ঢাকা: রাজধানীর কলাবাগান মাঠের কাছে বিশাল ডাস্টবিন। সবসময় এখানে বর্জ্যের স্তূপ থাকে।
যানজটের কারণে এ ডাম্পিংয়ের কাছে বাস আটকে থাকলে যাত্রীদের নাকে হাত চেপে বসে থাকতে দেখা যায়। তবে এ এলাকার বাসিন্দাদের বিষয়টি সয়ে গেছে। বর্জ্যের গন্ধে আর নাক চেপে স্থানটি পার হতে হয়না তাদের।
ছেলেকে নিয়ে এ পথ দিয়েই স্কুলে যেতে হয় স্থানীয় বাসিন্দা আরিফা খানম সুপ্তির। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কারণে সকাল-বিকেল ময়লার স্তূপের পাশ দিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। সময় মতো পরিষ্কার করলে ময়লার যন্ত্রণা থেকে বেঁচে যাই আমরা।
এ চিত্র নগরীর বেশিরভাগ এলাকারই। কারণ প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য জমা হয়, সে পরিমাণে অপসারণ করা সম্ভব হয় না। যে কারণে বর্জ্যের গন্ধে অতিষ্ট নগরবাসী।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্র জানায়, ডিএসসিসি’তে মোট ৫৭টি ওয়ার্ডে দৈনিক প্রায় ৩৫শ’ টন বর্জ্য জমা হয়। এর মধ্যে ডিএসসিসি তার নিজস্ব যানবাহন ও যন্ত্রপাতি দিয়ে ১৮শ’ টন বর্জ্য অপসারণ করে। এরপরও শুধু ডিএসসিসি’তেই প্রতিদিন ১৭শ’ টন বর্জ্য সময়মতো অপসারণ করা সম্ভব হয় না।
সূত্র আরও জানায়, ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর ও দক্ষিণ দু’ভাগে বিভক্ত হওয়ার পর থেকে ডিএসসিসি’র বর্জ্য অপসারণ, মার্কেট, ড্রেন ও রাস্তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও যানবাহন অপর্যাপ্ততার কারণে বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে।
বিভক্ত হওয়ার পর যন্ত্রপাতি ও যানবাহনও দু’ভাগে বিভক্ত হয়। ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৯৩টি ওয়ার্ডের ৫৭টিই ঢাকা দক্ষিণে। নতুন ওয়ার্ডগুলোও ডিএসসিসি’র মধ্যে পড়েছে। চাহিদার তুলনায় ডিএসসিসি’র যানবাহন ও যন্ত্রপাতি কম। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সুবিধাদি বিশেষ করে জাইকার সহায়তায় প্রাপ্ত যানবাহনের বেশিরভাগই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ডিএসসিসি’র।
কামরাঙ্গীরচরের নতুন দু’টি ওয়ার্ড বুড়িগঙ্গা নদীর ওপাড়ে অবস্থিত। যা সিটি করপোরেশন ব্যবস্থাপনার আওতায় ছিল না। এখন এ নতুন দু’টি ওয়ার্ড ডিএসসিসি’কেই দেখতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসি’র প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ রকিব উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ৫৭টি ওয়ার্ডে দৈনিক প্রায় ৩৫শ’ টন বর্জ্য জমা হয়। এর মধ্যে ডিএসসিসি তার নিজস্ব যানবাহন ও যন্ত্রপাতি দিয়ে বর্তমানে ১৮শ’ টন বর্জ্য অপসারণ করে। আমাদের যে যন্ত্রপাতি আছে তা দিয়ে পুরোপুরি কাভার করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন সময়মতো সব বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে না। অনেক সময় নগরবাসী খালবিলসহ যেখানে-সেখানে বর্জ্য ফেলছেন।
জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) সূত্র জানায়, ঢাকা শহরের সলিড ওয়েস্ট ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে ঢাকা সিটি করপোরেশন ও জাইকার মধ্যে ২০০৫ থেকে ২০১৫ মেয়াদে ক্লিন ঢাকা মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কিছু অগ্রাধিকারভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
এদিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন জমা হচ্ছে প্রায় ৭ হাজার টন বর্জ্য। এর মধ্যে মাত্র ৩ হাজার ৮শ’ টন বর্জ্য ডাম্পিং করা হয়। বাকি ৩ হাজার ২শ’ টন বর্জ্য অপসারণের অভাবে পড়ে থাকে। যে কারণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে দেখা যায় পঁচা বর্জ্যের স্তূপ।
** ‘ট্যাকা তো দিতাছি ছেবা-ছুবা তো পাইন্যা’
** নাগরিকদের জন্য মেয়রের সময় মাসে ৬ ঘণ্টা!
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৫
এমআইএস/আরএম/জেডএস