ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চলনবিলের সুখ দুঃখ -শেষ

সরিষা ফুলের মধুতে বাক্স ভরাতে ব্যস্ত মৌ-চাষীরা

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
সরিষা ফুলের মধুতে বাক্স ভরাতে ব্যস্ত মৌ-চাষীরা ছবি: আরিফ জাহান/বাংলানিউজেটোয়েন্টিফোর.কম

চলনবিল থেকে ফিরে: পলিথিনে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে প্রত্যেকটি কাঠের বাক্স। ভেতরে রয়েছে ৮টি কাঠের তৈরি ফ্রেম।

মোমের তৈরি সিট। আর সেই বাক্সের ভেতর এক রানীকে ঘিরে রয়েছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মৌমাছি।
 
সারিবদ্ধভাবে বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের পাশে একটি ফাঁকা জায়গায় রাখা হয়েছে। প্রত্যেকটি বাক্সে এ প্রক্রিয়ায় এক সপ্তাহ রাখা হয়। এরপর বাক্স খুলে মধু সংগ্রহ করা হয়।

এ পদ্ধতিতে একেকটি বাক্স থেকে সপ্তাহে ৮-১০ কেজি হারে মধু পাওয়া যায়।
 
বর্তমানে চলনবিলে এ পদ্ধতি অবলম্বন করে বিভিন্ন এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক মৌ-চাষী বাণিজ্যিকভাবে মধু আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মধু আহরণে চলনবিলের বিভিন্ন এলাকায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা এসব মৌ-চাষীরা সরিষা ক্ষেতের পাশে বাক্স রেখে অস্থায়ীভাবে ঘর উঠিয়ে অবস্থান করছেন।
 
সরেজমিনে চলনবিলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বাণিজ্যিকভাবে মৌ-চাষীদের মধু আহরণের এমনই দৃশ্য দেখা যায়।
 
স্থানীয়রা বাংলানিউজকে জানান, প্রত্যেক বছর রবি মৌসুমে চলনবিলের বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, সিংড়া, তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, চাটমোহর, ভাঙুড়া ও ফরিদপুর উপজেলায় বাক্স পদ্ধতি অবলম্বন করে সরিষা ফুল থেকে কোটি কোটি টাকার মধু সংগ্রহ করা হয়।
 
এ বছরও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। সাতক্ষীরা, গাজীপুর, জামালপুর, শরীয়তপুর, মাগুরা, বগুড়া, যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক মৌ-চাষী মধু সংগ্রহের জন্য চলনবিলের সরিষার ক্ষেত ঘেঁষে ফাঁকা জমি ভাড়া নিয়ে হাজার হাজার বাক্স বসিয়েছেন।
 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বগুড়া অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃহত্তর বগুড়া জেলায় ২৭ হাজার ৭৯৯ হেক্টর, জয়পুরহাটে ১১ হাজার ৬৪০ হেক্টর, পাবনায় ২৯ হাজার ৯১৩ হেক্টর ও সিরাজগঞ্জে ৫৮ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে বারি-৯, ১৪ ও ১৫, টোরি-৭ ও সেতি জাতের সরিষার চাষ করা হয়েছে।

এ পর্যন্ত এসব সরিষা ফসল থেকে ১৫ হাজার ১০০ কেজির মতো মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। সিংহভাগ মধুই চলনবিল এলাকার সরিষা ক্ষেত থেকে আহরণ করা হয়েছে।
 
সাতক্ষীরা থেকে আসা আশিকুর ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে জানান, তারা চলনবিলের তাড়াশ উপজেলার চকরসুল্লাহ গ্রাম ১৮ দিন আগে মধু সংগ্রহের জন্য অস্থায়ীভাবে অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। সরিষা ক্ষেত ঘেঁষে ১৮০টি বাক্স বসিয়েছেন। এসব বাক্স থেকে সপ্তাহে ২০ মণের মতো মধু সংগ্রহ করেন। এ পদ্ধতিতে সরিষা ফসল হতে নভেম্বরের শেষ থেকে সর্বোচ্চ দেড় মাস পর্যন্ত মধু আহরণ করা যায়।
 
তারা আরো জানান, চলনবিলের এসব খাঁটি মধু প্রাণ, স্কয়ার, এপিসহ বিভিন্ন বড় মানের কোম্পানিগুলো কিনে থাকে। এছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি ব্যবসায়ীরা অর্ডার দিয়ে এখানকার মধু কিনে থাকেন। পাইকারি হিসেবে ২০০ টাকায় প্রতি কেজি মধু বিক্রি করা হয়।
 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বগুড়া অঞ্চলের অতিরিক্তি পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ হযরত আলী বাংলানিউজকে জানান, সরিষা ফুলের মধু একেবারে খাঁটি। এ মধুতে কোনো ভেজাল থাকে না। চলতি রবি মৌসুমে সরিষা ফুল থেকে বিপুল পরিমাণ মধু সংগ্রহের আশা প্রকাশ করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
এমবিএইচ/এএসআর

** ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে প্রাকৃতিক মৎস্যভাণ্ডার!
**  জলাধারের বুকে হলুদ-সবুজের খেলা!
**  অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডে বিপন্ন বিশাল জলরাশি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।