ময়মনসিংহ: ওষুধের দোকানের নামের শেষে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে ইংরেজি ‘ফার্মেসি’ শব্দ। ‘বাড়িভাড়া’ কে লেখা হচ্ছে ‘টু লেট’।
কখনো-কখনো ইংরেজি অক্ষর ব্যবহার না করে বাংলা বানানে লেখা হচ্ছে ইংরেজি শব্দ। কোথাও কোথাও আবার নামফলকে ইংরেজি বাংলার মিশ্র ব্যবহার। বাংলায় নামফলক লেখার বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায় থাকলেও শিক্ষা ও সংস্কৃতির নগরী ময়মনসিংহের সর্বস্তরে নিজের ভাষার বদলে চলছে এমন ইংরেজি বাতিক।
ফলে উপেক্ষিত থাকছে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা। সরেজমিনে নগরীর সানকিপাড়া, জিলা স্কুল মোড়, নতুন বাজার, গাঙ্গিনারপাড় মোড় ও দুর্গাবাড়ি রোডসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘুরে আধুনিকতার নামে এমন ইংরেজিপ্রীতি লক্ষ্য করা গেছে।
জানা গেছে, আশির দশক পর্যন্ত নামফলকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো বাংলাকে। কিন্তু গত কয়েক বছরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামের ক্ষেত্রে ইংরেজি লেখার হিড়িক পড়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য নগরীর সানকিপাড়া এলাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং সেন্টারের নাম দেওয়া হয়েছে ‘লজিক পয়েন্ট’। সুদৃশ্য নামফলকে বাংলা-ইংরেজির মিশেলে একটি নাম ‘সীমান্ত কোচিং হোম’।
নিজেদের প্রতিষ্ঠানের নামের বেলায় ইংরেজিকে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়ে এ দুই প্রতিষ্ঠানের দু’জন বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই নামের আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
নগরীর দুর্গাবাড়ি রোড শহরের ওষুধপাড়া হিসেবে পরিচিত। এ সড়কের দুই পাশে রয়েছে দুই শতাধিক ওষুধের দোকান। বাংলা ও বিদেশি শব্দের মিশেলে এসব ওষুধের দোকানের নাম রাজ ফার্মেসি, রূপালী ফার্মেসি, মিতালী ফার্মেসি, ইসলাম ফার্মেসি, কাকলী ফার্মেসি, মিতুল ফার্মেসি, মেডিসিন মার্ট, মেডিকেল মার্ট ইত্যাদি। নামকরণে ইংরেজি-বাংলার এমন মিশ্রণকে অনেকেই বিদ্রুপ করে বলেন ‘বাংলিশ’।
হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে নিজেদের অজ্ঞতার কথাও প্রকাশ করেন কেউ কেউ। তাদেরই একজন কাকলী ফার্মেসির কর্মচারী তাপস। এ যুবককে প্রশ্ন করলে উত্তর দেন, ‘কোর্টের আদেশের কথা জানি না। এখানকার সব দোকানেই তো একই অবস্থা। সবাই পরিবর্তন করলে আমরাও করবো’।
নারী ও পুরুষের সাজসজ্জার দোকানের নামের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। নগরীর জিলা স্কুল রোড এলাকার একটি দোকানের বাংলা অক্ষরে লেখা নাম ‘নিউ পার্সেনা’।
নগরীর নতুন বাজার, সি কে ঘোষ রোডসহ বিভিন্ন এলাকার বহুল পরিচিতি খাবারের দোকান, সেলুন কিংবা কিংবা বিপণিবিতানের নাম ইংরেজিতে লেখা ‘দাবা রেস্টুরেন্ট’, ‘সারিন্দা রেস্টুরেন্ট’, ‘স্টার ম্যানস সেলুন’, ‘মেনজ লুক’, ‘মফিজ উদ্দিন ইনডেক্স প্লাজা’, ‘বেস্ট বাইট বেকারি এন্ড কনফেকশনারী, ‘ফর ইউ’ ইত্যাদি।
নগরীর দুর্গাবাড়ি রোডের জনতা ব্যাংকের বাণিজ্যিক শাখা না লিখে লেখা হয়েছে কর্পোরেট শাখা। ক্রমশ বাড়ছে এমন প্রবণতা।
ভাষাগতভাবে নামের দিকটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (কেবি) কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ভাস্কর সেনগুপ্ত। নগরীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামফলকে বাংলা উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বাংলার বদলে ইংরেজি নামকরণ জাতি হিসেবে আমাদের চরম দৈন্যতা ও ব্যর্থতা’।
‘ভাষার জন্য একমাত্র বাঙালি জাতিই ত্যাগ স্বীকার করেছে। অথচ উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে ভাষা চর্চার বিষয়টি। নামকরণের এ বিষয়ে জনসচেতনতা দরকার। মননে ও চিন্তায় বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে’।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ময়মনসিংহের দফতরগুলোতে সাইনবোর্ডের নাম বাংলায় লেখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এবং তার বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলায় লেখার জন্য সচেতনতা দরকার।
বাংলার মাধ্যমেই তাদের প্রচারণার কৌশল ঠিক করা প্রয়োজন বলেও মত দেন জেলা প্রশাসক।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৫
এএসআর