পদ্মাপাড় (মাওয়া ও জাজিরা) ঘুরে এসে: মাওয়া ঘাট চৌরাস্তা ছেড়ে ভেতর দিয়ে মিনিট দুয়েকের পথে বাঁয়ে যেতেই চোখে পড়লো সারি সারি টিলা! আরও সামনে এগোতে স্পষ্ট হলো, ওগুলো টিলা নয়, স্তূপ করে রাখা কংক্রিটের ব্লক। খানিক কাছে এগিয়ে ব্লক তৈরির কারখানায় ঢুকতেই কানে বাজতে থাকলো বিশালাকৃতির মেশিনের আওয়াজ- ঘট ঘট ঘটর ঘট...! এভাবে অবিরাম চলছে মেশিনটা।
কেবল এই একটা মেশিন নয়, পদ্মার এপারে অর্থাৎ মাওয়ায় এভাবে আরও তিনটি স্থানে মেশিনে তৈরি হচ্ছে ইট-সুরকির সঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড বসুন্ধরা সিমেন্টের মিশ্রণে লাখো ব্লক। একইভাবে তৈরি হচ্ছে পদ্মার ওপার জাজিরায়ও, তিনটি স্থানে। কী হবে এতো ব্লক দিয়ে?
জবাব দিলেন ব্লক তৈরিতে দায়িত্বরত বাংলাদেশি কর্মী মইনুল, ‘পদ্মা নদীশাসনে ব্যবহার করা হবে এ ব্লক। ’ আরও স্পষ্ট করে তিনি বোঝালেন, পদ্মার ওপর স্বপ্নের সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। এ সেতু নির্মাণ করাটা যতোখানি চ্যালেঞ্জের, ততোখানিই চ্যালেঞ্জের পদ্মার ভাঙন রোধ করে নাব্য ধরে রাখা। পদ্মার ভাঙন রুখে সঠিক স্রোতপ্রবাহ আনতেই নদীশাসন করা হবে।
অনেক সংশয় আর প্রশ্নকে উড়িয়ে দিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে ১২ ডিসেম্বর। পদ্মাপাড়ে গিয়ে সেদিন এ কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূল সেতুর নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর চূড়ান্ত প্রস্তুতির সঙ্গে নদীশাসন কার্যক্রমের শেষ মুহূর্তের তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে। রোববার (২৯ নভেম্বর) সকালে প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রার চূড়ান্ত প্রস্তুতি বিষয়ে পদ্মার দুই পাড় মাওয়া (মুন্সীগঞ্জ) ও জাজিরায় (শরীয়তপুর) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তার বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে পদ্মার দু’পাড়ে মহাকর্মযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করে বাংলানিউজ টিম। সেতুর পাইলিং স্থাপনসহ অন্যান্য কাজের মতো ব্লক নির্মাণেও রীতিমত কর্মযজ্ঞ দেখা যায়।
নির্মাণ কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় এ নদীশাসনের কাজ করছে চীনের কোম্পানি ‘সিনো হাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড’। আর এ কোম্পানির অধীনে চীনা-বাংলাদেশি মিলিয়ে ১০ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন কেবল ব্লক তৈরিতেই।
মাওয়া চোরাস্তার পাশেই ব্লক তৈরির কারখানাটিতে কর্মরত সিনো হাইড্রো’র এক কর্মী বলেন, কেবল এক কারখানায়ই প্রতিদিন তৈরি হয় আড়াই হাজার ব্লক। আর এপারের তিন এবং ওপারের তিন মিলিয়ে মোট ছয় কারখানায় প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে ১৫ হাজারের মতো ব্লক।
এভাবে কতোসংখ্যক ব্লক তৈরি করা হবে? ওই কর্মী হেসে বললেন, ‘কোটি কোটি। যেহেতু দু’পাড় মিলিয়ে প্রায় ১৪ কিলোমিটার এলাকা নদীশাসন হবে, সেহেতু কোটি কোটি ব্লকই লাগবে। এই ব্লকের সঙ্গে থাকছে জিও ব্যাগ, বোল্ডার, রড ও এ জাতীয় বাঁধ নির্মাণের উপকরণ’।
মাওয়ায় ব্লক তৈরির কর্মযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করে পদ্মা পাড়ি দিয়ে জাজিরায় ছুটে যায় বাংলানিউজ টিম। সারি সারি ব্লকের স্তূপ দেখা যায় সেখানেও। মেশিনের কর্মযজ্ঞে মগ্ন চীনা-বাংলাদেশি কর্মীরা।
সেখানে সিনো হাইড্রো’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, প্রায় আট হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে নদীশাসনের প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে ১৩ দশমিক ৭৩ ভাগ শেষ হয়েছে। কাজ দ্রুতই এগিয়ে চলছে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আগামী ১২ ডিসেম্বর পদ্মার জাজিরা পাড়ে ব্লক ফেলে নদীশাসন কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই পদ্মার দু’পাড়ে পড়তে থাকবে কোটি কোটি ব্লক। এতে নিশ্চিত হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দু’পাড়ের সুরক্ষা। নিশ্চিত হবে প্রমত্তা পদ্মার স্বাভাবিক নাব্য।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৫
এসআই/এইচআর/এসএ/এইচএ/এমএমকে
** পদ্মা সেতুর অগ্রগতি ২৭ শতাংশ
** কর্মযজ্ঞের অনুমান করা কঠিন
** পদ্মাপাড়ে থরে থরে ব্লকের টিলা!
** কারখানায় তৈরি হয়ে শত শত পাইল নামছে নদীতে
** মন্ত্রীর চোখে জল!
** ভেতরে সদলবলে
** মন্ত্রীর না!
** পোস্টার আর ব্যানারে যত আপত্তি!
** মন্ত্রীর মুগ্ধতা
** পদ্মাপাড়ে চলছে প্রস্তুতি সভা
** ১৭৯তম বার পদ্মাপাড়ে মন্ত্রী
** পদ্মাপাড়ে বাংলানিউজ টিম
** কুয়াশার ভোর