ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রিকশার জমাও ১০০, অ্যাপ্রোনের জমাও ১০০!

রীনা আকতার তুলি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৬
রিকশার জমাও ১০০, অ্যাপ্রোনের জমাও ১০০! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

“বাপু সেই দিন শেষ। আগে মালিকের রিকশা চালাইলে খালি রিকশার জমাই (দৈনিক ভাড়া) দেওয়া লাগতো। এখন জামার (অ্যাপ্রোন) ভাড়াও দেওয়া লাগে।”

ঢাকা: ‘চাচা বালুঘাট বাজার যাবেন?’ ‘যাইমু। ’ ‘ভাড়া কত?’ ‘৫০ টাকা।

’ ‘কেন? ৩০ টাকা দিয়েই তো যাই!’ ‘হেই দিন শেষ, যাইতে হইলে ৫০ টাকাই দিতে হইবো, কমে যাইতে পারুম না। ’ 

কেন বেশি দিতে হবে জানতে চাইলেই বয়স্ক রিকশাচালক বললেন আসল কথা “বাপু সেই দিন শেষ। আগে মালিকের রিকশা চালাইলে খালি রিকশার জমাই (দৈনিক ভাড়া) দেওয়া লাগতো। এখন জামার (অ্যাপ্রোন) ভাড়াও দেওয়া লাগে। ”

রিকশা চালকের নাম পরশুরাম। রাজধানীর জিয়া কলোনি থেকে বাউনিয়া বাজার এলাকায় ১০ বছর ধরে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। আগে ভাড়া নিয়ে কারও সঙ্গে হাউ-কাউ করতেন না। বেশি চাওয়ারও অভ্যাস ছিল না। কিন্তু এখন রিকশা মালিকের ‘জমা’র কাছে ‘জিম্মি’ হয়ে গেছেন তিনি। সম্প্রতি জিয়া কলোনি থেকে বাউনিয়া বাজার যাওয়ার পথে কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে। তিনি জানান, আগে রিকশা চালাতে ফরমাল কোনো পোশাক পরতে হতো না। এখন এই এলাকায় রিকশা চালাতে হলে হলুদ রঙের জামা (অ্যাপ্রোন) পরতে হয়। এখন ড্রেসকোড ছাড়া রিকশা চালাতে দেওয়া না।  

পরশুরামের সঙ্গে আলাপের প্রেক্ষিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই অ্যাপ্রোনেই দেওয়া থাকে সংশ্লিষ্ট রুটে চলাচলকারী রিকশার লাইসেন্স নম্বর।

পরশুরাম অভিযোগ করে বলেন, “পেটের দায়ে কাম কইরা খাউন লাগে, সারাদিনে রিকশা চালাইয়া যে আয় হয়, তা দিয়ে আট জনের সংসার চলে না। অভাবের কারণে পোলাপাইনের ঠিকমত খাউন দিতে পারি না। এসবের মধ্যে প্রতিদিন ড্রেসের ভাড়া এক’শ টাকা দিতে হয়। রিকশার জমা ১০০ টাকাসহ মোট ২০০ টাকা প্রতিদিন দিতে হয়। ”

পরশুরামের পাশাপাশি একই মালিকের রিকশা ভাড়ায় নিয়ে চালানো রফিক, জলিল ও আলমের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, তাদের মালিক সামসুল হকের শ’খানেক রিকশা আছে। কিন্তু এই রুটে চলাচলে সব রিকশার জন্য অ্যাপ্রোন পাননি তিনি। পেয়েছেন ৪০টির। প্রতিদিন তার সেই ৪০টি রিকশাই চলে। প্রত্যেক চালক রিকশার সঙ্গে সঙ্গে অর্ধবেলায় অ্যাপ্রোনের জমা (ভাড়া) দেন ৫০ টাকা, আর পুরো দিন চালালে অ্যাপ্রোন ভাড়া দিতে হয় এক’শ টাকা। অর্থাৎ প্রত্যেক রিকশায় প্রতিদিন অ্যাপ্রোনসহ মালিককে জমা দিতে হয় ২০০ টাকা।

রিকশা ভাড়ার বাইরে অ্যাপ্রোনেরও ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে যোগাযোগ করলে মালিক সামসুল হক বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন, অ্যাপ্রোনগুলো লাইসেন্স করা এবং তিনি এক বছরের জন্য কিনেছেন।  প্রতিটির জন্য তাকে দিতে হয়েছে ৫০০ টাকা।

এককালীন ৫০০ টাকায় কিনে প্রতিদিন একশ’ টাকা কেন ভাড়া নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে সামসুল হক বলেন, “শুধু আমি নই। যাদের রিকশা আছে সবাই এভাবে টাকা নেয়। আমাদের তো এটা ব্যবসা। লাভ-লস বলে তো একটা কথা আছে। এক বছর পর আবারও অ্যাপ্রোন কিনতে হবে। ”

এ বিষয়ে কথা হয় আরেক রিকশা মালিক শাহীন আলমের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “এই ব্যবসার সিস্টেমই এ রকম। অ্যাপ্রোন দেওয়ার পর থেকে শুধু আমি নই। সবাই  ভাড়া নিচ্ছে। বিশ্বাস না হল যাচাই করে দেখতে পারেন। ”

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৬
আরএটি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।