ঢাকা: সরকার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন দলীয়ভাবে করার আইন সংশোধনের পর আচরণবিধি সংশোধন করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া না হলেও নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেছেন, বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। তা দু’একদিনের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন হলেই তা চূড়ান্ত আকারে গেজেট প্রকাশ করবে ইসি।
এক্ষেত্রে ইসির চূড়ান্ত খসড়া বিধিমালাটিতে মন্ত্রী-এমপিসহ সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নির্বাচনী প্রচারণায় সুযোগ রাখা হয়নি। তবে নির্বাচনী কার্যক্রমে তাদের অংশ নিতেও নিষেধ করা হয়নি।
সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলতে প্রধানমন্ত্রী, সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধী দলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সম পদমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়রকে বোঝানো হয়েছে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচনপূর্ব সময়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না এবং কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচনপূর্ব সময়ে নির্বাচনী প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এখানে সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কোনো বাধা-নিষেধ দেওয়া হয়নি।
নির্বাচনপূর্ব সময় বলতে তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশ করা পর্যন্ত সময়কে বোঝানো হয়।
এদিকে নির্বাচনী প্রচারণার সময়ের সঙ্গাতেও পরিবর্তন আনছে নির্বাচন কমিশন। অন্যসব নির্বাচনে ভোটগ্রহণের ২১ দিন আগে থেকে প্রচারণার সুযোগ দেওয়া হয়। আর ইউপি নির্বাচনের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচারণা চালানো যাবে না।
বিধিমালা বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী রাজনৈতিক দল কিংবা তার মনোনীত কোনো প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারবে না। অর্থাৎ অন্যান্য নির্বাচনের সেই ২১ দিনের সময়সীমা এখানে রাখা হচ্ছে না।
এদিকে প্রচারণার ক্ষেত্রে পথসভা এবং ঘরোয়া সভা ছাড়া যেকোনো ধরনের শোভাযাত্রা বা মিছিল-মশাল মিছিলের ওপরও থাকছে নিষেধাজ্ঞা। এক্ষেত্রে পথসভা বা ঘরোয়া সভা করতে হলেও স্থান এবং সময় উল্লেখ করে পুলিশ প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টা আগে অবহিত করার বিধান রাখা হয়েছে। আবার জনগণের চলাচলে অসুবিধা হয় এমন কোনো স্থানে পথসভা বা পথসভার জন্য মঞ্চ তৈরি করা যাবে না।
অন্যদিকে প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কেউ সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য সরকারি সার্কিট হাউজ, রেস্ট হাউজ বা ডাকবাংলো ব্যবহার করতে বা অবস্থান করতে পারবেন না প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।
প্রার্থী তার সাদা-কালো পোস্টার বা লিফলেটে নিজের ছবি ও প্রতীক ছাড়া অন্য কারো ছবি ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে দলীয় প্রার্থী হলে কেবল দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহার করতে পারবেন। কোনো অবস্থাতেই মিছিলে নেতৃত্ব দান বা প্রার্থনারত অবস্থার ছবি ব্যবহার করা যাবে না। পোস্টার, লিফলেট দেয়াল বা যানবাহনে লাগানো যাবে না। ঝুলিয়ে প্রচারণা চালানো যাবে।
প্রতীক হিসেবে জীবন্ত কোনো প্রাণী ব্যবহার করা যাবে না। প্রতীকের আকার হতে হবে ৩ মিটারের মধ্যে। প্রার্থীরা নির্বাচনী পথসভা বা প্রচারের কাজে কেবল একটি মাইক বা উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের মোটরযান ব্যবহার করে মিছিল বা শো-ডাউন করে প্রচারণা চালানো যাবে না। ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে।
চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প হবে ৩টি। সদস্য (মেম্বার) পদের প্রার্থীরা একটির বেশি ক্যাম্প করতে পারবেন না। ক্যাম্পে টিভি, ভিসিআর, ভিসিডি, ডিভিডি ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না। বন্ধ রাখতে হবে দেয়াল লিখনও। তোরণ নির্মাণ, ঘের, প্যান্ডেল বা ক্যাম্প স্থাপন এবং আলোকসজ্জা করাও নিষেধ।
আগামী মার্চে দেশের মেয়াদ উত্তীর্ণ ইউপিগুলোতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সে লক্ষ্যেই এখন বিধিমালা সংশোধনের কাজ করছে। এক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তফসিল দিয়ে মার্চের শেষের দিকে ভোটগ্রহণে যাবে ইসি। প্রথম দফায় সাত শতাধিক ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৬
ইইউডি/এএসআর