ঢাকা: সাময়িক বন্ধের পর ফেসবুক খুলে দিলেও ভবিষৎ নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখছে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এজন্য কড়া নজরদারিতে রয়েছে ফেসবুক।
অনলাইন মাধ্যমে ভবিষ্যতে যাতে কেউ নিরাপত্তার জন্য হুমকি না হয়ে ওঠে সেজন্য সতর্ক সরকার।
ফেসবুক খোলার একদিন পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, তারা ফেসবুকে কড়া নজরদারি করছেন।
রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কথা ভেবে ফেসবুক বন্ধ বা এ ধরনের প্রক্রিয়ার ইঙ্গিতও রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
বন্ধ হওয়ার ২৩ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক খুলে দেয় সরকার। এরআগে ১৮ নভেম্বর সরকার ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপসহ কয়েকটি অ্যাপস বন্ধ করে দেয়।
ওইদিন উচ্চ আদালতে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের রিভিউ খারিজ হয়ে যায়। ২২ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দু’জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
সরকারের ভাষ্য, এরআগে যুদ্ধাপরাধে দু’জন জামায়াত নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ও আরেক জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পর ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে নাশকতা চালায় জামায়াত-শিবির। ওই সময় সাঈদীকে ‘চাঁদে দেখা গেছে’ বলেও ছবি পোস্ট করা হয় ফেসবুকে।
ফেসবুক খুলে দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় তার অফিসিয়াল ফেসবুক পাতায় এ কথাই জানিয়েছেন।
তিনি লেখেন, ফেসবুক আবার বাংলাদেশে খুলে দেওয়া হয়েছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে জামায়াতি সন্ত্রাসীরা গুজব ছড়িয়ে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে একে (ফেসবুক) ব্যবহার করে। যে জন্য যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদ ও সাকার ফাঁসির আগে এটা বন্ধ করা হয়েছিলো। গণহত্যাকারীদের পক্ষ হয়ে চালানো ব্যাপক আন্তর্জাতিক অপপ্রচারের মুখেও এটা শুধুই আমাদের আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতার জন্যই স্বাধীনতা যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদদের প্রতি সুবিচার করা সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশে ফেসবুক খুলে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয়ের ভূমিকা ছিলো মুখ্য। গত ৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরে জয় ফেসবুক খোলার উদ্যোগ নেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ফেসবুক পাতায় জয়ের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি লেখেন, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের গর্ব, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অশেষ ধন্যবাদ বাংলাদেশে ফেসবুক পুনরায় খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য।
সামাজিক যোগগাযোগের এই মাধ্যম বন্ধ থাকায় আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) ও টেলিকম অপারেটরগুলোও ক্ষতির মুখে ছিলো। অনলাইনভিত্তিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও বিপাকে পড়েন। তাদের পক্ষ থেকে ফেসবুক খুলে দেওয়ার দাবি উঠছিলো বারবার।
ফেসবুক বন্ধ থাকায় নাশকতা ও অপরাধ কম হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী।
ফেসবুক বন্ধসহ সরকারের কিছু পদক্ষেপে এবার প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে গুজব ওঠেনি বলেও বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান।
বিটিআরসি ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, ফেসবুকে একজনের অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হলেও অন্য মাধ্যমগুলোতে তা কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য ফেসবুক খুলে দেওয়া হয়েছে, তবে নিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ রয়েছে অন্য অ্যাপসগুলো।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম তার ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থে সরকার এতদিন সাময়িকভাবে ফেসবুকসহ অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রেখেছিলো। সরকার ফেসবুক পুনরায় খুলে দিয়েছে।
ফেসবুক বন্ধ থাকার সময়ে দেশের জনগণ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম তাদের সাময়িক অসুবিধার পরেও দেশ ও জনগণের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ফেসবুক ব্যবহার থেকে বিরত থেকে যে দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন তার জন্য আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান তারানা হালিম।
এখন ভবিষতের নিরাপত্তার বিষয়গুলো মাথায় রাখছে সরকার। সরকার এবং রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা ও কটূক্তি করায় ফেসবুক খোলার পর বিকেলে রাজধানী থেকে ‘মজা লস’র অ্যাডমিন রেফায়েতকে গ্রেফতার করে র্যাব।
র্যাবের উপ-পরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং) রুম্মান মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, রেফায়েতকে বিভিন্ন সময়ে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। ফেসবুক খোলার পরও নজরদারিতে ছিলো। এরপর তাকে গ্রেফতার করা হয়।
টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, আশা করি আমরা ভবিষ্যতেও রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সরকার গৃহীত যেকোনো পদক্ষেপ একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের মতো মেনে নেবো।
ফেসবুক খোলার পর নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে রুম্মান মাহমুদ বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে ফেসবুকে এ ধরনের রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী কার্যকলাপ কড়া নজরদারির মধ্যে থাকবে।
বিটিআরসি জানায়, চলতি বছরের শুরুতে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধের সময় ভাইবার ও হোয়াটসঅ্যাপসহ কয়েকটি অ্যাপ কিছু দিনের জন্য বন্ধ ছিলো।
এর আগে ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের সময় ফেসবুক বন্ধ করেছিলো সরকার।
আর ২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ২৬০ দিন অনলাইন ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব বন্ধ রাখা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৫
এমআইএইচ/এনএইচএফ/এএ
** ফেসবুক পেজ ‘মজা লস’র অ্যাডমিন আটক
** খুললো ফেসবুক