ঢাকা: দেশব্যাপী সোমবার (৩০ নভেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে পণ্যে পাটজাত ব্যাগ ব্যবহারে অভিযান। ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি এই ছয়টি পণ্যের মিল কারখানা, বাজার ও এসব বহনের পরিবহনে অভিযান পরিচালিত হবে।
সরকারি ও বেসরকারি খাতে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে মাঠে নামার এই উদ্যোগ পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় বেশ আগে থেকেই নিয়েছে। সোমবার থেকে সেই পূর্বঘোষিত অভিযান শুরু হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র, পরিবেশ ও বন, নৌ পরিবহন, সড়ক পরিবহন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, পাট অধিদফতর, পরিবেশ অধিদফতর, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, বিআইডাব্লিউটিএ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও ৠাবের সহায়তায় এসব অভিযান পরিচালিত হবে। বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসকদের নেতৃত্বে সোমবার সকাল থেকে অভিযান শুরু হবে। অভিযান চলবে রাজধানীতেও।
রোববার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় পাট অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. মুয়াজ্জেম হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ। এখন অভিযান পরিচালনার পালা। প্রাথমিকভাবে সাতদিনব্যাপী এ অভিযান পরিচালিত হবে।
তিনি জানান, দেশের স্বার্থে যার যার অবস্থান থেকে এই অভিযানকে সহায়তা করা উচিত। আশা করা হচ্ছে, অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন হবে।
এদিকে, রোববার সকালে সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম সাংবাদিকদের জানান, ‘কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড, ব্যাংক ঋণ সুবিধা বন্ধ, লাইসেন্স বাতিল, আইআরসি বা ইআরসি বাতিলের বিধান রেখে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ বাস্তবায়নে কাল (সোমবার) থেকে সাঁড়াশি অভিযান চালু হচ্ছে।
পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সড়ক, মহাসড়ক, সংশ্লিষ্ট পণ্যের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ও ঢাকার প্রবেশমুখে এসব অভিযান পরিচালিত হবে।
সূত্র আরও জানায়, প্রাথমিক অবস্থায় বাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যানে পরিবহন করা ৫০ কেজির প্লাস্টিক বা পলিথিনের বস্তা ব্যবহার রোধে অভিযান পরিচালিত হবে। এরপরে এক থেকে পাঁচ, দশ থেকে বিশ কেজির প্লাস্টিক বা পলিথিনের বস্তা ব্যবহার রোধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
অভিযান মনিটরিংয়ের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবদের সমন্বয়ে ১০টি পৃথক মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) পরিচালক (বিপণন) কর্নেল লেনিন কামাল বাংলানিউজকে জানান, যে পরিমান পাটের বস্তার প্রয়োজন হবে তা মজুদ আছে। এ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।
সাজা হিসেবে যা থাকছে: পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০ এর ধারা ১৪ অনুযায়ী পাটের মোড়ক ব্যবহার না করলে অনূর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। এ অপরাধ পুনঃসংঘটিত হলে সর্বোচ্চ দণ্ডের দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
এ ছাড়া ছয়টি পণ্যে পাটের মোড়ক ব্যবহার না করলে ব্যাংক ঋণ সুবিধা প্রদান করা হবে না। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সেইসঙ্গে চাতাল মিল মালিকরা পাটের ব্যাগ ব্যবহার না করলে খাদ্য মন্ত্রণালয় তাদের লাইসেন্স বাতিল করবে।
পাশাপাশি আমদানি ও রফতানিকালে পাটের ব্যাগ ব্যবহার না করলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আইআরসি বা ইআরসি বাতিল করবে।
সূত্র জানায়, পাটের বহুমুখী ব্যবহার ও সম্প্রসারণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ২০১০ সালে প্রথমে আইন প্রণয়ন করা হয়। ওই আইনে সরকারি ও বেসরকারি খাতে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। এতে ২০ কেজির চেয়ে বেশি পণ্যের মোড়কীকরণের ক্ষেত্রে এ আইন প্রযোজ্যর কথা উল্লেখ ছিল।
এরপর ২০১৩ সালে আইনে কিছুটা সংশোধন আনা হয়। এ সময় ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো হচ্ছে, প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারীদের পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে আইন দ্বারা নির্ধারিত পণ্যের মোড়কের জন্য ডব্লিউপিপি (প্লাস্টিক) ব্যাগের উৎপাদন ও সরবরাহ না করা, অটোরাইস, হাস্কিং ও চাতাল মালিকদের লাইসেন্স দেয়ার সময় পাটের ব্যাগ ব্যবহার করার শর্তারোপ, শর্ত ভঙ্গ করলে লাইসেন্স বাতিল এবং ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি এই ছয়টি পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়ার সময় পাটের ব্যাগ ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা প্রভৃতি।
সংশ্লিষ্টর কর্মকর্তারা জানান, এ অভিযান গত অক্টোবর মাসে শুরু করার কথা ছিল। আইন বাস্তবায়ন ও বিভিন্ন বিষয়ে যাচাই বাছাই করে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রাথমিকভাবে ছয়টি পণ্যে মোড়কীকরণে পাটের ব্যাগের ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে পর্যায়ক্রমে আরো পণ্য এর আওতায় আনা হবে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৫
একে/আরএইচ