ঢাকা: সাংবাদিক নেতা আলতাফ মাহমুদের মৃত্যুতে গভীর শোকাহত তার বন্ধু-সহকর্মী-স্বজনেরা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর পর মরদেহ দেখতে এসে তার দীর্ঘদিনের সাংবাদিক সহকর্মীরা বলছেন, সাংবাদিকতা ছাড়াও গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও সোচ্চার ছিলেন আলতাফ মাহমুদ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমএসএসইউ) রোববার (২৪ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে লাইফ সাপোর্ট খুলে দিয়ে আলতাফ মাহমুদকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
মেরুদণ্ডসহ ঘাড়ের ব্যথা নিয়ে ১৪ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৬৪ বছর বয়সী আলতাফ মাহমুদ। ২১ জানুয়ারি সকালে তার স্পাইনাল কডের (মেরুদণ্ডের হাড়) অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পরপরই আইসিইউতে নেওয়া হয় আলতাফ মাহমুদকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, তার অপারেশন ঠিক ছিল। তিনি ডায়াবেটিকের সমস্যায় ছিলেন। রাত তিনটার দিকে তার অবস্থা খারাপ হতে থাকে।
হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. কণক কান্তি বড়ুয়ার তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছিল।
ডা. কণক সাংবাদিকদের বলেন, সর্বশেষ তার সঙ্গে দুপুরে কথা হয়, তিনি বলেছেন, ‘বেটার বেটার’।
বাংলাদেশ ফেডারাল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি আলতাফ মাহমুদের চিকিৎসায় অনুদান সহায়তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে আলতাফ মাহমুদের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্যসচিব মরতুজা আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুর রহমান, সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ওমর ফারুক, শাবান মাহমুদসহ অন্যান্য সহকর্মীরা।
আলতাফ মাহমুদের মৃত্যুতে সাংবাদিকতা জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি শীর্ষ পর্যায়ের দক্ষ সাংবাদিক ছিলেন, তার মৃত্যুতে সাংবাদিকতা জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো।
সরকারের পক্ষ থেকে তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন তথ্যমন্ত্রী। সরকার তার পরিবারের পক্ষে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, সাহসী ব্যক্তি হিসেবে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন আলতাফ মাহমুদ। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করে সমবেদনা জানান প্রেসসচিব।
বিএফইউজে’র একাংশের সভাপতি আলতাফ মাহমুদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি তথ্য মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ কাজে যুক্ত ছিলেন। তার মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো।
সাংবাদিক ইউনিয়নে তার অবদানের কথা স্মরণ করে সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, তিনি যে চেতনা নিয়ে কাজ করতেন সেই চেতনাকে এগিয়ে নিতে তারা কাজ করবেন।
স্ত্রী তাহমিনা মাহমুদ ছাড়াও দুই মেয়ে তনু ও অনু এবং ছেলে আসিফ মাহমুদসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন আলতাফ মাহমুদ। হাসপাতালে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তার স্বজন ও সহকর্মীরা।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) এবং জাতীয় প্রেসক্লাবে জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপায় বাবার কবরের পাশে আলতাফ মাহমুদকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার শ্যালক মাসুদ।
দৈনিক ডেসটিনির নির্বাহী সম্পাদক ছাড়াও কর্মজীবনে আলতাফ মাহমুদ দৈনিক খবর, গণকণ্ঠ, অর্থনীতির কাগজ, সাপ্তাহিক খবরসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কাজ করেছেন বলে তার সহকর্মীরা জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৬
এমআইএইচ/জেডএফ/এসএইচ