ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘বাল্যবিবাহ আইনে বিশেষ ধারা বাস্তবতার নিরিখে’

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৬
‘বাল্যবিবাহ আইনে বিশেষ ধারা বাস্তবতার নিরিখে’

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের বিশেষ ধারা বাস্তবতার নিরিখে রাখা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাল্যবিবাহ আইন নিয়ে ঘাবড়াবার, চিন্তিত হবার কিছু নেই। আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নিতে হবে।’

সংসদ ভবন থেকে: বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের বিশেষ ধারা বাস্তবতার নিরিখে রাখা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাল্যবিবাহ আইন নিয়ে ঘাবড়াবার, চিন্তিত হবার কিছু নেই। আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নিতে হবে।

আইনে সংযুক্ত বিশেষ বিধানের যুক্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অত্যন্ত বাস্তবসম্মত একটা চিন্তা এটা। যেটা সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। ঢাকা শহরে বাস করে গ্রামের অবস্থা জানা যায় না। গ্রামে যার একটা উঠতি বয়সী মেয়ে আছে সে জানে।

বুধবার (০৭ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোন আইনই রিজিড (অপরিবর্তিত) হতে পারে না। অনাকাঙ্ক্ষিত যদি কিছু হয় তার জন্য সমাধানের সুযোগ দিতে হবে। যারা এই আইন নিয়ে সমালোচনা করে তাদের দায়িত্ব কম। কারণ তারা এনজিও করে পয়সা কামায়।

তিনি আরও বলেন, ‘যারা কোনদিন গ্রামে বাস করেনি, গ্রামের সমাজ সম্পর্কে জানে না, শুধু একবার গেলাম আর দেখলাম, কথা বললাম এটা সমাজ জানা হয় না। দিনের পর দিন গ্রামে বসবাস করলে, গ্রামের বাস্তব অবস্থা, গ্রামের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উপলব্ধি করা যায়, জানা যায়। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব কিছু বিবেচনা করে বাল্যবিবাহ আইন করেছি। বাস্তবতাকে সামনে রেখেই করা হয়েছে। কিছু কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এটা নিয়ে অনেক কথা বলছে। যারা কথা বলছেন, তারা একটানা দুই-চার বছর গ্রামে বসবাস করেনি। এ সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই নাই।

আমাদের দেশে কিছু বিষয় আছে, সে বিষয়গুলো নিয়ে তারা কখনও ভাবে না। যেহেতু বাস্তবতা থেকে তারা অনেক ঊর্ধ্বে। রাজধানীতে বসবাস করে, রাজধানীর পরিবেশ তারা দেখেন। বাস্তব অর্থে গ্রামীণ অবস্থা সম্পর্কে তারা জানে না। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ১৮ বছর বিয়ের বয়স নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। কিন্তু আপনারা চিন্তা করেন, একটা মেয়ে যে কোন কারণে হোক যদি ১২/১৩ বছর বয়সে প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলো, তাকে অ্যাবরশন করানো গেলো না। যে শিশুটি জন্ম নেবে সেই শিশুটির অবস্থানটা কোথায় হবে? তাকে সমাজ গ্রহণ করবে? তাকে কি বৈধভাবে নেবে? নেবে না। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ রকম যদি কোন একটা ঘটনা ঘটে তাহলে কী হবে? যে শিশুটার জন্ম হলো তার কী হবে? যে মেয়েটা সন্তান জন্ম দিলো তার অবস্থা কী? যদি এ ধরনের কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে সেখানে যদি বাবা-মা এবং কোর্টের মতামত নিয়ে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে মেয়েটা বেঁচে গেলো। আর যে বাচ্চাটা হলো সেটা বৈধতা পেলো। এই শিশুটি একটা ভবিষ্যত পেলো। ’

তিনি বলেন, ‘ইউরোপসহ ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিতে অনেক দেশে ১৪-১৬ বছর বিয়ের বয়স। ইউরোপ-আমেরিকায় টিন এজ মায়ের সংখ্যা অসংখ্য। এটা একটা সামাজিক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে গেছে। কারণ, এই সমস্ত বাচ্চা মেয়েরা ১২/১৩/১৪ বছরে মা হয়ে যায়। তারা কিন্তু অ্যাবরশন করাতে চায় না। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাচ্চাটাকে যদি লেখাপড়া করাতে হয় তাহলে ওই দেশে কিন্তু প্রশ্ন করে না বৈধ সন্তান না অবৈধ সন্তান, বাবা-মায়ের নাম কী এটা কিন্তু জিজ্ঞেস করবে না। কিন্তু আমাদের দেশে জিজ্ঞেস করবে বাপের নাম কী মায়ের নাম কী? কোথায় কী সমস্ত তথ্য দিতে হবে। বাচ্চাকে বিয়ে দিতে গেলে ছেলে হোক মেয়ে হোক, অবৈধ সন্তান বিয়ে হবে না। চাকরি দেবে না।

ওয়ের্স্টান কান্ট্রিতে এটা কোনো বিষয় না। আমাদের দেশে এটা নেই। বাবা-মা মেয়েটাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, ভবিষ্যতে মেয়েটাকে পতিতালয়ে যেতে হবে। আমাদের এখানে যারা বাল্যবিবাহ আইন নিয়ে কথা বলছেন, তারা কি এই বাস্তবতাটা চিন্তা করেন? তারা বাস্তবতা চিন্তা করেন না বলে এ কথা বলেন। ‌’

বাল্যবিবাহন নিরোধ আইনের সমালোচনাকারীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা দুইটা এনজিও করে পয়সা কামায়। আমি যতক্ষণ সরকারে আছি আমি মনে করি, এটা আমার দায়িত্ব। সমাজে সেই সন্তানটাকে জায়গা করে দেওয়া। বিশেষ বিধানটা আমি রেখেছি। এটা অত্যন্ত বাস্তবসম্মত চিন্তা, যেটা সম্পর্কে এনাদের কোনো ধারণা নেই। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৬
এসকে/এসএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।