ঢাকা: পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় নিহতদের একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমান এবং তার দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে মামলার রায় বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) দুপুর ১২টার পরে ঘোষণা করা হবে।
রায় দেবেন ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ।
সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ ট্রাইব্যুনালে অন্যান্য রায় সাধারণত দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে ঘোষিত হয়। সে হিসাবে এ মামলার রায়ও দুপুর ১২টা নাগাদ ঘোষণা করা হতে পারে।
রায় শোনানোর জন্য ইতোমধ্যেই কারাগারে আটক দুই আসামি ঐশী রহমান ও তার বন্ধু আসাদুজ্জামান জনিকে আদালতের আসামির কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। জামিনে থাকা মামলার অপর আসামি মিজানুর রহমান রনিও আদালতে হাজির আছেন।
২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজেদের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরদিন ঐশী গৃহকর্মী সুমীকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন। পরে গ্রেফতার করা হয় অন্য দুই আসামি রনি ও জনিকে। তাদের মধ্যে আসামি রনিকে গত ৩১ মার্চ জামিন দেন ট্রাইব্যুনাল।
২০১৩ সালের ২৪ আগস্ট আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন ঐশী। পরে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছিল দাবি করে ৫ সেপ্টেম্বর স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়। আদালত তা নথিভূক্ত রাখার নির্দেশ দেন।
গত বছরের ৯ মার্চ ডিবির ইন্সপেক্টর আবুয়াল খায়ের মাতুব্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে ঐশীসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে পৃথক দু’টি চার্জশিট দাখিল করেন।
অপর আসামি গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার মামলাটির বিচার চলছে শিশু আদালতে। গত বছরের ২০ মে সুমির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে সুমিকে জামিন দেন শিশু আদালতের বিচারক জাকিয়া পারভিন। গত বছরের ১ জুন গাজীপুরের কিশোর সংশোধন কেন্দ্র থেকে মা সালমা বেগমের জিম্মায় জামিনে মুক্তি পেয়েছে সে।
গত বছরের ৬ মে ঐশীসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন মহানগর দায়রা জজ আদালত।
ঐশীদের মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হলে গত বছরের ৩০ নভেম্বর নতুন করে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।
এ মামলায় ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদী ঐশীর চাচা মো. মশিহুর রহমান রুবেলসহ ৩৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
গত ১৩ অক্টোবর মামলাটির প্রধান আসামি ঐশীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেন আদালত। আত্মপক্ষ সমর্থনকালে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তার বক্তব্য লিখিতভাবে আদালতে দাখিল করেন ঐশী। অন্য দুই আসামি জনি ও রনিও নিজেদের নিদোর্ষ বলে দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন।
বয়সের সমর্থনে একটি সনদপত্র আদালতে দাখিল করে ঐশী দাবি করেন, ঘটনার সময় তিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। পুলিশ নির্যাতন করে তার স্বীকারোক্তি আদায় করে। তার বাবা-মা যখন খুন হন তখন তিনি বাসায় ছিলেন না। বন্ধুর বাসায় হুইস্কি খেয়ে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন। তার বাবা-মাকে কে বা কারা খুন করেন তাও তিনি জানেন না।
গত ২০ অক্টোবর ও ৪ নভেম্বর পক্ষে বিপক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন উভয়পক্ষের আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষে স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মাহবুবুর রহমান ও আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ ও মাহবুবুর রহমান রানা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
গত ৪ নভেম্বর মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ রায়ের এ দিন ধার্য করেন।
মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার প্রায় ১ বছর পর বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৫/আপডেট: ১২০১ ঘণ্টা
এমআই/এএসআর