ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রোববার পঞ্চগড় পাক হানাদার মুক্ত দিবস

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৫
রোববার পঞ্চগড় পাক হানাদার মুক্ত দিবস

পঞ্চগড়: রোববার (২৯ নভেম্বর) পঞ্চগড় পাক হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক ১৭ দিন পূর্বে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে বাংলাদেশের প্রথম এলাকা হিসেবে পঞ্চগড় পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়।

এ দিন পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর সদস্যরা পঞ্চগড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙ্গালিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেও ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত পঞ্চগড় মুক্ত ছিল।

অবশেষে পাকবাহিনী সড়কপথে পঞ্চগড়ের দিকে অগ্রসর হয় এবং ১৭ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তারা পঞ্চগড় দখল করে নেয়। দখলের দিনে যুদ্ধে টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা পিছিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা আশ্রয় নেয় মাগুরমারীতে। তারা ভজনপুরের চাওয়াই নদীর সেতু ডিনামাইট দিয়ে ভেঙ্গে দেয়। এ কারণে আক্রমণকারী পাকহানাদার বাহিনী শেষ স্থান হিসেবে অবস্থান নেয় অমরখানায়। চাওয়াই নদীর ব্রিজ ডিনামাইট দিয়ে ভেঙ্গে দেয়ায় পাকসেনারা জেলার সর্বশেষ বিন্দু তেঁতুলিয়ায় প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়কাল এই জেলার তেঁতুলিয়া তাই মুক্তাঞ্চল হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে।   

৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে পঞ্চগড় ছিল ৬ (ক) সেক্টরের আওতাধীন। এ অঞ্চলে মোট ৭টি কোম্পানীর অধীনে ৪০টি মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।  

জুলাই মাসে এ এলাকার বিভিন্ন স্থানে গেরিলা যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। মুক্তিযোদ্ধাদের অব্যাহত গেরিলা আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার আলবদররা প্রাণভয়ে পালাতে শুরু করে।

নভেম্বর মাসে মুক্তিবাহিনীর সাথে ভারতীয় মিত্রবাহিনী যৌথভাবে পাকবাহিনীর একের পর এক ক্যাম্পে হামলা চালায়। এতে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। একে একে  নুতন নতুন এলাকা হানাদার  মুক্ত হতে থাকে।
এভাবেই দীর্ঘ সাড়ে ৭ মাস মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধারা।

মরণ কামড় হিসেবে মুক্তি ও মিত্রবাহিনী পর্যায়ক্রমে পাকবাহিনীর ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে ২০ নভেম্বর অমরখানা, ২৫ নভেম্বর জগদলহাট, ২৬ নভেম্বর শিংপাড়া, ২৭ নভেম্বর তালমা, ২৮ নভেম্বর পঞ্চগড় সিও অফিস এবং ওই একই দিনে আটোয়ারী ও মির্জাপুর মুক্ত করে। এই আক্রমণের ফলে অবশেষে ২৯ নভেম্বর পঞ্চগড় পাক হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর ট্যাঙ্ক ও পদাতিক বাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমণে পাকবাহিনী পরাজিত হয়ে পঞ্চগড় ত্যাগ করে। পঞ্চগড় থেকে পিছু হটে ময়দানদীঘি ও বোদায় অবস্থান নেয় পাক বাহিনী। পাকহানাদার মুক্ত হয় গোটা জেলা।

লড়াইয়ে পাক বাহিনী পরাস্ত হয়ে পিছু হটার সময় পঞ্চগড় শহরটির বাজারসহ সকল অবকাঠামো নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে যায়।  

মুক্ত দিবস উপলক্ষে পঞ্চগড় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আনন্দ র‌্যালি, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভাসহ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বলে সংসদের জেলা ইউনিট কমান্ডার মির্জা আবুল কালাম দুলাল বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৫
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।