পদ্মা (মাওয়া) থেকে ফিরে: পুরো নদী জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ক্রেন। ঠিক বিলে বসে থাকা শিকারী ‘বক’ ঝাঁকের মতো।
বাংলাদেশের এই সেতুটি শুধু আর একটি সেতুতে সীমাবদ্ধ নেই। দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে একটি বিশাল ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের সক্ষমতা ও মর্যাদার প্রশ্ন।
বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, পদ্মা সেতু জিডিপিতে এক শতাংশ অবদান রাখবে। কিন্তু অর্থনৈতিক ইস্যুকে ছাপিয়ে উঠেছে রাজনৈতিক ইস্যু। যে কারণে পুরো দেশবাসির নজর এখন পদ্মার দিকে। পদ্মার উভয় তীর ও প্রস্তাবিত সেতু পয়েন্টের কর্মযজ্ঞ চোখে পড়ার মতো। দিনরাত বিরামহীন চলছে কাজ।
পদ্মা সেতু প্রকল্প সুত্র জানিয়েছে, মূল ব্রিজের কাজে নিয়োজিত রয়েছে ৯২টি ক্রেন, যেগুলো দিয়ে পরীক্ষামূলক পাইলিং শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। আগামী ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন মূল পাইলিং।
অন্যদিকে নদী শাসনের কাজে যুক্ত রয়েছে ৪৫টি ক্রেন ও ড্রেজার মেশিন। আরও রয়েছে মাটি পরীক্ষার যন্ত্র। পুরো নদী চষে বেড়াচ্ছে এসব বৃহাদাকার যন্ত্র। শুধু কি নদীতেই কর্মযজ্ঞ? নদীর তীরে (মাওয়া-জাজিরা) বিশাল এলাকা জুড়েও রয়েছে শত শত স্বয়ংক্রিয় মেশিনারিজ। এখানেই বসানো হয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ।
সেই ওয়ার্কসপে তৈরি হচ্ছে ঢাউস সাইজের পাইলিংয়ের খাঁচা। যে খাঁচার ভেতর দিয়ে সদলবলে চলাফেরা করা যায়। এর পাশেই চলছে স্প্যান তৈরির জন্য ওয়ার্কসপ স্থাপনের কাজ।
ওয়ার্কসপগুলো থেকে একাধিক রেল লাইন টেনে নদীর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। আর নদীর ঘাঁটে স্থাপন করা হয়েছে জেটি। যার মাধ্যমে এসব মালামাল নিয়ে গাঁথা হবে বাংলাদেশের স্বপ্ন।
ঢাকা থেকে সেতু পয়েন্টে যাওয়ার সময় কয়েক কিলোমিটার আগেই হাতের বামে পড়বে মূল সেতু নির্মাণের সাইট অফিস। দেখলে মনে হবে পরিপাটী করে সাজানো কোনো ছোট শহর।
এখানে রয়েছে একাধিক ভবন। অফিসের পাশাপাশি রয়েছে কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবনও। পাশেই রয়েছে সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প। বাদ যায়নি, চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থাও।
প্রকল্প অফিস পার হয়ে কিছুদূর এগিয়ে যেখান থেকে সেতু শুরু হবে তার বাম দিকে রয়েছে বিশাল সার্ভিস এরিয়া। এখানে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরার সিমেন্ট দিয়ে তৈরি হচ্ছে কংক্রিটের ব্লক। দৈনিক ১৫ হাজার ব্লক তৈরি করা হচ্ছে এই কারখানাটিতে। একইভাবে নদীর ওপারে জাজিরা পয়েন্টেও সমসংখ্যাক ব্লক তৈরির কারখানা স্থাপন করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ।
এর পাশেই রয়েছে পাইলিং ফেব্রিকেশন ইয়ার্ড। এর উত্তরে কোল ঘেঁষে নির্মাণাধীন স্প্যান তৈরির ওয়ার্কসপ। এখানে তৈরি করা হবে স্প্যান। আর এখান থেকে ক্রেনের সাহায্যে স্প্যান চলে যাবে নদীতে।
অন্যদিকে জাজিরা পয়েন্টে রয়েছে নদী শাসনের কাজ পাওয়া চীনা সিনাহাইড্রো’র সাইট অফিস। এটাকেও দেখতে মিনি শহরের মতো মনে হবে। স্থানীয়রা জানালেন, রাতে যখন এসব স্থাপনা ও যন্ত্রপাতিতে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে ওঠে তখন নয়ন ভরে যায়।
এখানে এলে মুগ্ধ হয়ে যাই। রাতে আলোক ঝলমলে পদ্মা দেখলে মনে হয় বিদেশের কোনো শহরে এসেছি, এমন মন্তব্য করলেন খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি আসা যাওয়ার মধ্যেই রয়েছেন। সুযোগ পেলেই ছুটে যান কাজ দেখতে।
শরীয়তপুর-২ আসনের এমপি সাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী বললেন, এখানে এলে গর্বে বুকটা ভরিয়ে যায়। স্বপ্ন দেখি সেতুর উপর দিয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটে চলছে গাড়ি।
শরিয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, সেতুর কার্যক্রম দেখলে কি অনুভূতি হয়, বলে বোঝাতে পারব না। ভাবতেই প্রশান্তির অনুভূত হয়।
তিনি বলেন, ব্রিজটি নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্রই ঠেকাতে পারেনি অগ্রযাত্রা। যেভাবে কাজ চলছে তাতে আর মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। বাংলাদেশের এগিয়ে চলার প্রতীক হয়ে থাকবে এই পদ্মাসেতু।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৫
এসআই/আরএইচ
** পদ্মা সেতুর অগ্রগতি ২৭ শতাংশ
** পদ্মাপাড়ে থরে থরে ব্লকের টিলা!
** কর্মযজ্ঞের অনুমান করা কঠিন
** কারখানায় তৈরি হয়ে শত শত পাইল নামছে নদীতে
** মন্ত্রীর চোখে জল!
** ভেতরে সদলবলে
** মন্ত্রীর না!
** পোস্টার আর ব্যানারে যত আপত্তি!
** মন্ত্রীর মুগ্ধতা
** পদ্মাপাড়ে চলছে প্রস্তুতি সভা
** ১৭৯তম বার পদ্মাপাড়ে মন্ত্রী
** পদ্মাপাড়ে বাংলানিউজ টিম
** কুয়াশার ভোর