ঢাকা: জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় কোনো বাতি নেই। সীমানা সংলগ্ন ফুটপাতে ধুলোর মধ্যে বসে রয়েছেন বেকার নার্সরা।
মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকালে শুরু হওয়া বাংলাদেশ ডিপ্লোমা বেকার নার্স অ্যাসোসিয়েশনের অবস্থান ধর্মঘট চলছে রাতেও।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিনা আক্তার জানান, যতদিন পর্যন্ত ব্যাচ, মেধা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নার্সদের নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু না হবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলন চলবে।
হাজারের বেশি উপস্থিত বেকার নার্সদের দৃষ্টি তখন বক্তার দিকে।
নিজেদের দুরাবস্থার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আমলাদের দোষারোপ করছেন নার্সরা। তাদের দাবি বাংলাদেশের নার্সরা চরম সংকটে রয়েছেন। এ কারণে জনগণ গুণগত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সার্ভের তথ্যানুসারে, প্রতি ওয়ার্ডে প্রায় ১০০ জন রোগীর জন্য তিন শিফটে মাত্র ১০ থেকে ১২ জন নার্স কর্মরত রয়েছে। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী নার্স-রোগীর আনুপাতিক হার ৪ জন সাধারণ রোগীর জন্য ১ জন নার্স। আর গুরুতর একজন রোগীর ক্ষেত্রে একজন নার্স প্রয়োজন বলেও জানান আন্দোলনরত নার্সরা।
নার্স নিয়োগের পূর্বের চলমান নিয়ম বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং ব্যাচ, মেধা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে নার্সদের দাবি জানিয়ে আসছি বলেও জানান একাধিক নার্স।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে নার্সিং পেশার সার্বিক অগ্রগতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ৮ ডিসেম্বর।
এরপরও ১০ ডিসেম্বর ২০১৫ সালের এক সভায় দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি উপেক্ষা করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) কর্তৃক পরীক্ষার মাধ্যমে ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ নার্স নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী দুই ধাপে ব্যাচ, মেধা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সাড়ে ৬ হাজার নার্স নিয়োগ দেন। তাহলে ওই ব্যাচের শিক্ষার্থী হয়ে আমরা কেন পরীক্ষার মাধ্যমে নার্স নিয়োগ পাব? -এমন প্রশ্ন করেন সংগঠনের মহাসচিব ফারুক হোসাইন।
এ সময় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিনা আক্তার বলেন, যদি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা হয় তাহলে নার্স নিয়োগে বাণিজ্য কেউ ঠেকাতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ৬ আগস্ট ডাক্তার নার্সের আনুপাতিক হার সমন্বয়ে আনার লক্ষ্যে ১০ হাজার নার্স নিয়োগের ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে নার্স নিয়োগের বয়স ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৬ বছর করার অনুমোদনও দেন তিনি।
কিন্তু, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে পঞ্চমবারের মতো নার্সদের রাস্তায় এসে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন রিনা আক্তার।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৬
এফবি/এমআইকে/এমজেএফ