সৃষ্টি হতে পারে।
তবে এসব সমাবেশ ও পরীক্ষা ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ডিএমপি। নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি এসব অঞ্চলে মোতায়েন থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য। ইউনিফর্মের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করবেন পুলিশ সদস্যরা। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন তারা। পাশাপাশি শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী ও শহীদ মিনার এলাকায় যান চলাচলও নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
শনিবার (২ আগস্ট) রাতে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, নিয়মিত যেসব পুলিশ সদস্য ওইসব এলাকায় দায়িত্ব পালন করেন তারা তো থাকবেনই। সঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ডাইভারশনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এইচএসসি ও বিসিএস পরীক্ষার্থীদের যথেষ্ট সময় নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে বিকেলে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোববার (৩ আগস্ট) রাজধানীর শাহবাগ ও আশপাশের এলাকায় একাধিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি থাকায় ওই অঞ্চলে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। শাহবাগ, শহীদ মিনার ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় সমাবেশ ও অনুষ্ঠান চলাকালীন প্রচুর জনসমাগম হবে। ফলে বিশেষ করে শাহবাগ ক্রসিং দিয়ে যান চলাচল করানো সম্ভব হবে না।
এজন্য বিজ্ঞপ্তিতে যান চলাচলের বিকল্প রুট ও ডাইভারশনের কথা জানানো হয়। সেগুলো হলো-
১. হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় উত্তর দিক থেকে আসা যানবাহন শাহবাগের দিকে না গিয়ে হেয়ার রোড/মিন্টু রোড হয়ে চলাচল করবে।
২. কাটাবন মোড় পশ্চিম দিক থেকে আসা যানবাহন শাহবাগে না গিয়ে নীলক্ষেত/পলাশী অথবা সোনারগাঁও রোড হয়ে বাংলামোটর লিংক রোড দিয়ে চলবে।
৩. মৎস্য ভবন মোড়, হাইকোর্ট/কদম ফোয়ারা থেকে আসা যান চলবে হেয়ার রোড/শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণি হয়ে। কাকরাইল দিক থেকে আসা যানবাহন হাইকোর্ট হয়ে গুলিস্তান/ঢাবি দিকে যাবে।
৪. টিএসসি/রাজু ভাস্কর্য, দোয়েল চত্বর বা নীলক্ষেত থেকে আসা যান শাহবাগ এড়িয়ে দোয়েল চত্বর/নীলক্ষেত হয়ে চলবে। এ ছাড়া শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশপথ যথাসম্ভব পরিহার করতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকাবাসীকে এইচএসসি ও বিসিএস পরীক্ষার্থীদের যথেষ্ট সময় নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
অন্যদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে আয়োজিত সমাবেশকে ঘিরে সম্ভাব্য জনদুর্ভোগের জন্য ঢাকাবাসীর কাছে আগাম দুঃখ প্রকাশ করেছে ছাত্রদল। শনিবার (২ আগস্ট) ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এক বিবৃতিতে এ দুঃখ প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে নাছির জানান, প্রাথমিকভাবে তারা জাতীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অফিস থেকে অনুমতিও নেওয়া হয়েছিল। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টির অনুরোধে এবং একটি উদার ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগঠন হিসেবে তারা শহীদ মিনারের পরিবর্তে শাহবাগে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেন।
নাছির উদ্দীন বলেন, ব্যস্ত কর্মদিবসে রাজধানীতে সমাবেশের কারণে সৃষ্ট জনভোগান্তি সম্পর্কে আমরা অবগত। তবুও ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে এবং দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে আমাদের স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আগামীকালের যেকোনো ধরনের জনদুর্ভোগের জন্য অগ্রিম দুঃখ প্রকাশ করছে এবং প্রত্যাশা করছে যে নগরবাসী বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবেন। ভবিষ্যতে আমরা এ বিষয়ে আরও অধিকতর সচেতন থাকবো।
এসসি/আরবি