কুমিল্লা থেকে: ক’মাস আগেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে বারবার দুঃসংবাদ শুনতে হতো। বিশেষত, কুমিল্লার গোমতী-সেতু-২ থেকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকা পর্যন্ত সড়কে দুর্ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।
মুহূর্তে মুহূর্তে সেই দুঃসংবাদ শোনার দিন কমে আসছে। কমে আসছে দুই লেনের এক সড়কে ‘বিপজ্জনক ওভারটেকিংয়ের’ ঝুঁকি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে উঠছে চার লেনের বিশাল সড়ক। স্বীকৃতি পাচ্ছে ‘আগের চেয়ে নিরাপদ’ ও ‘সময় বাঁচানো’র সড়কের।
সোমবার (০৪ জানুয়ারি) সকালে ঢাকার সায়দাবাদ থেকে কুমিল্লার কোটবাড়ী পৌঁছানোর পথে পথে এ ‘সুসংবাদ’ শোনাচ্ছিলেন এশিয়া ট্রান্সপোর্টের যাত্রীরা।
এ ট্রান্সপোর্ট থেকে বিশ্বরোডের কোটবাড়ী পয়েন্টে নেমেও শোনা গেলো এই ‘সুসংবাদ’র প্রতিধ্বনি।
মহাসড়কের মাঝখানে নির্মাণাধীন ডিভাইডারে দাঁড়িয়ে আলাপ হচ্ছিলো বাসচালক মো. আলী মিয়ার (৩৫) সঙ্গে।
তিনি বলছিলেন, বিশ্বরোড আগের চেয়ে এখন একটু নিরাপদ হইছে। গাড়ি এখন খুব দ্রুত সাঁ করে টান দিয়ে চলে যেতে পারে। ওভারটেক করার বিপদটা একেবারে কেটে গেছে।
যেসব পয়েন্টে সংযোগ সড়ক রয়েছে, সেসব পয়েন্টেও যানজট ও বিপদ কমানোর জন্য ফ্লাইওভার-ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে। এর মধ্যে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড ও সংলগ্ন রেলওয়ে লাইনের ওপর ফ্লাইওভার ব্রিজ এবং ফেনীর মহিপাল মোড়ে চার সড়কের সংযোগস্থলে ফ্লাইওভার ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ উল্লেখযোগ্য বলে তিনি জানান।
বাজার ও বাসস্ট্যান্ডের কারণে বিশ্বরোডে যে যানজটের সৃষ্টি হতো এখন তা প্রায় নেই বললেই চলে। চার লেন প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিশ্বরোডের বাজারগুলো সড়ক থেকে সরিয়ে আঞ্চলিক সড়কের পাশে বা নিচের দিকে বিস্তৃত হয়েছে, যোগ করেন তিনি।
পয়েন্টে লাইনম্যান হিসেবে কাজ করছিলেন আবুল বাশার (৪৭)। তার সঙ্গে আলাপে জানা যায়, মহাসড়কের উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে আঞ্চলিক সড়কেও।
তিনি বলেন, মহাসড়কের নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে আঞ্চলিক সড়কগুলোও গতি পেয়েছে। এই সড়কগুলো বিস্তৃত হওয়ার কারণে আঞ্চলিক সড়কগুলোতে বাস-মিনিবাসও চলাচল পারবে।
তবে তিনি জানান, প্রকল্পের কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় যে পরিমাণ গতি মহাসড়কে আশা করা হচ্ছে, তা এখনও আসেনি। চট্টগ্রাম পর্যন্ত চার লেনের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে মহাসড়কে থাকবে না যেমন যানজট, ঠিক তেমনি কমে আসবে যাতায়াতের সময়ও।
আবুল বাশারা স্থান উল্লেখ করে বলেন- সিদ্দিরপুর, বড় আলমপুর, ছোট আলমপুর, গন্ধমতি, সালমানপুর, সানন্দাসহ কুমিল্লার মহাসড়কের কাছাকাছি এলাকাগুলো চার লেন প্রকল্পের ছোঁয়ায় উন্নত হয়ে উঠছে। কেবল এই এলাকাগুলোই নয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম-জনপদ-বাজারেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া।
তবে, ২০১১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ আরও দ্রুত শেষ হতে পারতো বলে মন্তব্য করেন ঢাকা-কুমিল্লা রোডে নিয়মিত চলাচলকারী যাত্রী রফিক।
তিনি বলেন, এই চার লেনের কাজ আরও দ্রুত শেষ হতো যদি বরাদ্দের টাকা ঠিকঠাক ব্যবহার করা যেতো। সরকারের পক্ষ থেকে যদি এ বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া হয়, তবে এর সুফল শিগগির জনগণ পেতে থাকবে।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের তথ্যমতে, সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ১শ ৯২ কিলোমিটারব্যাপী চার লেন প্রকল্পের কাজ ২০১১ সালে শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফায় বেড়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ১শ ৪২ কিলোমিটার সড়কে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৬
আইএ/এমএ/এইচএ/এএ/এসএস