জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্যদের বেতন ৯৬ ভাগ এবং ভাতা প্রায় ৩ গুণ বাড়িয়ে আইন সংশোধনের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে জাতীয় সংসদে।
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে সংবিধানের ৮২ অনুচ্ছেদ অনুসারে সংসদকার্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এ সংক্রান্ত তিনটি পৃথক বিল উত্থাপন করেন।
পরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করতে বিল তিনটি আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করা হয়।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হওয়ায় এবং দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা সামঞ্জস্য রক্ষা করে পুণঃ নির্ধারণের লক্ষ্যে বিদ্যমান আইনের অধিকতর সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিল উপস্থাপন করা হলো।
গত বছরের ১৯ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই বেতন ভাতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়। আইনের প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নতুন হারের এই বেতন কার্যকর হবে গত বছরের ১ জুলাই থেকে। তবে ভাতা কার্যকর হবে চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে। এর আগে ২০০৯ সালে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের বেতন বাড়ানো হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় ৩১ জন মন্ত্রী, ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী ও দুজন উপমন্ত্রী রয়েছেন। আর মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা রয়েছেন পাঁচজন।
সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির বেতন ৬১ হাজার ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রপতি বিমানে ভ্রমণ করলে তার বিমা আগের ১৫ লাখ টাকার পরিবর্তে আইন সংশোধনের পর ২৭ লাখ টাকা হবে। তবে রাষ্ট্রপতির স্বেচ্ছাধীন তহবিলে আগের মতই দুই কোটি টাকা থাকবে।
সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর বেতন ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। সুবিধা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি বাড়িতে থাকলে প্রতিমাসে ভাড়া বাবদ পাবেন ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। আইন সংশোধনের পর প্রধানমন্ত্রীর বিমান ভ্রমণের বিমার সীমা ১৪ লাখ টাকার পরিবর্তে ২৫ লাখ টাকা হবে। । এছাড়া ঢাকার বাইরে গেলে প্রধানমন্ত্রীর দৈনিক ভাতা ১ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা এবং স্বেচ্ছাধীন তহবিলের আকার ১ কোটি থেকে বাড়িয়ে দেড় কোটি টাকা করা হয়েছে।
মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে পূর্ণ মন্ত্রী ও সমপর্যায়ের উপদেষ্টাদের বেতন ৫৩ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ লাখ ৫ হাজার টাকায় উন্নীত প্রস্তাব করা হয়েছে। মন্ত্রীদের ব্যয় নিয়ামক ভাতা ৬ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করা হচ্ছে। মন্ত্রীরা বেসরকারি বাড়িতে বসবাস করলে বাসা ভাড়া পাবেন ৮০ হাজার টাকা। আগে এর পরিমাণ ছিল ৪৫ হাজার টাকা। তবে মন্ত্রীরা স্বেচ্ছায় বেসরকারি বাড়িতে বসবাস করলে এখন ২৫ হাজার টাকা ভাতা পান। এছাড়া মন্ত্রীদের বিমানভ্রমণে বিমার সীমা ৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৮ লাখ, দৈনিক ভাতা ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা এবং স্বেচ্ছাধীন তহবিলের আকার ৪ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী ও সমপর্যায়ের উপদেষ্টাদের বেতন ৪৭ হাজার ৮০০ থেকে বাড়িয়ে ৯২ হাজার টাকা করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রীদের ব্যয় নিয়ামক ভাতা ৪ হাজার থেকে বাড়িয়ে সাড়ে সাত হাজার টাকা, বেসরকারি বাড়িতে বসবাসের ক্ষেত্রে ভাতা ৪০ হাজার থেকে ৭০ হাজার, বিমানভ্রমণে বিমার সীমা ৫ লাখ থেকে ৮ লাখ, দৈনিক ভাতা ৭৫০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা এবং স্বেচ্ছাধীন তহবিলের আকার ৩ লাখ বাড়িয়ে সাড়ে ৭ লাখ টাকা হচ্ছে।
উপমন্ত্রীর বেতন ৪৫ হাজার ১৫০ থেকে বাড়িয়ে ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া উপমন্ত্রীদের ব্যয় নিয়ামক ভাতা ৩ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা, বেসরকারি বাড়িতে বসবাসের ভাতা ৪০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭০ হাজার টাকা, বিমানভ্রমণে বিমার সীমা ৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৮ লাখ টাকা, দৈনিক ভাতা ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৫০০ টাকা এবং স্বেচ্ছাধীন তহবিলের পরিমাণ ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৬
এসএম/আরআই
** রাষ্ট্রপতির ভাষণ প্রত্যাখ্যান এমপি তাহজীবের
** দেশে কোটিপতির সংখ্যা ১ লাখের বেশি
** ব্যক্তি পর্যায়ে করদাতা সাড়ে ১৭ লাখ
** বাজারে জাল টাকার প্রাদুর্ভাব রয়েছে