ময়মনসিংহ: প্রযুক্তির সহায়তায় এখন বেশিরভাগ মামলার তদন্ত করছে পুলিশ। অপরাধী শনাক্তে পুলিশ প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠায় ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণেও।
কিন্তু এ প্রতিযোগিতা থেকেই আবার পিছিয়ে রয়েছেন ময়মনসিংহ পুলিশের অনেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশ এগিয়ে গেলেও তারাই নিজেদেরকে অ্যানালগ করে রেখেছেন। আবার এ ধারার বাইরেও রয়েছেন ক’জন অফিসার ইনচার্জ (ওসি)।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মঈনুল হক মনে করেন, ফেসবুকে থাকাটা ভাল। এর মাধ্যমে আপডেট থাকা যায়।
জানা যায়, ময়মনসিংহের ধোবাউড়া, ফুলপুর, গৌরীপুর, তারাকান্দা, কোতোয়ালী, নান্দাইল ও গফরগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জদের (ওসি) ফেসবুক আইডি নেই। নামকাওয়াস্তে ফেসবুক ব্যবহার করেন হালুয়াঘাট, মুক্তাগাছা, ঈশ্বরগঞ্জ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও ভালুকা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)। সব সময়ই সক্রিয় পাওয়া যায় ফুলবাড়িয়া ও ত্রিশাল থানার অফিসার ইনচার্জকে।
দেখা গেছে, হালের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইমেইল আইডি ব্যবহারে ওইসব অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রীতিমতো উদাসীন। ফেসবুক ব্যবহার করে রাজনীতিকরা জনগণের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করলেও প্রযুক্তির প্রতি বেশ কয়েকজন ওসির অনাগ্রহ ও অ্যানালগ মানসিকতাই ডিজিটাল বিপ্লব থেকে তাদের পিছিয়ে রেখেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ফেসবুকে অন্তর্ভুক্ত হতে নির্দেশ দেয়ার পর প্রশাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান করছেন তারা। অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) একইভাবে ফেসবুক পেজ খোলার নির্দেশ দেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তথ্য প্রবাহ গতিশীল ও তথ্যের আদান প্রদানের অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম ফেসবুক এমনটি মনে করেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রিফাত খান রাজিব। ফেসবুকের তার বন্ধু তালিকায় রয়েছেন এমন একজন চলতি বছরের আগস্টে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় ডিজিটাল মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ছবি তাৎক্ষণিক ফেসবুকের দেয়ালে পোস্ট করেন।
সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্যে এ ঘটনা তুলে ধরে প্রযুক্তিবান্ধব এ ওসি বলেন, ডিজিটাল মেলার সবচেয়ে বড় সুফল মেলা উদ্বোধন হবার সাথে সাথেই একজন ফেসবুকে দিয়ে দিয়েছেন। ফুলবাড়িয়ারই একজন বাসিন্দা যিনি সৌদি আরব থাকেন তিনি এ ছবিতে কমেন্টস করেছেন। মেলা চলতে চলতে ১শ’ লাইক পড়ে যায়।
ডিজিটাল মেলার খবর পৌছে গেলো ওই প্রবাসীর কাছেও। তিনি প্রত্যক্ষ করলেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এক সময়কার পশ্চাৎপদ ফুলবাড়িয়া এগিয়ে যাচ্ছে। তাই এ মেলা থেকেই আমাদের ফেসবুক আইডি খুলতে হবে।
এখন থেকে আমাদের যোগাযোগ হবে ফেসবুকে ও ইমেইলে। এতে আমরা সবাই সময়ের সঙ্গে আপডেট থাকবো, বলেন রিফাত খান রাজিব।
নিজের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ফেসবুকে প্রতিনিয়ত না থাকলে মনে হয় পিছিয়ে পড়লাম। কিন্তু এখন অবাধ তথ্য প্রযুক্তির যুগে মোটেও পিছিয়ে পড়ার সুযোগ নেই।
জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে পিছিয়ে নেই ত্রিশাল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামানও। মাস ছয়েক ধরে তিনি বেশ সক্রিয় এ মাধ্যমে। অপরাধ প্রবণতা হ্রাসে কার্যকর মাধ্যম হয়ে উঠেছে ফেসবুক।
তার ভাষ্যে, প্রত্যন্ত পল্লীর বাসিন্দারাও এখন ফেসবুক ব্যবহার করেন। ফেসবুকে তারা পুলিশকে সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে তাৎক্ষণিক জানাতে পারছেন। ঘটনার সত্যাসত্য বিচার বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ প্রক্রিয়াও গড়ে উঠছে।
ফেসবুকে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও রাজনীতিবিদরা সরব থেকে জনগণের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করছেন। জানতে পারছেন গণমানুষের অনুভূতির কথা। কিন্তু ময়মনসিংহের অ্যানালগ অনেক ওসি এখনো ডিজিটাল হতে পারেননি।
অথচ এ ফেসবুকেই জনপ্রিয় স্টুডেন্টস গার্ডিয়ানস অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রামের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করে সাড়া জাগিয়েছিলেন ময়মনসিংহের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অ্যাডিশনাল এসপি) আবু আহাম্মদ আল মামুন।
সময়ের অভাবেই বেশিরভাগ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেসবুক বা ইমেইল-আইডি ব্যবহার করেন না বলে মনে করেন ময়মনসিংহের তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহাম্মদ। তিনি বলেন, ফেসবুক ব্যবহার করার মতো সময় পাওয়া যায় না। এ কারণেই অনেকের মতো আমিও ফেসবুকে নেই।
একই বিষয়ে মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল করিম বলেন, আমি ফেসবুকে নিয়মিত হবার চেষ্টা করছি। আগ্রহ থাকলেও সময়ের অভাবে সব সময় থাকা সম্ভব হয় না।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৫
জেডএম/