ঢাকা: দেশে জঙ্গি তৎপরতা রুখতে ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীতে ভাড়াটিয়া নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেয়ে ইতোমধ্যে রাজধানীর ৪৯টি থানার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভাড়াটিয়া তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রাজধানীতে প্রায় দেড় কোটি মানুষের বাস। যার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই ভাড়াটিয়া। এসব ভাড়াটিয়ার কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান বা তথ্য সরকারের কাছে নেই।
ফলে বিভিন্ন সময় রাজধানীর নানা প্রান্তে বাসাভাড়া নিয়ে জঙ্গি তৎপরতাসহ নানা অপরাধ চালাচ্ছে দুর্বৃত্তরা।
সম্প্রতি বেশ কিছু অভিযানেও এর সত্যতা মিলেছে। গত ডিসেম্বরে মিরপুর শাহ আলী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ ৭ জঙ্গিকে আটক করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
এ সময় সেখান থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম, আত্মঘাতী ‘সুইসাইড ভেস্ট’ জব্দ করা হয়। মূলত এরপর থেকেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এসব তৎপরতা রুখতেই রাজধানীর বাড়ি বাড়ি ভাটাটিয়া নিবন্ধন শুরু করা হয়। এ নিবন্ধন কার্যক্রমের মাধ্যমে জঙ্গি তৎপরতা রোধসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে প্রতিহত করা যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এতে রাজধানীতে মোট কতো মানুষ ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করেন তারও একটি পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে। এছাড়া পুলিশ সব ভাড়াটিয়া ও তার পরিবারের সব সদস্যের ডাটাবেজ তৈরি করবে।
এরপর কেউ জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকলে সহজেই তাকে খুঁজে বের করতে পারবে পুলিশ। আর কেউ যদি জঙ্গি কর্মকাণ্ডে নতুন করে জড়ায় তারও অনুসন্ধান সহজ হবে।
এ প্রসঙ্গে ডিএমপি-এর উপ কমিশনার (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার বাংলানউজকে বলেন, ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে জঙ্গি তৎপরতা ও সাধারণের নিরাপত্তার জন্য। সেই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে।
‘পুলিশের সংগ্রহ করা এসব তথ্য ডাটাবেজ হিসেবে রাখা হবে। যা পরবর্তীতে নিরাপত্তার স্বার্থে কাজে লাগানো যাবে। ’
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাড়াটিয়ার যেসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে- এর মধ্যে ভাড়াটিয়ার নাম, স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ভাড়াটিয়ার পরিবারের সব সদস্যের নাম. মোবাইল/ফোন নম্বর, আগে যে বাসায় ভাড়া ছিলেন সেই বাসার ঠিকানা এবং ছবি।
এমনকি গৃহকর্মীদের নাম ও মোবাইল নম্বরও সংগ্রহ করছে পুলিশ।
মোহাম্মদপুর থানার শিয়া মসজিদ বাজার এলাকার ভাড়াটিয়া রিংকু ঘোষ বলেন, পুলিশ তার বাসায় গিয়ে প্রতিটি সদস্যের নাম, শিশুদের স্কুলে লেখাপড়ার সব তথ্যসহ সব ধরনের তথ্য নিয়েছে। আগে কোন বাসায় ছিলাম তারও তথ্য নিয়েছে। স্থায়ী এবং অস্থায়ী ঠিকানা নির্ধারিত ফরমে পূরণ করে স্বাক্ষরসহ নিবন্ধন করতে হয়েছে।
‘পুলিশ ছাড়াও বাসার মালিকের কাছে একই ফরমে সব ধরনের তথ্য দিতে দিয়েছি। ’
জানা যায়, এর আগে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিকের মাধ্যমে সংগ্রহের উদ্যোগ নেয় পুলিশ। তবে তা কার্যকর হয়নি। এরপর নিজেদের উদ্যোগে ভাড়াটিয়া নিবন্ধন শুরু করে পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুধু মিরপুরই নয়। গত ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি এমকে-১১ স্নাইপার রাইফেল, প্রায় ২০০ রাউন্ড গুলি এবং বিস্ফোরকসহ সেনাবাহিনীর পোশাকও উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
একই দিন রাতে গাজীপুরের জুগিতলায় জঙ্গি আস্তনায় র্যাবের অভিযানে দুই জঙ্গি মারা যান।
পরদিন ২৫ ডিসেম্বর রাজশাহীর বাগমারায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের একটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় আত্মঘাতী বোমা হামলায় একজন মারা যান।
বাংলাদেশ সময়: ০২২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৬
এসএমএ/এমএ