ঢাকা: দেশ-জাতির সেবায় তারা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা থাকেন সজাগ। যখনই ঘণ্টা বা সাইরেন বাজে, তখনই তারা ছুটে যান দুর্ঘটনাকবলিত স্থানে।
অন্যকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করা এই বীরেরা হলেন ফায়ার ফাইটাররা। সবশেষ এমনই আত্মোৎসর্গকারী এক ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদ। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গাজীপুরের টঙ্গীতে সাহারা মার্কেটের একটি গোডাউনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করার সময় বিস্ফোরণে প্রায় শতভাগ পুড়ে মারা গেছেন তিনি। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর বলছে, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় ৫৪ বছরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব পালনকালে (অপারেশনে গিয়ে) শামীম আহমেদসহ ৪৮ জন প্রাণ দিয়েছেন। এর মধ্যে গত ১০ বছরেই মারা গেছেন ২৪ জন।
সোমবারের ঘটনায় শামীমের মতো দগ্ধ হয়ে অফিসার জান্নাতুল নাঈম ও ফায়ার ফাইটার মো. নুরুল হুদা মুমূর্ষ অবস্থায় জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। শামীমের মৃত্যুতে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. নাসির উদ্দিন দগ্ধ ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় দগ্ধ জান্নাতুল নাঈম ও নুরুল হুদা নামে আরও দুইজন ফায়ার সদস্য মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জয় হাসান নামে আরেক ফায়ার সদস্যকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বাংলানিউজকে বলেন, গতকাল টঙ্গীতে কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন নির্বাপনের সময় দগ্ধ শামীম আহমেদের মৃত্যুতে আমি শোকাহত। পাশাপাশি পুরো ফায়ার সার্ভিস শোকাহত। মানুষের কল্যাণে অন্যের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন হাতে নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করে চলছেন, সেটা ঈদ বলেন আর পূজা বলেন। আমাদের প্রাণপ্রিয় সহকর্মীদের যারা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মারা গেছেন এবং আজ শামীম, তাদের বিদায় আমাদের নীরব ত্যাগকেই প্রমাণ করলো।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব পালনকালে শামীম আহমেদসহ এই পর্যন্ত ৪৮ জন মারা গেছেন। কেউ আগুনে দগ্ধ হয়ে, কেউ বিদ্যুৎপৃষ্ঠে, আর কেউ অন্য কারণে দায়িত্ব পালনের সময় মৃত্যুবরণ করেছেন।
তালহা বিন জসিম জানান, বিগত ১০ বছরের ফায়ার সার্ভিসের নথি থেকে দেখা যায়, ২০১৫ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব পালনকালে ২৪ জন ফায়ার কর্মী প্রাণ দিয়েছেন। আহতের তালিকায় আছেন ৩৮৬ জন।
সোমবারের দুর্ঘটনা
গতকাল সোমবার বিকেলে টঙ্গীর সাহারা মার্কেট এলাকার ওই কেমিক্যাল গোডাউনে আগুনের সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। পরে সদর দপ্তর থেকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সেই আগুন নির্বাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়। তার আগে খবর পাওয়ার সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিস থেকে সাতটি ইউনিট আগুন নির্বাপনে যায়। তখন বিস্ফোরণে দগ্ধ হন টঙ্গী ফায়ার স্টেশনের পরিদর্শক জান্নাতুল নাইম, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী জয় হাসান, নুরুল হুদা ও শামীম আহমেদ।
এদের পাশাপাশি দোকান কর্মচারী আল-আমিন শতভাগ দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।
ফায়ার কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বলেন, সাহারা মার্কেটে যে কেমিক্যাল গোডাউনে আগুনের ঘটনা ঘটে, সেখানে কেমিক্যাল রাখার অনুমতি ছিল কি না অথবা অনুমতি থাকলেও আগুন থেকে বাঁচতে গোডাউনে কীভাবে কেমিক্যাল মজুদ করে রাখতে হবে, এগুলোর নিয়ম-কানুন মালিকপক্ষের জানা ছিল না। তবে গোডাউনের ওপরে একটা সাইনবোর্ড ছিল, সেখানে লেখা ছিল কেমিক্যালের গোডাউন।
এজেডএস/এইচএ/