ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর আপিল আবেদনের শুনানিতে আসামিপক্ষের প্রথম দিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার (০১ ডিসেম্বর) পর্যন্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন মুলতবি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
সোমবার (৩০ নভেম্বর) সকাল থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন নিজামীর আইনজীবী এস এম শাহজাহান। তিনি এ পর্যন্ত নিজামীর বিরুদ্ধে আনা প্রথম দুই অভিযোগে সাক্ষীদের সাক্ষ্যের বিষয়ে সম্পূর্ণ এবং তৃতীয় অভিযোগে সাক্ষীদের সাক্ষ্যের বিষয়ে আংশিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
মঙ্গলবার ছাড়াও আগামী বুধবার (০২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত তিনদিন আসামিপক্ষ ও ০৭ ডিসেম্বর একদিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন রাষ্ট্রপক্ষ। ০৮ ডিসেম্বর আসামিপক্ষের জবাবি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ আপিল মামলার শুনানি।
এর আগে গত ০৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ছয় কার্যদিবসে ট্রাইব্যুনালের রায়সহ মামলার নথিপত্র উপস্থাপন শেষ হয়েছে।
০৯ সেপ্টেম্বর প্রথমদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এরপর নিজামীর পক্ষে এক নম্বর অভিযোগ উত্থাপন করেন অ্যাডভোকেট-অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন। ১৭, ১৯, ২৩, ২৪ ও ২৫ নভেম্বর পরবর্তী পাঁচদিন শুনানি করেন এস এম শাহজাহান।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ২৯ অক্টোবর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আনোয়ারুল হক ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন নিজামীকে।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ২৩ নভেম্বর আপিল করেন নিজামী। ৬ হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার আপিলে মোট ১৬৮টি কারণ দেখিয়ে ফাঁসির আদেশ বাতিল করে খালাস চেয়েছেন তিনি।
তবে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় আপিল করেননি রাষ্ট্রপক্ষ।
আপিল শুনানিতে নিজামীর পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন তার প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নিজামীর আপিলের সার-সংক্ষেপ দুই সপ্তাহের মধ্যে দাখিলের জন্য রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এরপর উভয়পক্ষ সার-সংক্ষেপ জমা দেন।
নিজামীর বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যাসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ৮টি অর্থাৎ ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে।
প্রমাণিত চারটি অর্থাৎ সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়িসহ দু’টি গ্রামে প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে গণহত্যা ও প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ (২ নম্বর অভিযোগ), করমজা গ্রামে ১০ জনকে গণহত্যা, একজনকে ধর্ষণসহ বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ (৪ নম্বর অভিযোগ), ধুলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে গণহত্যা (৬ নম্বর অভিযোগ) এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (১৬ নম্বর অভিযোগ) দায়ে নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।
অন্য চারটি অর্থাৎ পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিন হত্যা (১ নম্বর অভিযোগ), মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র (৩ নম্বর অভিযোগ), বৃশালিখা গ্রামের সোহরাব আলী হত্যা (৭ নম্বর অভিযোগ) এবং রুমী, বদি, জালালসহ সাত গেরিলা যোদ্ধা হত্যার প্ররোচনার (৮ নম্বর অভিযোগ) দায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
৫ এবং ৯ থেকে ১৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এসব অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি। এগুলোও ছিল হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের উসকানি ও প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৫
ইএস/এএসআর
** আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে